তথ্য ঃ ডাঃ মারুফুর রহমান অপু
আজ উল্লেখিত হাসপাতালে জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত অবস্থায় ছিলেন ডা: Arifur Rahman Rana. ২৪ দিন বয়সী একটি শিশু সায়ানোজড (অক্সিজেনের অভাবজনিত শরীরের রঙ পরিবর্তন) অবস্থায় এলে বাচ্চাটিকে অক্সিজেন লাগিয়ে দ্রুত এক্সরে করার নির্দেশ দেন তিনি। এর কিছু সময় পরেই আরেকজন লোক তার মেয়েকে নিয়ে দেখাতে আসেন। এ অবস্থায় পূর্বোক্ত বাচ্চাটির বাবা এক্সরে ফিল্ম নিয়ে এলে ডা: রানা বাচ্চাটির এক্সরে দেখতে শুরু করেন। এ পর্যায়ে মেয়েকে নিয়েআসা লোকটি ক্ষেপে গিয়ে চিকিৎসককে বলেন তার মেয়েকে না দেখে অন্য রোগী কেন দেখা হচ্ছে। ডা: রানা তাকে বোঝানোর চেস্টা করেন উনি আপনার আগে এসেছেন তাছাড়া উনার বাচ্চাটা বেশি খারাপ, উনাকে দেখে আপনাকে দেখবো। এ পর্যায়ে লোকটি ডাক্তারকে কথা কম বলতে নির্দেশ করে বলে, “৫০ ট্যাকা দিয়া টিকেট কাটসি, আমার রোগী এক্ষন দেখতে হইবো”, ডা: রানা তখন ইমার্জেন্সী টিকেট ফি ৫০ টাকা সবার জন্যেই সেটা বোঝার চেস্টা করলে আলোচ্য ব্যাক্তি আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে পাশে দাঁড়ানো অসুস্থ বাচ্চাটির (যার এক্সরে দেখা হচ্ছিলো) বাবা মাকে বাচ্চা সহ বেরিয়ে যেতে বলে এবং ডা: রানাকে আর কোন রোগী না দেখে শুধু তার মেয়েকে তখনই দেখার নির্দেশ দেয়।
এ পর্যায়ে ডা: রানা আলোচ্য ব্যাক্তিকে গুন্ডামি করছেন কেন এ কথা বলে বাইরে যেতে বললে সে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে, “গুন্ডামির দেখছস কি” বলে ডাক্তারের টেবিলে উঠে কলার চেপে ধরে। এ অবস্থায় ডা: রানার সাথে হামলাকারীর ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ডাক্তার গুরুতর আহত হন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে তার ডান হাতের ফিফথ মেটাকার্পাল বোন এর ফ্র্যাকচার ধরা পড়ে যা তাতক্ষনিক চিকিৎসায় ৮০ভাগ রিডাকশন করা গেলেও সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে বলে জানানো হয়। ওদিকে ইমার্জেন্সী বিভাগী উপস্থিত অন্যান্য রোগী এবং তাদের লোকজন ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করে হামলাকারীকে আটক করে। এর আগে হাতাহাতি শেষে আহত চিকিতসক হামলাকারীর মেয়েকে চিকিতসার জন্য ইনডোরে নিয়ে যেতে বললে, “আমার মাইয়ারে কোথাও নিবি না” বলে নিজেই নিজের মেয়ের গলা চেপে ধরলে উপস্থিত লোকজন তাকে নিবৃত্ত করে।
ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হলে হামলাকারী অভিযোগ করে, রোগী দেখতে অনুরোধ করায় ডাক্তার তাকে, তার মেয়েকে মেরেছে এবং মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভেংগে ফেলেছে। প্রত্যক্ষদর্শী সবাই এ অভিযোগ অস্বীকার করলে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কে ঘটনাটি জানানো হলে তারা এখন পর্যন্ত কোন আইনী ব্যাবস্থার আয়োজন করেন নি বা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেনি।
পুলিশ জানিয়েছে সকাল পর্যন্ত কোন মামলা না হলে আসামীকে পুলিশ ছেড়ে দেবে। অন্যদিকে জানা যায় মামলা হতে পারে এই ভয়ে হামলাকারী নিজেকে আহত দেখিয়ে অন্য একটি হাসপাতালে ভর্তি হবার চেস্টা করছে। হাসপাতালের অন্যান্য চিকিতসক ঘটনাটি জানতে পেরে কাল সকালে জরুরী মিটিং এর আয়োজন করেছেন এবং এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ না নিলে কর্মসূচী ঘোষনা করা হবে জানিয়েছেন।
ঘটনাটি অন্যদিকে ঘোরাতে এবং লঘু করতে ইতিমধ্যে কাহিনী পালটে ফেলা হচ্ছে, বলা হচ্ছে ডাক্তারের পায়ে পাড়া দেয়ায় ডাক্তার মেরেছেন হামলাকারীকে, বলা হচ্ছে হাসপাতাল ব্যাবস্থা নেবে না আহত ডাক্তার যেন নিজেই মামলা করেন।
ডাক্তার রানার জবানবন্দী থেকে জানা যায় অভিযুক্তকে বোঝানোর চেস্টার এক পর্যায়ে সে বলে ওঠে, ” ডাক্তার মানুষ এত কথা কছ কেন, নরম সরম থাকবি, যাই কমু শুনবি”।