বিবিসি-র খবর শুনতে যারা অভ্যস্ত তারা জানবেন, গতকাল তাদের নিউজ হেডলাইনের একটা খবর ছিলো ফ্রান্সের এক হাসপাতালে ২০ বছর আগে ইনকিউবেটর থেকে দু’জন মায়ের দুই শিশু ওলটপালট হয়ে যাবার খবর। আমি তৃতীয় বিশ্বের কোন দেশের কথা বলছি না। বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশগুলোর একটার কথা বলছি যেখানে এমন ঘটনা ঘটেছে। ঘটনা ধরা পড়ার কাহিনী আরো অদ্ভুত। ফর্সা পিতামাতার ঘরে কালো মেয়ে হবার কারণে মেয়ের স্কুলে সবাই এটা নিয়ে সন্দেহজনক হাসাহাসি করতো। মেয়ের মন রাখতে গিয়ে ১০ বছর বয়সে ডি এন এ টেস্ট করা হয়। যেখানে ধরা পড়ে এরা কেউই মেয়ের বাবা মা নন। কোর্টে মামলা হয়। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে জানতে পারে, ডিউটি নার্স সেদিন মদ্যপ অবস্থায় ছিলো। যার কারনে ভুল করে এমন ঘটনা ঘটে।
এই তো গেল বিদেশের কথা। এবার নিজের দেশের কথা বলি। পেট্রোল বোমা, ক্রসফায়ার, সংলাপ, রাজনৈতিক অস্থিরতা এসব গরম খবরের মধ্যে হঠাৎ কি করে যেন আমার মেডিকেল কলেজটা সংবাদপত্রে শিরোনাম হয়ে গেল। সংবাদপত্রের শিরোনাম হতে পারাটা সৌভাগ্যের। তবে এমন শিরোনাম হওয়াটা সম্ভবতঃ সবার জন্যই দুঃস্বপ্নের এবং দুর্ভাগ্যের। শিরোনাম পড়লেই মনে হয় যেন কোন দূর্ধর্ষ আন্তর্জাতিক জঙ্গি বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠির কাহিনী পড়ছি যার প্রধান কাজ ধরে ধরে মানুষ মারা।
২৪ ঘন্টায় ৩২ জনের মৃত্যু নিঃসন্দেহে সাধারণ মানুষের জন্য আতংকের। আমরা ডাক্তাররা যারা মৃত্যু দেখতে অভ্যস্ত তাদের জন্য সংখ্যাটা অবশ্যই বেশি না। দ্বায়িত্বসম্পন্ন সাংবাদিকতা হতো যদি এই ৩২ সংখ্যার সাথে গত এক সপ্তায় কতজন মারা গেছে, গত এক মাসে কতজন মারা গেছে, গত এক বছরে কতজন মারা গেছে, মৃত্যুহার পূর্বে কেমন ছিলো, মৃত্যুহার গত কয়েক মাসের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে নাকি একইরকম আছে , যেসব রোগী মারা গেল তারা কি কি রোগে ভুগছিলো, এসব রোগে মৃত্যুর সম্ভাবনা এবং মৃত্যুহার কেমন, এই বিষয়গুলো সংবাদপত্রের রিপোর্টে থাকলে। হয়তো পরিসংখ্যান নিলে দেখা যাবে গত এক সপ্তায় মারা গেছে ২০ জন। বাকীসব মৃত্যুপথযাত্রী রোগী হঠাৎ করে বিশেষ একটা দিনে মারা গেছে। বিশেষভাবে যে শিশু ওয়ার্ডের খবর প্রচার হয়েছে সেই ওয়ার্ডে আমি নিজে ও একসময় ডিউটি করেছি। দিনে ৫-৬ জন মারা যাওয়াটা খুব সাধারণ ঘটনা ছিলো।
আবার এমন ও হতে পারে এই মৃত্যুর সংখ্যাটা অস্বাভাবিক। হতে পারে এখানে ডাক্তারের গাফিলতি ছিলো, নার্সের গাফিলতি ছিলো, ঔষধের ভুল ছিলো, চিকিৎসায় ভুল ছিলো। সমস্যা কোথায় ছিলো বা আসলেই ছিলো কিনা সেটা কি কেউ তদন্ত করে দেখেছে? তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্ত হোক। দোষী ডাক্তার, নার্স কিংবা যেই হোক তার শাস্তি হোক। কিন্তু কেউ দোষী প্রমানিত হবার আগেই একটা স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের চরিত্রহননের উদ্দেশ্য কি? সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কোন এসএসসি ফেল সাংবাদিকের লেখা কোন অন্ধকার চিপা গলির মধ্যে গজিয়ে উঠা গর্ভপাত কেন্দ্র না যার সম্পর্কে যা ইচ্ছা তা লেখা যায়। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ এবং স্বনামধন্য এই প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কে রিপোর্ট করার আগে কিছু দ্বায়িত্ববোধের পরিচয় দেয়া উচিত ছিলো।
ডাঃ নূর মোহাম্মদ শরিফ অভি