শনিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৪
বয়সজনিত রোগের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এমন এক ধরনের প্রোটিন আবিষ্কার করেছেন গবেষকেরা। প্রোটিনটির নাম হলো—হেক্সোকাইনেজ ডোমেন কনটেইনিং ১ (এইচকেডিসি১)। বার্ধক্যের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কোষীয় অঙ্গানুগুলোকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে এ প্রোটিন।
এসব কোষীয় অঙ্গানুগুলো ভেতরে থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করে। শরীরের কোষের বুড়িয়ে যাওয়া থামিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে তারুণ্য ধরে রাখার কৌশল নির্ধারণে এই গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, এমনটাই দাবি এ প্রোটিন আবিষ্কারকদের!
এমন দুটি কোষীয় অঙ্গানু হলো—মাইটোকন্ড্রিয়া এবং লাইসোজম, যা যথাক্রমে কোষে শক্তি উৎপাদন এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সাহায্য করে। এগুলোর ক্ষতি হলে বয়সজনিত বহু রোগ হয়। যার মধ্যে পার্কিনসন, আলঝেইমার, হান্টিংটন ডিজিজ এবং অ্যামাইোট্রফিক লেটারাল স্কলেরোসিস (এএলএস)–এর মতো নিউরোডিজেনেরেটিভ রোগগুলো অন্তর্ভুক্ত। মাইটোকন্ড্রিয়া এবং লাইজোসোম দুটি অঙ্গানুগুলো রক্ষা করতে সাহায্য করবে এইচকেডিসি১। ইউরোনিউজ নামের জাপানের পত্রিকার বরাতে এমনটাই জানা গেছে।
এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং অন্যান্য মেডিকেল স্কুলের বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি ‘প্রোসিডিংনস অব দা ন্যাশনাল অব সায়েন্সেস’ জার্নালে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে।
নারা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক শুহেই নাকামুরা বলেন, “এইচকেডিসি ১ এর কার্যকারিতা পরিবর্তন করা সেলুলার সেনসেশান প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে, যা বয়স বৃদ্ধির এবং বয়সজনিত রোগগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত।”
উল্লেখ্য, সেলুলার সেনেসেন্স হলো—একটি প্রাকৃতিক কোষীয় প্রক্রিয়া, যেখানে কোষগুলো আর বিভাজিত হয় না এবং তাদের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা বন্ধ হয়ে যায়।
গবেষকেরা বলেছেন, সেলুলার সেনসেশান প্রতিরোধের মাধ্যমে মানুষের বয়স বৃদ্ধির প্রক্রিয়া ধীর করা এবং বয়সজনিত রোগগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব হতে পারে।
গবেষণায় এইচকেডিসি১–এর আরও একটি সম্ভাব্য প্রভাবও চিহ্নিত করা হয়েছে, যা ফুসফুস এবং লিভার ক্যানসারের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে।
নাকামুরা আরও বলেন, “অনেক বয়সজনিত রোগের জন্য দায়ী সেলুলার সেনেসেন্স প্রক্রিয়া, যার মধ্যে নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ, হৃদ্রোগ, ফাইব্রোসিস এবং শারীরিক দুর্বলতা রয়েছে। তাই এইচকেডিসি ১ এর কার্যকারিতা এই রোগগুলোকে প্রতিরোধ করতে সহায়ক হতে পারে।”
মাইটোকন্ড্রিয়া কোষের জন্য শক্তি উৎপাদন করে। এগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেগুলো অপসারণ করা উচিত, যাতে কোষটি বাঁচতে পারে। নিউরোডিজেনারেটিভ রোগগুলো তখন ঘটে, যখন ক্ষতিগ্রস্ত মাইটোকন্ড্রিয়া কোষে জমা হতে থাকে।
ক্ষতিগ্রস্ত মাইটোকন্ড্রিয়া অপসারণের প্রক্রিয়া নামকরণ করা হয়েছে ‘মাইটোফ্যাগি’, যা পিংক ১ এবং পারকিন নামক প্রোটিনগুলোর মাধ্যমে ঘটে।
মাইটোকন্ড্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেগুলো কোষ থেকে অপসারণের জন্য এইচকেডিসি১–এর সঙ্গে এবং ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টর ইবি (টিএফইবি) নামক প্রোটিনের মিথস্ক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তারা আরও দেখেছেন যে, এইচকেডিসি ১ কমিয়ে দেওয়া হলে লাইজোসোমের মেরামতের প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
নাকামুরা বলেন, ‘এইচকেডিসি ১ মাইটোকন্ড্রিয়াতে অবস্থান করে এবং এটি লাইজোসোমের মেরামতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। মাইটোকন্ড্রিয়া এবং লাইজোসোম একে অপরের সঙ্গে ভিডিএসি নামক প্রোটিনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে। এই ভিডিএসি প্রোটিনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সাহায্য করে এইচকেডিসি ১। মাইটোকন্ড্রিয়া-লাইসোজোম সংযোগ এবং লাইসোজোম মেরামতের জন্য অপরিহার্য এই যোগাযোগ।’
গবেষকেরা জানান, মাইটোকন্ড্রিয়া এবং লাইজোসোমের রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি নিয়ে আগে তেমনভাবে গবেষণা করা হয়নি। তবে এই নতুন আবিষ্কারটি অঙ্গাণুগুলোর পরস্পর সম্পর্ক এবং তাদের গুরুত্ব সম্পর্কে একটি নতুন দৃষ্টিকোণ উপস্থাপন করেছে।
প্ল্যাটফর্ম/