ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় গত ১৮ এপ্রিল শুক্রবার ভুল চিকিৎসায় স্বাধীন (১) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে ক্ষুব্ধ লোকজনের ভয়ে চিকিৎসক মো. রুহুল আমিন পালিয়ে যান। তাঁকে না পেয়ে লোকজন তাঁর ওষুধের দোকানের সাইনবোর্ড ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।
সরেজমিনে এলাকার অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার বেলতৈল গ্রামের জাকির হোসেন ও আছমা খাতুন তাঁদের ছেলে স্বাধীনকে নিয়ে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাচ্ছিলেন। তাঁরা নান্দাইলের দেওয়ানগঞ্জ বাজারে পৌঁছামাত্র ‘দেওয়ানগঞ্জ মেডিকেল সার্ভিস সেন্টার’-এর মালিক মো. রুহুল আমিন শিশুটির অবস্থা খারাপ বলে তাঁদের ওই সেন্টারে ডেকে নেন। পরে তিনি চিকিৎসা শুরু করেন।
আছমা বলেন, ‘আমার ছেলের লিভার এখনই ফেটে যেতে পারে ভয় দেখিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন রুহুল। এ সময় রুহুল একাধিক তরল সিরাপ ও বড়ি গুঁড়ো করে তাঁর ছেলেকে খাওয়ান। অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় একাধিকবার ইনজেকশন দেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর আমার ছেলের পাতলা পায়খানা ও খিঁচুনি দেখা দেয়। এভাবে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চিকিৎসা চালানো হয়। রাইত তিনডার সময় বুজতাম পারি আমার বুকের ধন আর নাই। এ সময় আমি কান্না শুরু করলে রুহুল ডাক্তার আমাকে ধমকানো শুরু করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার ভোরে আমাকে ও আমার মৃত শিশুটিকে নিয়ে রুহুল গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। পরে কমপ্লেক্সের বারান্দায় আমাদের রেখে রুহুল পালিয়ে যান। পরে আমি সন্তানের লাশ কোলে নিয়ে দেওয়ানগঞ্জ মেডিকেল সার্ভিস সেন্টারে আসি। এ সময় সেন্টারটি তালাবদ্ধ দেখতে পাই।’
দেওয়ানগঞ্জ বাজারের লোকজন জানান, ওই শিশুর মায়ের কান্না শুনে উত্তেজিত হয়ে তাঁরা চিকিৎসকের পদবি-সংবলিত সাইনবোর্ডটি ভেঙে সেন্টারের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা চালান। এ সময় ক্ষুব্ধ লোকজন সার্ভিস সেন্টারটিতে তালা লাগিয়ে চাবি পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে রুহুলকে ভণ্ড চিকিৎসক হিসেবে অভিযুক্ত করে তাঁর বিচার দাবি করেন।
রুহুল আমিন তাঁর সাইনবোর্ডে লিখেছেন, তিনি মেডিসিনে ডিপ্লোমাধারী। মা, শিশু, চর্ম ও যৌনরোগ অভিজ্ঞ। তবে নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. তাজুল ইসলাম খান জানান, মেডিসিনে ডিপ্লোমা নামে চিকিৎসাশাস্ত্রে কোনো ডিগ্রি নেই। এসব ভুয়া। এ বিষয়ে কথা বলতে রুহুল আমিনের মুঠোফোনে ফোন করলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোনটি কেটে দেন।
নান্দাইল মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সানোয়ার হোসেন জানান, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।