প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, রবিবার
ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসায় টিউমারের অবস্থান বের করার জন্য খুব কার্যকর এবং নিরাপদ একটি পদ্ধতি হল হাইড্রো মার্কার। কিন্তু ২ বছর আগেও বাংলাদেশ হাইড্রো মার্কারের সাথে পরিচিত ছিল না। সার্জারীপূর্বক কেমোথেরাপিতে অনেক সময় টিউমারের আকার ছোট হয়ে যায়। তখন টিউমারের অবস্থান বের না করতে পারায় সম্পূর্ন স্তন কেটে ফেলে দিতে হতো, যা ছিল সম্পূর্ন অপ্রয়োজনীয়। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম হাইড্রো মার্কার প্রযুক্তি নিয়ে এসে বহু রোগীর কষ্ট লাঘব করেন ব্রিটিশ অনকোপ্লাস্টিক ব্রেস্ট সার্জন ডা. এস কে ফরিদ আহম্মেদ। তাঁর তত্ত্বাবধানে ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম নিও-এডজুভেন্ট কেমোথেরাপিতে হাইড্রো মার্কার ব্যবহার করে সফলতা লাভ করেন আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজের সার্জারী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আলী নাফিসা৷ ডা. এস কে ফরিদ আহম্মেদ এবং ডা. আলী নাফিসার দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে হাইড্রো মার্কার সফলভাবে বিস্তার লাভ করতে পেরেছে৷
হাইড্রোজেল মার্কার কী?
ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসায় যখন টিউমারটি অনেক বড় হয়, তখন সাধারণত আগে কেমোথেরাপি দিয়ে টিউমারটি ছোট করার পর সার্জারি করা হয়। একে বলা হয় নিও- এডজুভেন্ট কেমোথেরাপি। কিন্তু দেখা যায় কেমোথেরাপি দেয়ার পর টিউমারটি এত বেশি ছোট হয়ে যায় যে টিউমারটির অবস্থান খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্তন কেটে টিউমারটি সরানো হয়। যেখানে টিউমারটির অবস্থান নির্ণয় করা গেলে পুরো স্তন অপসারণ না করে শুধুমাত্র টিউমারটি অপসারণ করাই যথেষ্ট ছিল। হাইড্রোজেল মার্ক এমন একটি মার্কার যা আল্ট্রাসনোগ্রাফে অথবা ম্যামোগ্রাফে সহজেই সনাক্ত করা যায়। টিউমারটির মাঝখানে হাইড্রো মার্কার বসিয়ে দেয়া হলে কেমোথেরাপির পর টিউমারটি ছোট হয়ে আসলেও খুব সহজে আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে হাইড্রোমার্কের অবস্থান থেকে টিউমারটি খুঁজে পাওয়া যায়। এর ফলে সম্পূর্ন স্তন না কেটে শুধুমাত্র টিউমারটি অপসারণ করা যায়।
ব্রিটিশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের দীর্ঘ দিন নেতৃত্ব দেওয়া আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্রেস্ট সার্জন ডা. এস কে ফরিদ আহম্মদ ব্রেস্ট ক্যান্সার চিকিৎসার আধুনিকতম এই প্রযুক্তি ইংল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন এবং এই প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। তিনি এদেশে ব্রেস্ট ক্যান্সার এর আধুনিক চিকিৎসার পথিকৃত।
পরবর্তীতে ডা. ফরিদ আহম্মদের সহযোগীতায় অনকোপ্লাস্টিক সার্জন ডা. আলী নাফিসা বেসরকারিভাবে হাইড্রোমার্কার বাংলাদেশে আনার ব্যবস্থা করেন এবং এর মাধ্যমে সফলভাবে বহু রোগীর টিউমার অপসারণ করেন। ডা. আলী নাফিসার নিও-এডজুভেন্ট কেমোথেরাপিতে হাইড্রোমার্ক ব্যবহারের একটি ভিডিওঃ https://youtu.be/C3zMQfJvPi8
বর্তমানে সরকারীভাবে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট এ হাইড্রো মার্কারের ব্যবহার চালু হয়েছে, যার ফলে বাংলাদেশের সাধারণ রোগীরা অনেক কম খরচে সুবিধা নিতে পারবেন। বাংলাদেশে এই আধুনিকতম প্রযুক্তির পথ প্রদর্শনের জন্য ডা. ফরিদ আহম্মেদ এবং ডা. আলী নাফিসার অবদান কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না। এভাবেই আরও অনেক উন্নত প্রযুক্তির প্রসারের মাধ্যমে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি হবে এমনটাই প্রত্যাশা।