শীঘ্রই বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে ৫,০০০ ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হবে। ধারণা করা যাচ্ছে যে ২০১৯ সালের নির্বাচনের আগেই এই নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় শেষ করা হবে। বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার+ নন বিসিএস ডাক্তার আছেন। এই গণ বিসিএসের সুযোগে তারা সবাই আবেদন করবেন ধরে নেয়াই যায়। এই ২০ হাজার পরীক্ষার্থীর একটা অংশ কিন্তু প্রিলিতে বাদ যাবার সম্ভাবনা আছে। আর হেলথ দিন বা বোথ ক্যাডার দিন, প্রিলি পাস আপনাকে করতেই হবে।
প্রিলিমিনারির ২০০ নম্বরের সিলেবাস ও বিষয় অনুযায়ী গাইডলাইনঃ
১। বাংলা সাহিত্যঃ ২০ নম্বর
—————————–
ক) প্রাচীন ও মধ্যযুগঃ ৫ নম্বর
খ) আধুনিক যুগঃ ১৫ নম্বর
— প্রাচীন ও মধ্যযুগের সিলেবাস অনেক ছোট। তাই প্রশ্ন রিপিট হবার সম্ভাবনা অনেক। আগের বিসিএস ও পিএসসির পরীক্ষার প্রশ্ন দেখলে নিজেই বুঝে যাবেন কি ধরনের প্রশ্ন বেশি আসে। অনেক কম পরিশ্রম দিয়ে ৫ নম্বর পুরোই পাওয়া যায়। লাল নীল দীপাবলি, কত নদী সরোবর এই দুইটা বইয়ের নাম অনেক শুনে থাকবেন। শুধু নামটাই জেনে রাখুন। পড়ার দরকার নাই। সময় তো পাবেনই না, গল্পের আদলে লেখা বলে কিছুই মনে রাখতে পারবেন না। পরবর্তীতে হাতে সময় থাকলে পড়ে দেখতে পারেন। এই দুই বইয়ের সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাবেন এমপিথ্রি গাইড বইয়ে। লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস নামিয়ে পোস্ট রিলেটেড বিষয় ‘বাংলা’ অংশে প্রাচীন ও মধ্যযুগের সাহিত্য অংশে কিছু টপিকের নাম পাবেন, যেগুলো কোনোভাবেই বাদ দেয়া যাবে না।
— আধুনিক যুগের সময় যেমন ব্যাপক, এর সিলেবাসের ব্যাপ্তিও অনেক। যাদের প্রচুর গল্প, উপন্যাস পড়ার অভ্যাস আছে, তারা এমনিতেই বেশ কিছু তথ্য মাথায় রাখতে পারবেন। কিন্তু যাদের এ অভ্যাস নেই, তাদের জন্য গাইড বইই ভরসা। লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস নামিয়ে পোস্ট রিলেটেড বিষয় ‘বাংলা’ অংশে আধুনিক সাহিত্য অংশে নির্বাচিত কয়েকজন লেখকের নাম পাবেন। এই কয়েকজনের সাহিত্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এমপিথ্রি থেকে পড়বেন সবকিছু। যদি সময় বের করতে পারেন, তাহলে এর বাইরে অন্য লেখকদের সম্পর্কে সৌমিত্র শেখরের ‘সাহিত্য জিজ্ঞাসা’ থেকে পড়তে পারেন বা এমপিথ্রির শেষের দিকে কিছু অখ্যাত/কম খ্যাতিমান লেখকের অল্প কিছু বই এর নাম আছে। সেগুলো দেখতে পারেন।
— বাংলা সাহিত্য থেকে প্রিলিতে ২০ নম্বর থাকলেও লিখিততে থাকবে ৩০ নম্বর। এখন কোনোমতে পড়ে পরে রিটেনের আগে ফাটিয়ে দিবো, এই মনোভাব না রেখে এখনই এমনভাবে পড়বেন যেন কেউ কোনো প্রশ্ন করলে অপশন চাইতে না হয়, একবারে উত্তর দিতে পারবেন। এই কথাটার মূল্য বুঝবেন লিখিত পরীক্ষার আগে।
২। বাংলা ব্যকরণঃ ১৫ নম্বর
—————————-
— ক্লাস ৯-১০ এর ব্যকরণ বই পড়তে কমফোর্ট ফিল করবেন নাকি গাইড থেকে পড়তে? যেটা ভালো লাগে পড়েন। মাহবুবুল আলম বা হায়াৎ মামুদ এর ব্যকরণ বই আছে। এখন আর এসব পড়ার দরকার নাই। হাতে ১ বছর সময় থাকলে পড়তে পারেন। এই অল্প সময়ে পড়তে গেলে মাথা নষ্ট হয়ে যাবে। ৯-১০ এর ব্যকরণ বা গাইডে খুব অল্প পরিসরে যথেষ্ট তথ্য দেয়া আছে। বেশি সময় লাগানো যাবে না। পড়তে গিয়ে দেখবেন স্কুলে পড়া অনেক কিছুই ফিরে আসছে।
— এই অংশ থেকেও লিখিততে প্রশ্ন আসে। তাই প্রস্তুতি যেনো হয় শতভাগ।
৩। ইংরেজি ব্যকরণঃ ২০ নম্বর
——————————
— English for Competitive Examination নামের একটা বই আছে। এটা কঠিন মনে হলে হাই স্কুল ও কলেজে যে গ্রামার বই পড়েছিলাম (Choudhury and Hossain অনেকেরই পড়া) সেটাও পড়তে পারেন। বেসিক স্ট্রং থাকলে অনেক কিছু এমনিতে পারবেন। যাদের বেসিক দুর্বল তাদের বেশ সময় দিতে হবে। গ্রামারের রুলস মুখস্ত করে লাভ নাই। আগের বিসিএস ও নন ক্যাডার পরীক্ষার প্রশ্ন আর বইয়ের উদাহরণগুলো বেশি বেশি চর্চার মাধ্যমে নিয়মগুলো আয়ত্ত করতে হবে।
৪। ইংরেজি সাহিত্যঃ ১৫ নম্বর
——————————
— বাংলা সাহিত্য যতটা আনন্দ নিয়ে পড়তে পারবেন, ইংরেজি সাহিত্য ঠিক তার উলটো। কাঠখোট্টা বই আর লেখকের নাম মনে রাখা আসলেই কঠিন। উইলিয়াম শেক্সপিয়ার, জর্জ বার্নাড শ, জন কীটস, পি বি শেলী, উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ, লর্ড বায়রন, টমাস হার্ডি, টি,এস,এলিয়ট, রবার্ট ব্রাউনিং, মার্লো, হেমিংওয়েসহ প্রখ্যাত ৮-১০ জন লেখকের বইয়ের নাম, কে সাহিত্যের কোন অংশের জনক, বিখ্যাত কিছু কোটেশন, কোন লেখক কোন যুগের আর সাহিত্যে ব্যবহৃত কিছু টার্মের সংজ্ঞা পড়তে পারেন। লিটারেচারের জন্য আমার মনে হয় আলাদা কোনো বড় বই পড়ে সময় নষ্ট করার দরকার নাই। এর ব্যপ্তি এত বেশি যে অনেক সময় লাগবে পড়তে। এর চেয়ে কোনো একটা ডাইজেস্ট থেকে সাহিত্য অংশটা পড়ুন। অল্প পরিসরে অনেক তথ্য পাবেন। সব কমন পাবেন না তা নিশ্চিত, বরং এই সময়টা অন্য টপিকে কাজে লাগান।
৫। বাংলাদেশ বিষয়াবলীঃ ৩০ নম্বর
———————————–
— বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংবিধান থেকে প্রায় ১০টির মত প্রশ্ন পাবেন। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধ থেকে রিটেনে ৫০ নম্বর এবং সংবিধান থেকে রিটেনে অনেক প্রশ্ন পাবেন (৩৫, ৩৬ ও ৩৭ তম বিসিএসে রিটেনে সংবিধান থেকে যথাক্রমে প্রায় ৭০, ৪৫ ও ৫০ নম্বরের প্রশ্ন সংবিধান সম্পর্কিত বিষয় থেকে এসেছিলো)। অর্থাৎ বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংবিধান সম্পর্কে ক্লিয়ার কনসেপ্ট থাকলে প্রিলি ও রিটেনের প্রায় অর্ধেক কাভার হয়ে যাবে। এর বাইরে সাম্প্রতিক জাতীয় পর্যায়ের কোনো অর্জন, স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক, অর্থনৈতিক সমীক্ষার ডাটা, সম্প্রতি ঘোষিত বাজেট, কয়েকটি বিষয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অবস্থান (যেমনঃ নারীর ক্ষমতায়নে বা বাংলা ভাষাভাষী জনসংখ্যার দিকে দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান), মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী কি কি পুরষ্কার কবে পেয়েছেন, রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও সরকার ব্যবস্থা পড়তে সময় কম লাগবে আর এগুলো থেকে প্রশ্ন আসবে আরও প্রায় ১০ নম্বরের। অর্থনৈতিক সমীক্ষা আর বাজেট সম্পর্কিত তথ্য পাবেন কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আর সংবিধান এমপিথ্রি বাংলাদেশ বিষয়ক গাইড আর মোজাম্মেল হকের লেখা উচ্চ মাধ্যমিক পৌরনীতি বই থেকে মিলিয়ে পড়বেন। বিশ্বাস করুন, এই দুই টপিক ভালোভাবে পড়া থাকলে আপনার কনফিডেন্স লেভেল যে কি পরিমাণ হাই থাকবে চিন্তাও করতে পারবেন না। আর প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় কনফিডেন্স নিয়ে পরীক্ষার হলে না গেলে জানা প্রশ্নও ভুল করে আসবেন। এর বাইরে সময় থাকলে সিলেবাস ধরে বাকিগুলো চোখ বুলাতেও পারেন। সময় না থাকলে এই বিষয়গুলোই বারবার দেখতে পারেন। বাকিগুলো সবার জন্যই সমান। প্রিলিতে আপনাকে সব প্রশ্নের উত্তর পারতে হবে তা নয়।
— আরিফ খান সম্পাদিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান ব্যাখ্যাসহ একটা বই আছে। পরবর্তী বিসিএসগুলোর জন্য হাতে রাখতে পারেন। সময় যেহেতু অল্প গাইড থেকেই আপাতত চালিয়ে নিন। অনেকে ভাবতে পারেন যে পুরো সংবিধান মুখস্ত করতে হবে। ব্যাপারটা তা নয়। আগের প্রশ্ন দেখলে আর পড়তে শুরু করলে নিজেই বুঝবেন কি কি পড়তে হবে। তাও না বুঝলে অভিজ্ঞ কারও থেকে দেখিয়ে নিন। মোটা দাগে বলা যায়, সংবিধান প্রণয়ন সম্পর্কিত ইতিহাস, কোন ভাবে কি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, কোন অনুচ্ছেদ কোন ভাগে পড়েছে, ১৫-২০টা অনুচ্ছেদের নম্বর, সাংবিধানিক পদ, সংবিধিবদ্ধ পদ, কোন পদের মেয়াদ কত বছর, তফসিল ও সংশোধনী কতটি, কোন সংশোধনী কত সালে নেয়া হয়েছে আর সেই সংশোধনীর বিষয়বস্তু কি। পড়তে শুরু করুন, মজা পাবেন। সংবিধান আর মুক্তিযুদ্ধ টপিক দুইটি জানার জন্য পড়ুন, দেখবেন ভালো লাগবে।
৬। আন্তর্জাতিকঃ ২০ নম্বর
—————————
— এটা বিষয়ভিত্তিক এমপিথ্রি প্রিলিমিনারি গাইড থেকেও পড়তে পারেন বা ডাইজেস্ট থেকেও পড়তে পারেন। সিলেবাসের ব্যপ্তি অনেক। যতটা সময় দিবেন এর পেছনে সে অনুপাতে রিটার্ন পাবার চান্স কম। কম সময়ে যে বিষয়গুলোর দিকে আলোকপাত করতে পারেনঃ ইউনাইটেড নেশন ও লিগ অব নেশনের গঠনের প্রেক্ষাপট, ১ম ও ২য় বিশযুদ্ধের অক্ষশক্তি ও মিত্রশক্তি, আন্তর্জাতিক চুক্তি, এসডিজি ও এমডিজি, বর্তমানে আলোচিত টপিক বিশ্ব উষ্ণায়ন সম্পর্কিত চুক্তি, আন্তর্জাতিক পুরস্কার, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন। পরীক্ষার আগের ২-৩ মাসের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স থেকে উল্লেখযোগ্য টপিকগুলো দেখতে পারেন।
৭। ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাঃ ১০ নম্বর
—————————————————-
— ক্লাস ৯-১০ এর সামাজিক বিজ্ঞান বই অনেক হেল্পফুল হবে। অনেকগুলো টপিক ও প্রশ্ন বিজ্ঞান ও বাংলাদেশ/আন্তর্জাতিক বিষয়ের সাথে কমন পেতে পারেন।
৮। সাধারণ বিজ্ঞানঃ ১৫ নম্বর
——————————
ক) ভৌত বিজ্ঞানঃ ৫ নম্বর
খ) জীববিজ্ঞানঃ ৫ নম্বর
গ) আধুনিক বিজ্ঞানঃ ৫ নম্বর
— অনেকেই যে ভুলটা করি, পদার্থ ও রসায়ন দিয়ে শুরু করা। এই দুই বিষয়ের সিলেবাস অনেক বড়। অথচ নম্বর মাত্র ৫। জীববিজ্ঞানের বেশ কিছু টপিক আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে কমন পাবেন। আধুনিক ও জীববিজ্ঞান ক্লাস ৯-১০ এর বই ও এমপিথ্রি গাইড থেকে মিলিয়ে পড়বেন। এই দুই ভাগে টপিক কম, কিন্তু কঠিন। সময় নিয়ে পড়লে ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব। আর পদার্থ ও রসায়নে কম সময় দিতে বললাম, কারণ এর অনেক কিছুই আপনি এমনিতেই পারবেন। কম সময় নিয়ে বেসিকটাকে একটু ঝালিয়ে নিবেন জীববিজ্ঞান আর আধুনিক বিজ্ঞান পড়া শেষে। সময় থাকলে ক্লাস ৯-১০ এর সাধারণ বিজ্ঞান আর ভূগোল বই আর সময় না থাকলে এমপিথ্রি গাইড বই যথেষ্ট।
৯। কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তিঃ ১৫ নম্বর
—————————————-
— যারা পরবর্তীত আরও প্রিলি দিবেন, তারা রিটেনের বই থেকে এই অংশটা পড়ে নিন। পরে কাজে দিবে। যারা ৩৮তম দিবেন, তারাও সময় পেলে রিটেনের বই থেকে পড়ুন। না হলে Easy Computer বইটাতো আছেই। যাদের টেকনোলজি নিয়ে আগ্রহ আছে, দেখা যায় তারা বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর এমনিতেই পারেন। তাই চোখ কান খোলা রাখুন। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলুন, পরীক্ষার হলেও এর উপকারিতা পাবেন।
১০। গাণিতিক যুক্তিঃ ১৫ নম্বর
——————————-
— পাটিগণিত এর সিলেবাস অনেক বড়, কিন্তু এর জন্য বরাদ্দ মাত্র ৩ নম্বর। পাটিগণিতের পেছনে বেশি সময় না দেয়াই ভালো। শতকরা, লাভ-ক্ষতি, সুদকষার সূত্রগুলো দেখে রাখুন। প্রিলিতে ছোট ছোট অংক আসে। তাই ভয়ের কিছু নেই।
— বীজগণিত থেকেও ছোট অংকগুলোই আসবে। তবে সমস্যা হবে সম্ভাব্যতা ও বিন্যাস-সমাবেশের অংকে। তাই এগুলো বেশি বেশি চর্চা করুন।
— ৯-১০ এর বই যথেষ্ট। আর হাতে যদি পর্যাপ্ত সময় থাকে বা পরবর্তী বিসিএসের প্রিলির আগে যারা সময় পাবেন, তারা রিটেনের সিলেবাস নামিয়ে একেবারে রিটেনের প্রস্তুতি নিন। প্রিলির পরে রেজাল্টের টেনশনে, প্রিলির রেজাল্টের পর রেজাল্টের খুশিতে ও বিভিন্ন কারণে রিটেনের আগে প্রায় সবাইই তেমন সময় পায় না। তাই হাতে সময় থাকলে প্রিলির প্রিপারেশন হবে রিটেনের সিলাবাসের আলোকে এমপিথ্রি গাইড আর ৯-১০ এর বই থেকে।
— ক্যালকুলেটর ছাড়া ম্যাথ করার অভ্যাস করুন। কিছু সংখ্যার বর্গ, বর্গমূল, ১-১০০ পর্যন্ত জোড়/বিজোড় সংখ্যার যোগফল এধরনের বেশ কিছু প্রশ্ন পাবেন প্রশ্ন ব্যাংকে। এগুলো মুখস্ত রাখুন সময় বাঁচানোর জন্য।
১১। মানসিক দক্ষতাঃ ১৫ নম্বর
——————————-
— খুব বেশি সময় দেবার দরকার নাই। আইকিউ আর কমন সেন্স থাকলে বেশির ভাগ উত্তর প্রিপারেশন ছাড়াই পারবেন। শুধু আগের বিসিএসের প্রিলিমিনারি ও রিটেন পরীক্ষার মানসিক দক্ষতার প্রশ্নগুলো দেখে একটু আইডিয়া নিবেন। কিছু টিপিকাল প্রশ্ন থাকে, যেমন একটি ছবিতে মোট কতটি ত্রিভূজ বা চতুর্ভূজ আছে, এধরনের কিছু প্রশ্ন ভালোভাবে চর্চা করে যাবেন যেনো পরীক্ষার হলে সময় নষ্ট না হয়।
১২। নৈতিকতা ও সুশাসনঃ ১০ নম্বর
————————————
— গাইড থেকে এই অংশ দেখতে পারেন। তবে এই অংশের কোনো প্রশ্নের উত্তর একেবারেই নিশ্চিত না হয়ে উত্তর করা বোকামী, বরং নিশ্চিত হলেও উত্তর না করা সেফ। কেননা, কিছু প্রশ্নের উত্তর দেখে আপনার মনে হবে আপনি শতভাগ নিশ্চিত, কিন্তু উত্তর হিসেবে অন্য অপশনও হতে পারে। যেমন ৩৫তম বিসিএসে এসেছিলো যে বিয়ের দাওয়াতে গিয়ে আপনার শার্টের বোতাম ছিঁড়ে গেলে আপনি কি করবেন? এসব প্রশ্নই দেয়া হয় আপনাকে কনফিউজড করার জন্য। এসব প্রশ্ন এড়িয়ে যাবেন নাকি উত্তর করবেন এটাই আপনার পরীক্ষা। প্রশ্নকর্তা কি উত্তর সেট করেছেন তা যেহেতু জানেন না, তাই যে প্রশ্নের একাধিক উত্তর হতে পারে, উত্তর না করাটাই ভালো হবে।
প্রস্তুতি সম্পর্কিত কিছু টিপসঃ
—————————–
— যেকোনো সাবজেক্ট শুরুরসময় আগের বিসিএস ও নন ক্যাডার পরীক্ষাগুলোর প্রশ্ন দেখলে প্রশ্নের প্যাটার্ন বুঝে যাবেন কিছুটা।
— নম্বর তোলার সহজ উপায় গাণিতিক যুক্তি, মানসিক দক্ষতা, বাংলাদেশের বিভিন্ন ডাটা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার, বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন ও মধ্যযুগ, সাধারণ বিজ্ঞান, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি, বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংবিধান। এগুলোতে কোনোভাবেই খুব বেশি খারাপ করা যাবে না।
— পরে পড়ার জন্য কোনো বিষয়ের কোনো টপিক ফেলে রাখবেন না, তা যত কঠিনই হোক না কেন। পরে হয় ভুলে যাবেন নাহয় সময় পাবেন না।
— প্রিলির সম্ভাব্য ডেট অক্টোবরের মাঝামাঝি। হাতে ৩ মাস সময় আছে ধরে নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করুন।
— কোনোমতে কাট মার্ক্স তোলার টার্গেট নিলে প্রিলিতে বাদ পড়ার সম্ভাবনা বেশি। প্রকৃত লক্ষ্যের চেয়ে একটু উপরে চোখ রাখতে হয়। প্রশ্নের ধরন অনুযায়ী কাটমার্ক নির্ভর করে। ৬০%+ নম্বরকে সেফ ধরা যায়। তবে যারা শুধু হেলথে দিবেন, তাদের এত বেশি না পেলেও চলবে।
— সফল হবার কোনো শর্টকাট ওয়ে নাই। যারা ৬ মাস আগে থেকে পড়ছে তাদের চেয়ে ৩ গুণ বেশি পরিশ্রম করতে হবে যারা এখন শুরু করবেন। শুধু ডাইজেস্ট পড়ে প্রিলি পাস করার দিন নাই। বিষয়ভিত্তিক যাদের আগে থেকেই পড়া আছে তারা ডাইজেস্ট দেখতে পারেন।
— প্রতি বিষয়েই কিছু কনফিউজিং প্রশ্ন থাকে, এগুলো দরকার হলে আলাদাভাবে বিষয়ভিত্তিক নোট রেখে অবসরে চোখ বুলাতে পারেন।
— সবধরনের ট্রেনিং, খ্যাপ আগামী ৩ মাসের জন্য বাদ দিন। ডাক্তার ১০ হাজার নিক বা ২০ হাজার, প্রিলি পাস না করতে পারলে আপনার কপালে একটা সিটও জুটবে না। ডাক্তার ৫০ হাজার নিলেও দেখবেন কেউ না কেউ ঠিকই প্রিলিতে বাদ পড়বে। সো, সময় থাকতে সাবধান।
— -বড় অংকের পেছনে এখন সময় দেবার মত সময় নেই। অংকে দুর্বলতা থাকলে প্রিলি দিয়ে পরদিন থেকেই চর্চা শুরু করুন।
ফর্ম পূরণ সম্পর্কিত কিছু টিপসঃ
——————————–
— আগামী ১০ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে ৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফর্ম পূরণ। ১০ আগস্ট পর্যন্ত ফর্ম পূরণের সময় থাকলেও শেষ সময়ের জন্য অপেক্ষা না করে যত দ্রুত সম্ভব ফর্ম পূরণ করুন।
— যারা প্রথমবারের মত পরীক্ষা দিবে, তারা সময় নিয়ে সকল নির্দেশনা ঠিকমত পড়ে ফর্ম পূরণ করবেন। — একাধিক কম্পিউটার নিয়ে গভীর রাতে একই সাথে ফর্ম পূরণ করলে পাশাপাশি সিট পড়তে পারে এসব চিন্তা মাথায় আনবেন না।
— প্রিলিমিনারি ফর্ম পূরণের সময় দেয়া তথ্য পররবর্তীতে আর সংশোধনের সুযোগ নেই।
— চয়েস লিস্টের অপশন পরিবর্তনেরও সুযোগ নেই। তবে বোথ থেকে জেনারেল দেবার সুযোগ রয়েছে।
— নীলক্ষেতের দোকানে না গিয়ে বাসায় বসে ঠান্ডা মাথায় ফর্ম পূরণ করুন।
বোথ ক্যাডার দিবেন নাকি জেনারেল ক্যাডার?
———————————————-
— জেনারেল দিবেন নাকি বোথ দিবেন তা নিয়ে একেক রকমের মতবাদ আছে। যারা শুধু জেনারেল দিয়ে জেনারেল পেয়েছে তাদের যুক্তি যেমন ফেলনা নয়, আবার যারা বোথ দিয়ে জেনারেল পেয়েছে তাদের যুক্তিও ফেলনা নয়। অনেকে বলেন ,যদি হেলথে একেবারেই জয়েন না করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে জেনারেল দেয়াই ভালো। আর যদি শেষ ভরসা হিসেবে হেলথ রাখতে চান, তাহলে কিছুটা রিস্ক আপনাকে নিতে হবে। কেননা, আপনার ভাইভা পুরোপুরি নেয়া হবে জেনারেলের উপর বেস করে। বোর্ড আপনার হেলথ টপিকে কিছুই জিজ্ঞেস করবে না। জেনারেল টপিকে তাদের সন্তুষ্ট করতে না পারলে ফেল করবেন আর আম, ছালা দুটোই হারাবেন। এর বিপক্ষেও যুক্তি দেয়া সম্ভব, তা হচ্ছে, আম ছালা দুটোই হারানোর রিস্ক না নিতে যদি শুধু জেনারেলেই দেন, তাহলে তো আপনার প্রস্তুতি পুরোদমে জেনারেলই হবে। অর্থাৎ জেনারেল দিন আর বোথ দিন, ভাইভা আপনার জেনারেল হিসেবেই হবে ধরে রাখুন। কারণ ভাইভা বোর্ডে কোনো ডাক্তার থাকবেন না। নন মেডিকেল পার্সন হেলথ রিলেটেড কোনো প্রশ্ন করলে তা উত্তর যদি দিতে না পারেন, তাহলে বিসিএস দেবারই দরকার নাই। এক কথায় বলবো, আপনার প্রস্তুতিই আসল। আর ২৮,২৯ বিসিএসগুলোর সময় ভাইভা বোর্ড অনেক রিজিড থাকতো। ডাক্তারি বাদ দিয়ে কেন বোথ ক্যাডার দিয়েছেন এটা যেমন শুনতে হবে, শুধু জেনারেল দিলেও একই প্রশ্ন শুনতেই হবে। আর ভাইভা বোর্ড এখন অনেক লিবারেল। আগে কালেভদ্রে শোনা যেত ডাক্তাররা জেনারেল লাইনে যাচ্ছে। এখন প্রতি বিসিএসে অনেক যাচ্ছে। পার্থক্যটা এখানেই বুঝা যায়। তাই যদি কনফিডেন্স থাকে বোথ ক্যাডার দিন, অবশ্যই হেলথ সবার শেষে। ভাইভা বোর্ডে কে পড়বে, কি প্রশ্ন ধরবে, এগুলো অনেক দূরের কথা। ভাগ্যেরও ব্যাপার।
ক্যাডার চয়েস সম্পর্কিত কিছু টিপসঃ
————————————
— যারা শুধু হেলথ দিবেন তাদের তো আর কিছু বলার নাই। 🙂
— বোথ ক্যাডার দিলে হেলথ সবার শেষে দিবেন। এর পরে আর কোনো কিছু দিলে তার কোনো মূল্য নাই।
— যে ক্যাডারে হলে জয়েন করবেন শুধু সেই ক্যাডারই অপশনে দিবেন।
— কোনো ক্যাডার সম্পর্কে জানতে এর ওর কাছে কিছু না শুনে সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের কারও থেকে ডিটেইলস জেনে নিন।
— পররাষ্ট্র ক্যাডার চয়েস লিস্টে রাখলে হয় এক নম্বরে রাখুন, নাহয় রাখার দরকার নাই।
— প্রশাসন, পুলিশ ছাড়াও ট্যাক্স, অডিট, ইকনোমিক ক্যাডার সম্পর্কেও জানুন।
— চয়েস লিস্টে আপনার পছন্দের ক্যাডার কত নম্বরে আছে তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ আপনি কত নম্বর পেয়েছেন তা। নিজের পছন্দের লিস্ট সাজিয়ে পুরোপুরি পড়াশুনায় মনোনিবেশ করুন।
— ”সবার জন্য শুভকামনা রইলো। কারও কিছু জানতে হলে কমেন্টে প্রশ্ন করতে পারেন। শত ব্যস্ততার মাঝেও চেষ্টা করবো সময় বের করে তার উত্তর দিতে। মধ্যবিত্ত সমাজে ডাক্তারদের বিসিএসের কোনো বিকল্প নাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ১০ হাজার পরিবারের মুখে হাসি ফুটানোর সম্ভাবনা জাগানোর জন্য। আর আমার মত যারা ভুল করে এই পথে এসে এখন নতুন পথে যাত্রা করতে চাচ্ছেন, এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণের জন্য তাদের প্রতিও রইলো শুভকামনা।”—
লিখেছেন:
ডা. মোঃ সামাউন খালিদ
সসচিম (২০০৫-০৬)
(৩৩তম, ৩৫তম ও ৩৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ)
সহকারী সচিব (৩৫তম
বিসিএস),
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকা।