প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৭ আগস্ট ২০২০, বৃহস্পতিবার
ডা. মোঃ জোবায়ের মিয়া
সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান (মনোরোগ বিভাগ),
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর
আমাদের সমাজে মানসিক রোগের কারণ নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। আমরা যদি সহজ ভাবে বলি, মানসিক রোগের সঠিক কারণ এখনো পুরোপুরিভাবে জানা যায়নি। গবেষকগণ বলেন, তিনটি বিষয় মানসিক রোগের সাথে সরাসরি জড়িত।
- বংশগত
- মস্তিষ্কের রাসায়নিক পরিবর্তন
- পরিবেশ এবং সামাজিক প্রভাব
ব্রেইন ইমাজিং এবং টমোগ্রাফি পরীক্ষা করে রাসায়নিক পরিবর্তনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর উপর ভিত্তি করেই মানসিক রোগের মেডিসিন প্রয়োগ করা হয়। ১৯৫০ সালে প্রথম প্রজন্মের মেডিসিন আবিস্কার মানসিক রোগ চিকিৎসায় মাইল ফলক হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্ত পুরানো মেডিসিনগুলির পার্শপ্রতিক্রিয়া বেশি কষ্টদায়ক হওয়ায় ১৯৯০ সালের দিকে দ্বিতীয় প্রজন্মের মেডিসিনের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। রোগীরাও স্বাভাবিক জীবন যাপনে সাবলীলতা ফিরে পাচ্ছে।
অতি সাম্প্রতিক সময়ে জিন থেরাপি বিবেচনা করা হচ্ছে। বংশগতির বাহন হলো এই জিন। যাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে অনেক সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে।
মেডিসিন এর পাশাপাশি সাইকোলজিক্যাল ট্রিটমেন্ট, যেমন- কাউন্সেলিং, সাইকোথেরাপি, বিহেভিয়ার থেরাপি নিলে রোগের জটিলতা কমে আসে। সেই সাথে বিভিন্ন ধরনের রিলাক্সেশন থেরাপি, যেমনঃ ব্রেথিং এক্সারসাইজ, প্রগ্রেসিভ মাসকুলার রিলাক্সেশন, ইয়োগা, মেডিটেশন, নিয়মিত এক্সারসাইজ, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ রোগীদের অনেকাংশে সুস্থ রাখে।
শুধুমাত্র আমাদের বাংলাদেশেই না অনেক উন্নত দেশেও মানসিক রোগীরা অবহেলিত। এই রোগের কারণ হিসেবে বলা হয় জ্বিন, ভূত, ডাইনীর আছর, যাদুটোনা, পাপের ফল, আর কত অদ্ভুত সব কেচ্ছা কাহিনী। এতে করে রোগীর ভোগান্তি বাড়ে আর রোগটিও জটিলতর হয়ে ওঠে। অবশেষে রোগীর স্বজনেরাও হতাশায় ভুগতে থাকে। দিশেহারা, সর্বশান্ত হয়ে চিকিৎসকের কাছে আসেন।
তবে আশার কথা এখন মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে। মন খারাপ হলেও কাউন্সেলিং-এর জন্যে প্রফেশনালদের কাছে আসতে শুরু করেছে। আমি মনে করি, যদি আমরা আর একটু নিজেদের প্রতি সচেতন হই, পরিবারের প্রতি নজর দেই আর শিশুদেরকে নিরাপদ, নিয়মতান্ত্রিক, স্নেহময়, স্বাবলম্বী, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ দিতে পারি, তাহলেই মানসিক রোগ অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব।