প্ল্যাটফর্ম সাহিত্য সপ্তাহ -০৬
” ভি আই পি টিকেট ”
২০১১ সালের কথা। আমি তখন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সি সি ইউ তে সহকারী রেজিষ্ট্রার হিসাবে কর্মরত। একদিন বিকালে জরুরী প্রয়োজনে হঠাৎ করেই নেত্রকোনা যাবার প্রয়োজন পরে। বাসা থেকে রিক্সা করে শম্ভুগ্ন্জ ব্রীজের ভীড় আর ঠেলাঠেলির মাঝে অনেকটা কষ্ট করেই নেত্রকোনা যাবার গেইট লক (!) বাসের টিকেট কাউন্টার খুঁজে বের করলাম।
টিকেট কাউন্টারের কাছাকাছি যেতেই ত্রিশোর্ধ এক লোক হাসতে হাসতে এগিয়ে এল। বলল “স্যার কই যাবেন?” এ অন্চলের বাসস্ট্যান্ডে যাত্রী টানা টানীর প্রচলন আছে। তাই উত্তর না দিয়ে সোজা নেত্রকোনার টিকেট কাউন্টারে গিয়ে টিকেট চাইলাম। সেই লোকটি এগিয়ে এসে কাউন্টারে থাকা লোকটিকে বলল “স্যারকে জানলার পাশে একটা ভি আই পি টিকেট দেইন।” কাউন্টারে থাকা লোকটি আমাকে সিট চয়েস করতে বলল। আমার চয়েসমত ৯ নাম্বার সিট দিয়ে টিকেট ধরিয়ে দিল। আমি টাকা দিতে গেলে বলল “স্যার টাকা লাগবো না, দেহেন অইঠা ভি আই পি টিকেট।” আমি চেক করে দেখলাম টিকেটটির গায়ে লেখা ভি. আই. পি.!
আমি বিব্রতভাব প্রদর্শন করতেই পাশের লোকটি বলে উঠল, “স্যার আফনেরে আমি চিনি। আপনে আমারে চিনেন নাই। তিন মাস আগে আমার বাবারে নিয়া রাইত একটার সময় চরপাড়া হাসপাতালে (MMCH) গেছিলাম। আফনে রাইত জাইগ্গা আমার বাবার চিকিৎসা করছুন। আফনে আমার বাবারে বালা করছুন। আফনের কতা বাবাও মনে রাখছে। নামাজেও আফনের জন্য দোয়া করে।” আমি অবাক হয়ে জিগ্গাসা করলাম, “আপনার বাবা ভলো আছেন? সমস্যা থাকলে আাবার হাসপাতালে নিয়ে আসবেন।” টিকেটের টাকাটা রাখার অনুরোধ করলে সে বলে “না স্যার, অই কতা কইয়েন না। মনে কষ্ট পামু, স্যার এক কাপ চা আইন্না দেই?” অগত্যা ফ্রি ভি আই পি টিকেটেই নেত্রকোনা যাত্রা শুরু করলাম।
বাসে ওঠার পর বুঝলাম লোকটি ঐ বাসের কনডাক্টর। মনে মনে অনুভব করলাম আমার প্রতি (একজন সাধারণ চিকিৎসকের প্রতি) একজন সাধারণ পরিবহন শ্রমিকের ভালবাসা, যা আমি আমার দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে, সেবার মাধ্যমে নিজের অজান্তেই অর্জন করে ফেলেছি।
লেখকঃডা: মুহাম্মদ কামরুজ্জামান খান
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ।
Mind blowing
চিকিৎসক হিসেবে জীবনের পরম পাওয়া❤
আমার একটা মজার পাওনা একটু শেয়ার করছি।
বাসে আমার পাশের সিটে বসা একজন ফোনে কথা বলতে বলতে একজন ডাক্তারের নাম recommend করছে। যেই নাম সে recommend করছে সে আর কেউ নয়, তার পাশেই বসা। বুঝলাম শুধু নামেই আমাকে চেনে। তবে তার পাশে বসেই নিজের প্রশংসা শুনতে কেমন লাগে চিকিৎসক হিসাবে সেটাও প্রথম অভিজ্ঞতা !
আসলে এই ভালবাসা পাবার যোগ্যতা শুধু ডাক্তারদেরই আছে। তবে এটা অর্জন করতে হয়। কাউকে ভালবাসলে তার প্রতিদান কোন না কোন সময়ে পাওয়া যায়।
চমৎকার। পজিটিভ গল্প।