শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
আগামী বছর থেকে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় আসতে পারে বড় ধরনের পরিবর্তন, সেই সঙ্গে কমতে পারে আসনসংখ্যাও। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে এসব তথ্য।
জানা গেছে, আগামীবছর থেকে এমসিকিউ পরীক্ষার পাশাপাশি নেয়া হতে পারে লিখিত পরীক্ষা বা মৌখিক পরীক্ষা। চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার আগে থাকতে মূল্যায়নের আরো কয়েকটি ধাপ। একইসাথে দক্ষ ও মানবিক চিকিৎসক তৈরি করতেই পরীক্ষা পদ্ধতিতে অভিনব সংস্কার আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর।
মেডিকেলে পড়তে মেধার সাথে সাথে মানবিক বৈশিষ্ট্যও থাকা জরুরি বলে মনে করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। তিনি গণমাধ্যমে বলেন, “এ ধরনের পেশার (চিকিৎসক) জন্য আসলে শুধুমাত্র মেধার পাশাপাশি আরো কতগুলো মানবিক বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার। কিন্তু আমাদের পরীক্ষা পদ্ধতি শুধুমাত্র কতগুলো বিষয়ে তার জ্ঞান বা দক্ষতাকে মাপতে পারে। এটার মাধ্যমে মেধা আলাদা হয় বটে, কিন্তু এই মেধাবীদের মধ্যে থেকেও আবার মানবিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন মানুষগুলোকে আলাদা করার ফিল্টার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে করা হয় এবং সেটাই মূলত আলাদা করে যে মেধাবীদের মধ্যেও কারা আসলে এই ধরনের সেবামূলক পেশার জন্য ভালো, কারা আসলে বিজ্ঞানী হওয়ার জন্য ভালো, কারা আসলে মহাকাশ বিজ্ঞানের জন্য ভালো।”
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই কয়েক ধরনের মূল্যায়ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তবেই পাওয়া যায় মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ। কিন্তু বাংলাদেশে এতদিন তেমন কোন মূল্যায়ন পরীক্ষার প্রচলন ছিল না। দেশের ১০৪টি সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজে প্রায় ১১০০০ এরও অধিক শিক্ষার্থী প্রতিবছর মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পান। এজন্য তাদের ১০০ নাম্বারের এমসিকিউ পরীক্ষা দিতে হয়।
তবে উপযুক্ত প্রার্থী যাচাইয়ে এ পদ্ধতিকে যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় মৌখিক পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত প্রয়োজন বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. নিজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, “আমাকে সে ছেলে-মেয়েদের (মেডিকেলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী) ইন্টারভিউ নেয়া জরুরি। কারণ মেডিকেলের পড়াশোনার প্রতি তার এমপ্যাথি, তার মোটিভেশন আর এ্যাটিটিউড আছে কী-না তা জানার জন্য। একটা ছেলেকে বা একটা মেয়েকে যখন আমি মেডিকেলে পড়ার জন্য সিলেক্ট করে দিলাম, দেখা যাচ্ছে একবছর না যেতেই সে তার ইন্টারেস্ট হারিয়ে ফেলে। তাতে করে একটা বড় অপরচুনিটি চলে যায়। সুতরাং আমাদের যে বর্তমান এডমিশন সিস্টেম সেই এডমিশন সিস্টেমের ডেফিনিটলি পরিবর্তন প্রয়োজন।”
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক নাজমুল হোসেন বলেন, “একসময় মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষাটা লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষার অংশ হিসেবে নেয়া হত। মৌখিক পরীক্ষার বিষয়টা বিবেচনায় নাই। কিন্তু কোনভাবে লিখিত (শর্ট কোয়েশ্চন) যুক্ত করা যায় কী-না সে বিষয়টাও আলোচনা হচ্ছে।”
সুবিধা না বাড়িয়েই গত বছর মেডিকেলের আসন বাড়ানো হয়েছিল ১০৩০ টি। আগামী বছর কমতে পারে আসনসংখ্যাও। আর পরীক্ষা নিয়ে কী কী পরিবর্তন আসছে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে আগামী মাসে।
তবে নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা দুইবছর সময় নিতে চায় বলেও জানা গেছে। এর আগে গত ১৭ জানুয়ারি মেডিকেলে আসন নয়; শিক্ষক বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার বলে মন্তব্য করেছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা।
প্ল্যাটফর্ম/এমইউএএস