আবারো একজন চিকিৎসক লাঞ্চিত। এবারে লাঞ্চনার শিকার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ডা. সৌমিত্র সিনহা রায় ।
গতকাল ২২ নভেম্বর ২০১৭, সকালে আনুমানিক ১১ টার দিকে মঠবাড়ীয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরিবিভাগে কর্তব্যরত অবস্থায় কিছু লোকজন এসে ডা. সৌমিত্র কে জানান যে, উপরে সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ ফারুক হাসান ভর্তি আছেন। তিনি তাকে ডাকছেন।
ডা. সৌমিত্র তাদেরকে জানান যে, তিনি যেহেতু জরুরিবিভাগে কর্তব্যরত আছেন আর এখানে অনেক রোগীর ভিড়, এজন্য এই মুহূর্তে এতগুলো রোগীকে ফেলে তিনি যেতে পারছেন না। তবে উপরে অন্য যে ডাক্তার সাহেব তিনি অবশ্যই তাকে দেখে দিবেন । এছাড়াও ডা. সৌমিত্র তাদেরকে বলেন যে, এই রোগীগুলো দেখা শেষ করে উপরে যাবেন।
এই ঘটনার প্রায় আধা ঘণ্টা পর সদর ইউনিয়ন এর চেয়ারম্যান মোঃ ফারুক হাসান নিজেই নিচে নেমে আসেন। সাথে করে তিনি ২০ থেকে ৩০ জন লোক নিয়ে আসেন।
নিচে এসেই তিনি ডা. সৌমিত্রকে তুই তোকারি ব্যবহার ও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। বলেন “তোরে এতোবার উপরে আমাকে দেখতে যেতে বলছি,তুই গেলি না কেন?.শুয়ারের বাচ্চা,কুত্তার বাচ্চা।তোরে মাইরা ফালামু, ।তোর এত বড় সাহস! তুই কেমনে এখানে চাকরি করোস,আমি দেইখা লমু।”
এসব হুমকি দেওয়ার এক পর্যায়ে সে তার পায়ের জুতা খুলে ডা. সৌমিত্রর দিক তেড়ে আসে তাকে মারার জন্য। আশেপাশে অবস্থানরত ভর্তি হতে আসা রোগীরা ঘটনার প্রতিবাদ করে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
ডা. সৌমিত্রর সাথে যোগাযোগ করেলে তিনি বলেন, “মোঃ ফারুক হাসান তার আগের দিন ২১ তারিখে রাত ৯:৩০ এর দিকে আমাকে ফোন দিয়ে আমার পরামর্শমতই ভর্তি হন। পরের দিন সেই আমার সাথেই এই ব্যবহার করেন। তিনি আমাদের এই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির একজন সদস্যও এবং হাসপাতালের ডাক্তারের তীব্র সংকটের ব্যাপারে অবগত।”
উল্লেখ্য, মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩২ জন চিকিৎসকের স্থলে মাত্র ৪ জন মেডিকেল অফিসার গত ১ বছর ধরে হাসপাতালে দিন-রাত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তারপরও একজন জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে একজন সরকারী কর্মকর্তা হয়েও এরকম অশৌজন্যমূলক আচরন এবং পেশীশক্তির হুমকিতে তিনি এই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এবং নিজের নিরাপত্তা নিয়েও তিনি শংকিত।
আজ ২৩ নভেম্বর, ডা. সৌমিত্র’র উপর হামলার প্রতিবাদে মঠবাড়িয়া এলাকায় অবস্থানরত চিকিৎসকগণ এবং ডা. সৌমিত্রের বন্ধুমহল প্রতিবাদি মানববন্ধন এর আয়োজন করেন।
মানবন্ধনে অবস্থানরত খালিদ সাব্বির নামক একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বলেন ” ছাপ্পান্ন হাজার নয়শত সাতাত্তর বর্গমাইল জুড়ে দেশের কাজে নিয়জিত প্রজাতন্ত্রের সেবকরা নিয়ম মাফিক স্থানীয় অপরাজনীতির শিকার হবেন, পেশীবহুলদের পেশীশক্তি প্রদর্শনের উৎকৃষ্ট লক্ষ্যব্যক্তি হবেন, নিয়মিত বিরতিতে অপমানিত হবেন কর্মস্থলে অকর্মাদের দাপটে কোনঠাসা হয়ে থাকবেন – এটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে যেন!”
এই মানববন্ধনের মাধ্যমে তারা যথাযথ কর্তৃপক্ষ এর কাছে এই অপ্রত্যাশিত ঘটনার বিচারের দাবি জানান।
তথ্যঃ ডা. প্রেমাংশু বিশ্বাস
এইসব ফারুক হাসানদের যোগ্য বিচার হওয়া উচিৎ।