(১)
থ্রি ইডিয়টস মুভির রেঞ্ছোড় দাস আই মিন আমির খানকে মনে আছে তো? একটা দৃশ্য এমন ছিলো –
ক্লাশ রুমে ক্লাশ চলছে –
স্যার জিজ্ঞেস করলেন, হোয়াট ইজ ম্যাশিন?
আমির খান নানা ভাবে সুন্দর করে স্যারকে বুঝাচ্ছেন। ফ্যান মেশিন,এটা মেশিন,ওটাও মেশিন, ইত্যাদি। সবাই হাসছে।
স্যার তাকে ক্লাশ থেকে বের করে দিলেন। কি যেন ফেলে গেছে রেঞ্ছোড়, আবার ক্লাশে ঢুকলো।
অনর্গল বলে গেলো ম্যাশিন এর ডেফিনেশান। সবাই অবাক।
ক্লাশ রুমে পিন ড্রপ সাইলেন্স।
স্যার এর চোয়াল ঝুলে পড়েছে।
রেঞ্ছোড়ের মেইন কম্পিটিটর সাইলেন্সারের মুখে স্তব্ধতা। ফারহান আর রাজু গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে।
এই কি সেই দুষ্টু ছেলেটা?
এটাই কি চিরচেনা রেঞ্ছোড় দাস?
সিনেমা হল ভর্তি দর্শকের করতালি।
সবাই ইন্সপায়ারড!! আমারাও ইন্সপিয়ারড।
এই না হলে স্টুডেন্ট!!!
লেট মী নো হয়্যার ইজ দ্যা ইনসপিরেশান?
রেঞ্ছোড় দাস এভাবে কনফিডেনটলী মুখস্থ বলতে না পারলে আমরা কেউই হাততালি দিতাম না।
দিতাম কি?
তাহলে কথা কি দাঁড়ালো?
ফাইনালী মুখস্থই কি সব?
রেঞ্ছোড় সাথে চতুর মানে সাইলেন্সার এর পার্থক্য কি? ফারহান, রাজু, রেঞ্ছোড় এক সাথে চলেও একজন ফার্স্ট বাকী দুজন লাস্ট, কিন্তু কেন?
এটাই আজকের মূল কথা। আমরা সবাই আমির খান হতে চাই।
কিন্তু চাল চলনে ফারহান রাজু কিম্বা সাইলেন্সারকে ফলো করলে কি রেঞ্ছোড় হতে পারবো?
এখানে মুখস্থ বলাটাই আসল কথা নয়, আসল কথা হচ্ছে উপস্থাপন। তুমি কত সুন্দর করে তোমার জানা জিনিস বলতে পারছো টিচার সেটাই দেখবেন। দিস ইজ কম্পিটিশান, সো ইউ হ্যাভ টু কনকর ইওর পজিশান। কাজেই এক্সাম দিতে গেলে নিজেকে আগে থেকেই প্রিপেয়ার করতেই হবে।
বাই দ্যা ওয়ে, ভালো প্রেজেন্ট এর খাতিরে বারবার প্র্যাক্টিস করে কিছু জিনিসকে একেবারে মুখস্থ বা অভ্যাসে পরিনত করতেই হবে। এটাই সাকসেস এর অন্যতম শর্ত। তাই সময় দিতে হবে। বুঝে না পড়লে মুখস্থ বলতেই পারবে, দুদিন পর ভুলে যাবে হয়ে যাবে চতুর এর মতো মুখস্থ ভাষন পাঠক। কাজেই পড়তে হবে মজা করে, বুঝে, ভালোবেসে।
এখন কথা বলবো মেডিকেল সায়েন্স নিয়ে।
এই লাইনটা একটু ভিন্নতর। এখানে অংকের নিয়মের মতো গত বাঁধা সূত্র খুব কম। এখানে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই গাইড লাইন, রেফারেন্স কিম্বা প্রি ফিক্সড ফর্মুলা চলে। টেক্সট বইকেই এখানে বেইজ লাইন মানা হয়। কাজেই এখানে মনগড়া কিছু বলে পার পেয়ে আসার সুযোগ ভীষন কম। মেডিকেল সায়েন্সে ক্রিয়েটিভিটির স্থান অনেক হাই লেভেলে। তাই এম বি বি এস এর সময় বেসিক নলেজে গেইন করতে তোমাকে কিন্তু কপিবুক শটই খেলতে হবে। সো ইউ হ্যাভ টু লার্ন দ্যা বুকস অল থ্রু।
প্রশ্ন – রেঞ্ছোর দাস সারাদিন দুষ্টুমী করে কিভাবে পড়াশোনায় ভালো ছিলো? আচ্ছা আমি তো তারমতো জিনিয়াস না আমি কি পারবো?
উত্তর – হ্যাঁ অবশ্যই পারবে। তুমি ও মানুষ সে ও মানুষ।
প্রশ্ন – ভাইয়া, অহেতুক ইন্সপিরেশান দেবেন না প্লিজ, আমি জানি আমি কেমন!
উত্তর – ওকে! ফাইন! রেঞ্ছোড় এর দুষ্টামিটাই দেখলে, ওর ডেডিকেশানটা তো দেখো নাই। এই ছেলে তার ইঞ্জিনিয়ারিং জীবন শুরু করেছে ছোট কাল থেকেই। তার স্বপ্ন, তার ড্রিম ইঞ্জিনিয়ার হওয়া। তার পড়াশোনার প্রতিটা চ্যাপ্টার, প্রতিটা ধাপ তারকাছে স্বপ্নের সিঁড়ি। সে পড়াশোনা করে মন দিয়ে, পাস করার জন্যে নয়। সে জানতে চায়, সে ভালোবাসতে চায় তার পড়াশোনাকে। সে চলার পথে পড়ে, দেখে শেখে, কুড়িয়ে পাওয়া ইন্সট্রুমেন্ট নিয়েও স্বপ্ন দেখে।
তুমি কি মেডিকেলকে ভালোবেসেছো? ভাইরাস এর মত স্যার দেখে তুমি তো অভিমানে পড়াশোনাই ছাড়তে চেয়েছো। জীবন সিনেমার মতো নয় তবুও পড়াশোনার প্রতি আমাদের ভালোবাসা জন্মানোটা খুবই দরকার। আমরা হলাম রাজু আর ফারহান এর মতো এক বস্তা চাপ মাথায় নিয়ে মেডিকেলে ঢোকা বোকার দল। অনেকটা ধাক্কা খেয়ে পানিতে পড়ার মতো। আমরা না পারি ভালোবাসতে না পারি ছাড়তে। আর ভালো করা কয়েকজন আছে যারা চতুর এর মতো সব বিষয়েই মুখ বুজে মুখস্থ করে। রেঞ্ছোড় কি তবে মেডিকেলে নেই?
অবশ্যই আছে। চেয়ে দেখো তোমার কোন বন্ধুই হয়তো প্রফে ফার্স্ট হচ্ছে আর এদিকে ওদিকে দুষ্টুমী করে বেড়াচ্ছে। কি প্রানোচ্ছল তার জীবন। দেখবে তোমার থেকে তার টেনশান একটু কম (এটাও সত্যি যে এক্সাম এর টেনশান যদি তোমাকে না ছোঁয় তুমি ভালো করতে পারবে না। বাট বেশী টেনশান ডেনজারাস)।
হোয়াট ইজ দ্যা সিক্রেট? সে কি না পড়ে ভালো? সে কি সৌভাগ্যবান?
নো। নেভার।
সে যখন পড়ছে মন দিয়ে পড়ছে। তার মাথায় রাজ্যের চাপ নেই। সে ফ্রেশ মুডে ফুল কনসেনট্রেশান দিয়ে কনসেপশান ক্লিয়ার করে পড়ে। ক্লাশে সে মন দিয়ে কথা শোনে। এনি হাউ এক্সামে কি আন্সার করবে তা সে বহুবারই মনে মনে রেভাইস দেয়, রিক্যাপচুলেট করে, সো সে তোমার আমার মত অত সহজেই সব ভুলে যায় না। এক্সামের টেনশান তারও তোমার চেয়ে কম না বাট সে হতাশ হয় না, সে অহেতুক টেনশানে বিধ্বস্থ হয় না, সময় নষ্ট করে না।
কারন হলো আমাদের নিজেকে জাস্টিফাই করার অভ্যাসটা খুবই কম।
ধরো আজ তুমি কার্ডিয়াক সাইকেল পড়লে। কাল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখস্থ বলতে পারবে? একটু বলেই দেখো না, কার্ডিয়াক সাইকেল ইজ দ্যা সাইক্লিক চেইঞ্জ অব হার্ট ফ্রম বীট টু বীট।
বাহ, পারছো তো, এভাবেই গভীরে যাও। বইএর পাতা চোখে ভাসাও। ডেফিনেশান, ফেইজ, ম্যাকানিজম। ওয়াও। বুঝা যাচ্ছে? ছবিটা আঁকো কল্পনায়। কোথায় হার্ট ভালভ বন্ধ হচ্ছে কোথায় খুলছে কোনটা কত সেকেন্ড। কোথায় ফার্স্ট হার্ট সাউন্ড কোথায় সেকেন্ড।
এই তো হয়ে গেলো। এবার তিন দিন পর আবার রিভিউ করো। কিছু তো ভুলে যাবেই। এটাই নিয়ম। এ নিয়ে কান্নার কি আছে? কান্না মানেই সময় নষ্ট। যদি একদিন পরেই বলতে না পারো এক্সামে কিভাবে পারবে? বুঝে নাও সিস্টেমে গন্ডগোল আছে। নিজের ভুল খুঁজতে থাকো। দেখো অমনোযোগী হবার কারনটা বের করো। পড়ার টাইমটা বাড়াও।
এরপর আসো টাইম সেন্স। কেউ বলবে রিভাইস দিতে পারে না। সময় বেশী লাগে। পড়া স্লো।
বাবা রে তুমি যা তুমি তাই। ওমুক ছেলেটা দুই ঘন্টায় রিভাইস দিয়েছে সেটা ভেবে এক্সপ্রেস ট্রেনের মতো রিভাইস দিয়ে তোমার কি লাভ? কাজের কাজ কিচ্ছু কি হবে? নিজের মত যাও। ভালো করে দুইটা টপিক পড়া দশটা টপিক ভাসা ভাসা জানা থেকে অনেক ভালো।
—–সো ভালো হতে গেলে, বারবার অনুশীলন, নিজের উপর আস্থা আর পড়াশোনাটাকে ভালোবাসতে হয়।
আমি জানি অনেকের মনে কষ্ট আছে। অনেকে ভালো পেরেও নানা কারনে পিছিয়ে যাও। এক্সামে নানান কারনে ফেল হয়। প্লিজ লেগে থাকো। পথের কাঁটা সরিয়ে নীরবে হেঁটে যাও। কতকাল কেউ কাঁটা বিছাবে? না হয় একটু পিছিয়েই গেলে?
{ লেখাটি আপনারা ওয়েবের মাধ্যমে শেয়ার করবেন। প্ল্যাটফর্ম কতৃপক্ষ এর অনুমতি ছাড়া লেখাটা কপি করা যাবে না।}
সামনে বৃহস্পতিবার আবার ২য় পর্বের অপেক্ষায় থাকুন আর এই পর্ব নিয়ে আপনাদের মুল্যবান মতামত জানাবেন।
চমৎকার ! শুরুটা হল। আস্তে আস্তে আরো অনেক কিছুই আলোচিত হবে। একটু একটু করে প্রতি সপ্তায় আমরা নিজেদের বদলাতে থাকবো। ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকবো অভীষ্ট লক্ষ্যে।
দুটি কথা :
লেখক নিজে থেকেই সমস্যা গুলো নিয়ে লিখেছেন। যারা স্টুডেন্ট, তারা নিজেদের সমস্যা জানালে হয়ত আরো নির্দিষ্ট করে বলা যাবে। আর যারা শিক্ষক, তারা যদি তাদের অভিজ্ঞতা জানাতেন ভালো হত। তারা কিভাবে এই সমস্যা মোকাবিলায় ছাত্র ছাত্রী দের সহযোগিতা করেছেন তা শেয়ার করলেও ভালো হয়। তাদের ভাবনার জায়গাটা জানা খুব জরুরি। ব্যাক বেঞ্চার দের তারা শুধু বকা ঝকা করেছেন নাকি আরো কিছু ভেবেছেন, করেছেন জানা দরকার। একটা ক্লাসরুম সবার জন্য। কে কবে থেকে একে ফ্রন্ট আর ব্যাক বেঞ্চার বলে ভাগ করে দিলেন খুব জানতে ইচ্ছে করে।
কমেন্টটা আশার আলো হয়েই রইলো। শুরু হলো মাত্র। দিন আসবে অনেক, আসবে নতুন দিন। সবাই বলবে, আর বিভেদ থাকবে না আশা করি।
অসাধারন দাদা
চালিয়ে যান
থ্যাংকস এ লট।
with due respect,ekta prob er solve chai—mon chay MEDICINE niye pori…(jadio anekta samoy periye gece),I mean jakhon theke Medical er subject bujhte suru koreci……bt practically khob wide and tough bt not so profitable financially but,but mon chay khob……kije kori bujhte parcina…….Dr.Masud;CBMC,B,CB10