প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১১ অক্টোবর ২০২০, রবিবার
শ্রাবণী হাসান
শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ, জামালপুর।
বৈশ্বিক মহামারীর প্যাঁচে মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থা:
শিক্ষা সেক্টরের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায় দিয়েই শুরুটা করা যাক-
আমরা সবাই জানি, যে সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের থেকে এবছর বৈশ্বিক মহামারীর কারণে ১ম শ্রেণী থেকে ৯ম শ্রেণী পর্যন্ত অটো প্রোমোশনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে এবং ইতিমধ্যেই এবছরের প্রাথমিক স্কুল সার্টিফিকেট (পিএসসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।
এরপর আসি উচ্চ মাধ্যমিকে পর্যায়ে-
এসএসসি র ফলাফল অনেক আগেই ঘোষণা হয়েছিল। যার ভিত্তিতে অনলাইনে একাদশ শ্রেণীর ভর্তি কার্যক্রম শেষ করে অনলাইনেই তাদের ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে আটকে থাকা এইচএসসি পরীক্ষা নিয়েও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে গেছে, যা আমাদের সকলের জানা।
এরপর যদি বলি ভার্সিটি লেভেলের কথা-
প্রত্যেকটা ভার্সিটিতে পুরোদমে অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে। সাথে সেমিস্টার ফাইনালও অনলাইনেই নেয়া হচ্ছে।
এবার আসি মেডিকেল সেক্টরে-
মেডিক্যাল শিক্ষাব্যবস্থার সবকিছু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে। এখানে দূর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এতটা হযবরল অবস্থায় আছে যে, তারা হয়তো বেমালুম ভুলে গেছে তাদের অধীনে একটা শিক্ষা সেক্টরও রয়েছে। কেননা আমরা হয়ত লক্ষ করে থাকবো যে, লকডাউন শেষ হওয়ার পর নিম্নমাধ্যমিক-মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা শিক্ষা সেক্টরের বিভিন্ন পর্যায় নিয়ে দ্বায়িত্বশীল উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের আলাপ আলোচনা শোনা গেলেও মেডিকেল শিক্ষা সেক্টর নিয়ে সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের থেকে প্রাথমিক পর্যায়েরও কোন আলাপ আলোচনাও শোনা যায়নি।
এমতাবস্থায় ফাইনাল প্রফের সাপ্লিমেন্টারি, যা গত মে মাসে হওয়ার কথা ছিল, তার ব্যাপারে পরীক্ষার্থীরা নিজেরা আন্দোলন বা মানববন্ধনের মাধ্যমে মেডিকেল শিক্ষা সেক্টরের কর্মকর্তাদের কর্ণপাত করিয়েছিলেন, যার ফল হিসেবে তাদের ব্যাপারেও একটা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও শোনা যাচ্ছে।
এখন বাকি রইল ১ম, ২য় ও ৩য় প্রফেশনাল পরীক্ষার্থীদের কথা।
এখানে প্রশ্ন দাড়ায়, তবে কি এদেরও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কর্ণপাত করিয়েই সিদ্ধান্ত নেয়াতে হবে?
কেননা এদেরও প্রফেশনাল এক্সাম মে মাসে হওয়ার কথা ছিল। আমরা একটু খেয়াল করলেই দেখব যে, এদের আইটেম থেকে শুরু করে কার্ড, টার্ম সবকিছুই কমপ্লিট। শুধু প্রফ হয়নি বলে একই বর্ষে আটকে আছে। অলরেডি ছয় মাস হতে চলল সেইম পড়া অনলাইন ক্লাসে পড়ানো হচ্ছে। আমার মনে হয় যার কোন ভিত্তি নেই। এই ছয় মাসে অনেক শিক্ষার্থীই হয়তো বইয়ের চেহারা ভুলে গেছে। যাই হোক সেটা নিয়ে কিছু বলছিনা। কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে এরা অলিখিত সেশনজটে আটকে গেছে। আমরা সকলেই জানি এমবিবিএস কমপ্লিট করা একটা দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। সেখানে সেশনজট একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই যে, এই অলিখিত সেশনজট টা প্রাকৃতিক মহামারীর কারণেই তৈরি, যা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। তবে যেখানে কি না প্রাকৃতিক এই বৈশ্বিক মহামারির এ সময়ে বিশ্বের সকল বিষয়ই বিকল্প উপায়ে ধীরগতিতে হলেও এগিয়ে নেয়া হচ্ছে; সেখানে আইটেম, কার্ড এবং টার্ম কমপ্লিট হওয়ার পরও প্রফের জন্য স্টপ হয়ে থেকে সেশনজটে পড়ে থাকাটাও অপ্রত্যাশিত এবং অযোক্তিকও বটে।
ভুলে গেলে চলবেনা যে, আমরা শুধু সেশনজটেই পড়ছি না, যেসকল শিক্ষার্থী প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে রয়েছে তাদের সেশনজটের পাশাপাশি এভাবে স্টপ হয়ে থাকার কারণে অহেতুক মাসের পর মাস আর্থিক ভাবে বড় ক্ষতির সম্মুখীনও হতে হচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থাপনার দ্বায়িত্বে থাকা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা কি বিকল্প ব্যাবস্থা নিয়ে আদৌ ভাবছে? বা আমরা কি তার কোন ইঙ্গিত পাচ্ছি? যদি তা না ই হয়, এমতাবস্থায় আমরা ভুক্তভোগীদের কি করনীয় হতে পারে? বা তাদেরকে আমাদের নিয়ে ভাবাতেই বা আমরা কি করতে পারি?
আমি জানি, আমাদের প্রফেশনাল এক্সামের রিটেন, ভাইভা, অসপি, প্র্যাক্টিকেল সবকিছু অনলাইনে নেয়ার মত না। তবে আইটেম, কার্ড ও টার্ম বিবেচনায় নিয়ে হলেও হয়ত সংক্ষিপ্ত পরিসরে প্রাইভেট ভার্সিটিগুলোর মত বিকল্পভাবে কিছু একটা করা সম্ভব।
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, দেশের সকল বিষয় যেহেতু ইতিমধ্যেই বিকল্প কিংবা সংক্ষিপ্ত আকারে ধীরগতিতে হলেও এগিয়ে যাচ্ছে তাই আমাদের কর্মকর্তারা চুপ হয়ে থাকলেও আমাদের ভুক্তভোগীদের সম্পূর্ণ বিষয়টি নিয়ে এখনই আমাদের দিক থেকে সিরিয়াস হওয়া বা ভাবা দরকার।