প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২১ এপ্রিল, ২০২০, মঙ্গলবার:
ডা. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান
আজ থেকে ২ মাস আগে হঠাৎ জানতে পারলাম আমাকে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে বদলী করা হয়েছে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত রোগীদের আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে। হাসপাতালে যোগদান করে শুনলাম ১০ টি আইসিইউ বেড এসেছে, ভেন্টিলেটর আসবে। আইসিইউ এর জন্য নির্বাচিত জায়গাটা দেখে হতাশ হলাম এবং আরও বেশি হতাশ হলাম যখন শুনলাম অক্সিজেন সিলিন্ডার এর সাথে সরাসরি সংযোগ দিয়ে ভেন্টিলেটর চালাতে হবে। যেহেতু হাসপাতালের কারোরই আইসিইউ সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিলোনা, প্রথম দিকে বুঝাতে একটু বেগ পেতে হয়েছিলো। আস্তে আস্তে আমার নির্দেশনা অনুযায়ী শুরু হলো আইসিইউ তৈরীর কাজ। হাসপাতালের সকল সহকর্মীদের সহযোগিতা এবং তও্বাবধায়ক স্যারের অনুপ্রেরণায়। উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানিফোল্ড এর মাধ্যমে সেন্ট্রাল অক্সিজেন দিয়ে ভেন্টিলেটর চালানোর কথা বোঝাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিলো। অনেকে এটাও বলেছিলেন আমি আইসিইউ চালু করতে অযথা ই দেরী করছি। আমার সহকর্মীরা সবাই আমার সাথে ছিলেন বলেই হতাশাগুলো পেছনে ফেলে তৈরি হলো বাংলাদেশের প্রথম কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ডিপার্টমেন্ট।
উপরোক্ত কষ্টগুলো ম্লান হয়ে যায়, যখন একজন রোগী ভালো হয়ে বাসায় ফিরে যান তার ভালোবাসার মানুষের কাছে। আজ কিছু মানুষের ফিরে যাবার আনন্দ শেয়ার করতে চাই, আর না পারার কষ্ট নিজের মাঝে রেখে আরও তীব্রভাবে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে নিয়োজিত করতে চাই।
১। নারায়ণগঞ্জ হতে একজন রোগী আমাদের হাসপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি হন শ্বাসকষ্ট নিয়ে। SpO2 (রক্তে অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল) কমতে থাকায় এবং হাইড্রোক্সিক্লোরকুইন ইনডিউস ডায়ারিয়ার কারণে উনাকে আইসিইউতে ভর্তি করি। আইসিইউতে উনি রুম এয়ারে ৭০% ও ১৫ লিটার O2 (অক্সিজেন) তে ৯০% স্যাচুরেশন এবং তীব্র পানিশুন্যতা ও ডিজওরিয়েন্টেড পাই। বেজলাইন রিপোর্ট অনুযায়ী হাইপোনাইট্রিমিয়া এবং মডারেট ARDS (অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম) ছিল। আমরা আমাদের মতো করে গাইড লাইন অনুযায়ী চিকিৎসা চালানো শুরু করলাম। সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত ছিল ভেন্টিলেটর না দেয়া, যা গাইড লাইনের বাইরে গিয়ে করেছি এবং রোগীর পরিবারের অনুমতি নিয়ে। প্রথম ৩ দিন উনাকে নিয়ে বেশ যুদ্ধ করতে হয়েছে। ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি ঘটে। গতকাল উনাকে আবার কেবিনে শিফট করি এবং SpO2 ৯৭% রুম এয়ারে।
২। ঠিক একই রকম ঘটনা ষাটোর্ধ ভদ্রমহিলার। আল্লাহর অশেষ রহমতে ছুটি দিয়ে বাসায় পাঠাতে পেরেছি।
৩। আরেক ভদ্রলোক Hypoxia এবং Restlessness নিয়ে ভর্তি হন। ৮ লিটার O2 এ ৯৩% SpO2 থাকতো। আস্তে আস্তে ৫ লিটার O2 তে নামিয়ে আনা হয়। হঠাৎ ৫ম দিন O2 লাগলো ১৫ লিটার এবং আমরা মনোক্লোনাল এন্টিবডি শুরু করি। বর্তমানে উনি ভালো আছেন।
৪। সম্পূর্ণ ক্রেডিট নেফ্রোলজি টিমের এবং আল আমিন এর। আমাদের হাসপাতালের প্রথম সিকেডি (ক্রনিক কিডনি ডিজিজ) এর পেশেন্ট যিনি ঢাকা মেডিকেল থেকে রেফার হয়ে আমাদের হাসপাতালে এসেছিলেন। তিনি সপ্তাহে ২ সেশন ডায়ালাইসিস পেতেন। ওয়ার্ডে ডায়ালাইসিস ক্যাথেটার খুলে ফেলে এবং পলিথিন এ রেখে দেয় পুনরায় ব্যবহারের জন্য। আমাদের তখনো ডায়ালাইসিস নার্স ও টেকনিশিয়ান ছিলো না। ডা. আমিন ও ডা. ফরহাদ অনেক কষ্ট স্বীকার করে ডায়ালাইসিস ক্যাথেটার করে, ডায়ালাইসিস মেশিনের ইঞ্জিনিয়ার আল আমিনকে সাথে নিয়ে ৪ সেশন ডায়ালাইসিস করে। এরই মধ্যে রোগী কোভিড-১৯ নেগেটিভ হয়ে যায় পর পর দুটি পিসিআর রিপোর্টে। রোগীকে সাপ্তাহিক ২ টি ডায়ালাইসিস করার উপদেশ দিয়ে ছুটি দেয়া হয়।
এই টুকরো টুকরো ঘটনা সামনে এগিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
ধন্যবাদ-
Critical Care Team
Control room
All the staff of KBFGH