প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৩ অক্টোবর ২০২০, শুক্রবার
মানব শরীরের সম্ভাব্য নতুন একটি গ্রন্থির এক অভাবনীয় আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা মানুষের নাক এবং মুখের তালুর উপরে মাথার কেন্দ্রের কাছে লুকায়িত গুপ্ত লালাগ্রন্থির সেট খুঁজে পেয়েছেন, যা যুগ যুগ থেকে বিজ্ঞানীদের দৃষ্টির অগোচরে রয়ে গিয়েছিল।
নেদারল্যান্ডসে বিজ্ঞানীদের একটি দল প্রস্টেট ক্যান্সারের বিষয়ে গবেষণা করছিলেন। তারা প্রস্টেট ক্যান্সার রোগীদের এক নতুন উদ্ভাবিত, PSMA PET/CT স্ক্যান বা ইমেজিং প্রযুক্তি- এর মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা দেয়ার সময় যখন রেডিওএক্টিভ গ্লুকোজ ইনজেকশন দিচ্ছিলেন, তখন এক ধরনের টিউমার দেখতে পান। এক্ষেত্রে যা দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল তা যেন ভিন্ন কিছুই ছিল, যার অবস্থান ছিল ন্যাসোফ্যারিংস- এর কাছে।
বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়েবসাইট লাইভসায়েন্সের এক প্রতিবেদন থেকে তেমনটাই জানা গিয়েছে। ‘নেদারল্যান্ডস ক্যানসার ইনস্টিটিউটে’র ওই গবেষকরা গলার উপরের দিকে হাজার হাজার আণুবীক্ষণিক লালা গ্রন্থি (Salivary glands) দেখতে পেয়েছেন। গ্রন্থিগুলির তাঁরা নামকরণ করেছেন “টিউবারিয়াল লালা গ্রন্থি”।
জার্নাল ‘রেডিওথেরাপি অ্যান্ড অঙ্কোলজি’-তে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে গবেষকরা জানিয়েছেন, “অন্তত একশো জন রোগীর শরীরে পরীক্ষা চালিয়ে তবেই তাঁরা ওই লালা গ্রন্থির উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন, এক্ষেত্রে এই গ্রন্থির অদ্ভুত বাইল্যাটারাল/ দ্বিপার্শ্বিক গঠন, ম্যাক্রোস্কোপ দিয়ে দৃশ্যমান নালি, যা ন্যাসোফ্যারিংসের দেওয়ালের কাছে উন্মুক্ত হয়। এই গ্রন্থিগুলির আকার প্রায় ১.৫ ইঞ্চি তথা ৩.৯ সেন্টিমিটার। গবেষকরা জানাচ্ছেন, ওই গ্রন্থিগুলি সম্ভবত নাক ও মুখের পিছনের দিকে অবস্থিত গলার উপরের অংশকে সিক্ত ও আর্দ্র করে রাখে।”
এতদিন পর্যন্ত মানব শরীরে তিনটি বড় লালাগ্রন্থির সন্ধান পেয়েছে মানুষ। তার একটি গলার নিচে এবং বাকি দু’টির একটি চোয়ালের নিচে ও অন্যটি চোয়ালের পিছন দিকে অবস্থিত, যারা আমাদের খাদ্য পরিপাকের জন্য প্রয়োজনীয় লালা নিঃসরণ করে। এক বিবৃতিতে ওই ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের রেডিয়েশন ক্যানসার বিশেষজ্ঞ Wouter Vogel, যিনি এই গবেষণার অন্যতম গবেষকও বটে তিনি জানাচ্ছেন, ‘‘আমাদের জানামতে শুধুমাত্র লালাগ্রন্থি অথবা মিউকাস গ্রন্থি যেগুলো ন্যাসোফ্যারিংসের কাছে থাকে সেগুলো মাইক্রোস্কোপিক হয়। আর সম্ভবত হাজার হাজার লালাগ্রন্থি ছড়িয়ে রয়েছে গলা এবং মুখের মিউকোসাল টিস্যুতে, যারা মাইক্রোস্কোপিক। তাহলে ভেবে দেখুন প্রথম এটা আবিষ্কার করার পর আমরা কতটা চমকে গিয়েছিলাম।’’
চিকিৎসকেরা ক্যান্সারের চিকিৎসা করার সময় রেডিওথেরাপি ব্যবহার করেন। সেই সময় তাঁরা প্রধান লালাগ্রন্থিগুলিকে বাঁচিয়ে তা প্রয়োগ করেন, যাতে রোগীদের খেতে, কথা বলতে কোনো সমস্যা না হয়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, যেহেতু ওই আণুবীক্ষণিক লালা গ্রন্থিগুলি সম্পর্কে তাঁরা অবগত ছিলেন না, তাই সেগুলি হয়তো রেডিয়েশনের কবল থেকে বাঁচতে পারতো না। ফলে রোগীর শরীরে আরও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেত। আগামী দিনে বিজ্ঞানীরা এই লালা গ্রন্থিগুলির সম্পর্কে সচেতন থাকলে রেডিয়েশনের সময় রোগীদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমবে এমনটাই আশা করছেন এর আবিষ্কারকরা। গবেষকেরা আশা করছেন এ আবিষ্কার ক্যান্সার চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।