প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৩১ মে ২০২০, রবিবার
করোনাভাইরাস নিয়ে দ্বন্দ্বে এর আগেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এর অর্থ সাহায্য বন্ধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এবার আরো এক ধাপ এগিয়ে গতকাল শুক্রবার সংস্থাটির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত ২৯ মে, শুক্রবার হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন ঘোষণা দেন। সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘জরুরিভাবে নিজেদের সংস্কারে তারা (ডব্লিউএইচও) আমাদের অনুরোধ রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা আজ থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ইতি টানছি। সেখানে করা অর্থায়নের টাকা ফেরৎ এনে বিশ্বের যেসব জায়গায় মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নয়নের দরকার সেখানে খরচ করা হবে।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণার সমালোচনা করেছে দ্যা আমেরিকান মেডিক্যাল এসোসিয়েশন। সংক্রামক রোগের চিকিৎসক, শিশু বিশেষজ্ঞ এবং সাধারণ চিকিৎসকের প্রতিনিধিত্বকারী একটি দল ট্রাম্পের এই পদত্যাগের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, এটি করোনাভাইরাস মহামারীর লড়াইকে আরও কঠিন করে তুলবে।
এটি শিশুদের জীবনও বিপন্ন করতে পারে, বলেছেন আমেরিকান একাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্সের সিইও মার্ক ডেল মন্টি। এ সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সঙ্কটের সময় বিশ্বের শিশুদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি বহন করবে এবং এ সিদ্ধান্ত পোলিও সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং ম্যালেরিয়াজনিত শিশুদের মৃত্যু এবং জীবন রক্ষাকারী টিকা দেওয়ার প্রচারণা কার্যক্রমকে আরও বিলম্ব করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ডব্লিউএইচওর কাছ থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করা কেবলমাত্র কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়ার ক্ষতিসাধন করে না এবং যুক্তরাষ্ট্র এজেন্সিটিকে অর্থবহ সংস্কার করতে বাধা দেয় না; বরং শিশুদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুঁকিকেও প্রভাবিত করে। আমেরিকান একাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স; মার্কিন প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এর অবস্থানের বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করতে এবং বিশ্বব্যাপী শিশুদের স্বাস্থ্যের প্রচারের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-এর সাথে কাজ চালিয়ে যেতে।
ট্রাম্পের পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটিও। কমিটির চেয়ারম্যান সিনেটের লামার আলেক্সান্ডার বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভুলগুলো অবশ্যই খতিয়ে দেখা উচিৎ। তবে সে সময় এখন না। বিশ্বজুড়ে বিদ্যমান স্বাস্থ্য সংকট প্রশমিত হওয়ার পর।
আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড। প্যাট্রিস হ্যারিস বলেছেন, শুক্রবারের সিদ্ধান্ত কোন যৌক্তিক উদ্দেশ্য বহন করে না। হ্যারিস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই নির্বোধ কর্মের জন্য বিপদজনক সময়ের অনেকাংশই ক্ষতিসাধন করবে, বিশেষত যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিন বিকাশের জন্য ও ড্রাগের পরীক্ষাগুলি মহামারী মোকাবেলায় নেতৃত্ব দিচ্ছে।’
ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন-এর প্রাক্তন প্রধান ডাঃ টমাস ফ্রাইডেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভাইটাল স্ট্রাটেজির জারি করা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তৈরিতে সহায়তা করেছি। আমরা এরই অংশ। এটি বিশ্বের একটি অংশ, এবং ডব্লিউএইচওর প্রতি আমাদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া আমাদের এবং বিশ্বকে কম সুরক্ষিত করে তুলেছে।’ এখন, চীন এবং বিশ্বের প্রতিটি দেশের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-তে ভেটো থাকবে, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকবে না। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আরও দুর্বল করে তুলবে, ফ্রাইডেন বলেন।
‘এই মহামারীটি প্রমাণ করেছে যে জাতীয় সীমানা বা রাজনৈতিক অবস্থানগুলিই কোনও সংক্রামক রোগের বিস্তার থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে না,’ বলেন আমেরিকার সংক্রামক ব্যাধি সোসাইটির (আইডিএসএ) সভাপতি ডাঃ থমাস ফাইল। তিনি বলেন, ‘আমরা একসাথে দাঁড়িয়ে, তথ্য ভাগ করে না নিলে এবং ক্রিয়াকলাপ সমন্বয় না করলে আমরা এই মহামারী বা ভবিষ্যতের কোনও বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে সফল হতে পারব না।’
গত ১৮ই মে ট্রাম্প হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে যদি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখাতে না পারে, তবে সংস্থাটিতে অর্থায়ন স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ‘চীনের পুতুল’ বলেও তিরস্কার করেন তিনি।এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে ডব্লিউএইচওকে অর্থায়ন স্থগিত করার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, সংস্থাটি বেইজিংঘেঁষা ও তাদের হয়ে কথা বলছে। করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ে অব্যবস্থাপনার অভিযোগও তোলেন তিনি।হুমকির ১৩ দিনের মাথায়ই সরাসরি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়ে দিলেন ট্রাম্প।
তথ্যসূত্র: সিএনএন
নিজস্ব প্রতিবেদক/রুহানা অরণি