লিখেছেন ডা.আসিফ উদ্দীন খান
৪ই এপ্রিল, ২০২০ ইং
মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, আপনি প্রাইভেট হাসপাতাল আর ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। কিন্তু কখনো কি খোঁজ নিয়ে দেখেছেন প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে একেকজন ডাক্তার কতটা অসহায় অবস্থায় কাজ করতে বাধ্য হয়! আপনি কি জানেন এই দুর্মূল্যের বাজারে প্রাইভেট হাসপাতালের মেডিকেল অফিসারদের তাদের মেধা আর শ্রম-ঘাম বিক্রি করতে হয় ঘন্টায় মাত্র ৮০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৩০ টাকার বিনিময়ে!
আপনি কি জানেন, খুবই তুচ্ছ কারনে বিনা নোটিশে তার চাকরী চলে যায়!
আপনি কি জানেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বাইরে তাদের কিছুই করার থাকে না!
আপনি কি জানেন বেশীরভাগ হাসপাতালে মেডিকেল অফিসারগণ নিয়োগপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তাই না, দিনমজুরের মত ডিউটি করলে টাকা পায়, না করলে পায় না?
আপনি কি জানেন প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর ৯৮ পারসেন্ট ডাক্তারই এখন পর্যন্ত করোনা সাসপেক্টেড রোগী দেখার মত কোন প্রকার পিপিই পায়নাই? আপনি কি জানেন রোগী নেয়া না নেয়া পুরোটাই কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত, কিন্তু দোষ দেয়া হয় ডাক্তারদের? আপনি কি জানেন আজকে কোন ডাক্তারের ক্ষতি হলে ৯৫% হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাশে দাঁড়ানো দূরের কথা কালকে তার নামটাও ভুলে যাবে?
আমি নিশ্চিত যে আপনি কিছুই জানেন না। আপনি শুধু জানেন প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে ডাক্তাররা ঠিকমত কাজ করছে না। দয়া করে পুরোটা জানুন। পুরোটা বুঝুন। সরকারি বেসরকারি সকল হাসপাতাল আপনার নিয়ন্ত্রণে। আপনি চাইলেই ব্যবস্থা নিতে পারেন, যেন প্রতিটা ডাক্তার পর্যাপ্ত সুরক্ষা পায়। আপনি চাইলেই ব্যবস্থা নিতে পারেন যেন প্রতিটা ডাক্তার তার যোগ্যতা অনুযায়ী পর্যাপ্ত সম্মানী পায়, চাকরির নিরাপত্তা পায়।
আপনি অবিলম্বে ঘোষণা করেন যে, করোনাকালীন সময়ে সরকারি বা বেসরকারি যেকোন ডাক্তার মারা গেলে তার পরিবার ১ কোটি টাকার লাইফ ইন্সুরেন্স পাবে।
দায়িত্ববোধ বিবেক এসবের কথা বলছেন তো? জ্বী, এসব আছে বলেই এখনো বেসরকারি ডাক্তাররা ডিউটিতে যাচ্ছে ঘন্টায় মাত্র ১০০ টাকার বিনিময়ে। কিন্তু মনে রাখবেন, ডাক্তারদেরও জীবন আছে, পরিবার আছে, তাদের ডিউটিতে যাবার সময় কারও চোখ ছলছল করে। তাদের জীবনটা বাকীদের কাছে দামী মনে না হলেও তার পরিবারের বেঁচে থাকার অবলম্বন। তাই সময় থাকতে ডাক্তারদের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা নিন।
ডা. সজীব কুমার ঘোষ
সেশন: ২০১৪-১৫