সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫
ময়মনসিংহের ভালুকায় ডিএমএফের দেয়া চিকিৎসায় এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসক সেজে চিকিৎসা দেয়া ডিএমএফ (স্যাকমো) আশরাফুজ্জামান প্রকৃতপক্ষে কোন চিকিৎসক নয়; সে চিকিৎসকের সহকারী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে যায়, হবিরবাড়ীর সিডস্টোর এলাকায় ডিএমএফ ডিগ্রিধারী মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট (স্যাকমো) আশরাফুজ্জামানের চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করা শিশুর নাম আয়ুশ বড়ুয়া আদর (৯)। আয়ুশ স্থানীয় আনোয়ার খান মডেল স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির মেধাবী ছাত্র ছিল। নিহত আয়ুশ চট্টগ্রামের পটিয়া থানার কেলিশহর, ছত্তর পেটুয়া গ্রামের পীযুষ বড়ুয়ার ছেলে।
নিহতের পিতার ভাষ্য, “০৮ তারিখ (শনিবার) সকাল থেকে আয়ুশের পেট খারাপ ছিলো। দুপুরে অতিরিক্ত বমি হওয়ায় আয়ুশকে নিয়ে সিডস্টোর-বাটাজোর রোডে লতিফ মেডিকেল হলে মো. আশরাফুজ্জামান (আশরাফ ডাক্তার) এর কাছে নিয়ে যাই। আয়ুশকে কোন পরীক্ষা-নিরিক্ষা না করেই সে প্রেসক্রিপশনে এন্টিবায়োটিকসহ একাধিক ইনজেকশন ও স্যালাইনের চিকিৎসা দেয় আশরাফুজ্জামান। স্যালাইন চলা অবস্থায় আয়ুশকে বাসায় পাঠিয়ে দেয়মসে। পরে রাত ৮টার দিকে আয়ুশ মারা যায়।” কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন আয়ুশের বাবা পীযুষ বড়ুয়া। এ ধরনের ভুল চিকিৎসা অন্য কোনো শিশুর বেলা যেন না হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
আশরাফুজ্জামান যে চিকিৎসক নয় এ বিষয়ে জানতেন কী-না জিগ্যেস করলে পীযুষ বড়ুয়া জানান, এলাকায় তাকে সবাই আশরাফ ডাক্তার ডাকে। তাই তিনি ভাবতেও পারেননি একজন মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্টকে দিয়ে ছেলের চিকিৎসা করিয়েছেন!
আনোয়ার খান মডেল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন খান গণমাধ্যমে বলেন, “আশরাফুজ্জামান উপ-সহকারী কমিউনিটি অফিসার (মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট) হয়ে কিভাবে নিজের নামের সঙ্গে ডাক্তার লিখে সব ধরনের রোগী দেখে তা বিভাগীয় তদন্ত করে দেখা উচিত। এটা এক ধরনের প্রতারণা! তার খামখেয়ালীপনার কারণে একটি মেধাবী প্রাণ ঝরে গেলো। যা খুবই দুঃখজনক।”
স্থানীয়দের, আশরাফ কোনো ডাক্তার না, বরং মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট। তারপরেও তিনি নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দেন এবং সকল রোগের চিকিৎসা দেন। প্রায় সময় এরকম ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু ঘটে।
স্থানীয় রাজিব হোসেন নামে একজন বলেন, আশরাফের ভুল চিকিৎসায় শুধু আয়ুশের মৃত্যু হয়নি, পূর্বেও একাধিক ঘটনা ঘটেছে। কথিত আশরাফ ডাক্তারের কঠিন বিচার দাবি করছি।
এ বিষয়ে জানতে মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট (স্যাকমো) মো. আশরাফুজ্জামানকে প্ল্যাটফর্মের পক্ষ থেকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তা রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, আশরাফুজ্জামানের এ ধরনের প্রেসক্রিপশন লেখা বা চিকিৎসা দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা বলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্ল্যাটফর্ম/এমইউএএস