কিন্ডারগার্টেন শব্দটি জার্মান। এর অর্থ শিশুদের বাগান। কিছুটা রুপক অর্থে এই শব্দটির এমন ব্যবহার। শিশুরা বড় হবে শিশুদের ফুলের বাগানে। সে ফুলের মতো বিকশিত হয়ে ফুটবে, সৌরভ ছড়াবে এটা বুঝাতেই এমন শব্দের ব্যবহার।
জার্মান শিশু শিক্ষানুরাগী ফ্রেড্রিখ ফ্রয়েবল সর্ব প্রথম এই শব্দের ব্যবহার করে শিশুদের জন্যে প্রতিষ্ঠা করেন এক বিদ্যালয় যেখানে তারা এসে অত্যন্ত আনন্দঘন, পারিবারিক ও আপন পরিবেশে খেলাধুলা করবে, গানবাজনা করবে, আমোদ ফুর্তিতে মেতে রইবে সেই সাথে একটু আধটু পড়াশুনো ও করবে।
অর্থাৎ পড়াশুনা বিষয়টা হবে খেলাধুলা, গান বাজনা আর ফানের মধ্যে দিয়ে।
মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা চিন্তা করেছিলেন ফ্রেড্রিখ ফ্রয়েবল আজ থেকে প্রায় একশো বছর আগে। একটা শিশুকে যদি পড়াশোনা কে খুব ছোট বেলা থেকে ভীতিকর করে উপস্থাপন করা হয় তবে পরিণত বয়সে তার পরিণতি খুব একটা ভালো হয়না।
মানসিক চাপে শিশুরা পড়াশুনা করলে কি হবে?
তীব্র প্রতিযোগিতা আর মানসিক চাপে শিশুরা পড়াশুনা করলে তার ফল খুব একটা ভালো হয়না। বড় হয়ে তার মধ্যে নানান মানসিক সমস্যা দেখা দেয়ার সভাবনা প্রকট হয়। বড় হয়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট হলো কিনা সেটা বড় বিষয় নয়, বরং বড় হয়ে একজন সুস্থ মন মানসিকতা সম্পন্ন, বিবেক সম্পন্ন মানুষ হলো কিনা সেটাই মুল বিষয়। দেশ বিদেশের অনেক বড় বড় স্মাগলার, খুনি, অসৎ লোকদের বাল্যকাল পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তাদের কেউ কেউ ছেলে বেলায় ঘরে বাইরে তীব্র মানসিক যন্ত্রনায় পরিবেশে বর হয়েছে, যার ফলে শুরু থেকেই তার মনের গহীন কোনে জমে ছিলো প্রতিশোধের তীব্র বাসনা।
কিন্ডারগার্টেন এর বর্তমান অবস্থা
আমাদের কিন্ডারগার্টেন স্কুল গুলোতে এখন কি হচ্ছে? বেশির ভাগ স্কুল গুলো শিশুদের খুব সকালে ঢুলু ঢুলু চোখে পিঠে ব্যাগ ভর্তি বই নিয়ে দৌড়াতে দেখা যায়। এর চেয়ে নির্মম দৃশ্য আর কি হতে পারে! অথচ কথা ছিলো তাদের ব্যাগ ভর্তি খেলনা থাকবে। তারা খেলতে যাবে,গাইতে যাবে আর সেই সাথে যদি খেলা গান আর আনন্দের সাথে যদি কিছু পড়াশুনা বা শেখা হয়, তবে সেটা বোনাস। এ জন্যেই নাম কিন্ডারগার্টেন। স্কুল গুলোতে খেলাধুলোর কোন উপকরণই নেই। তবে সরকারি প্রাথমিক স্কুল গুলোর শিশু শ্রেনী বা তার উপরের ক্লাসে এসেছে দারুন পরিবর্তন। চেস্টা করা হচ্ছে আনন্দ উপকরণে ভরিয়ে তুলতে, আসল কিন্ডারগার্টেন এর চেহারা ফুটিয়ে তুলতে। বেশ কিছু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষুদে ডাক্তার কার্যক্রম পরিদর্শন করতে গিয়ে তাই দেখলাম।
বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন স্কুল গুলোতে কি করা উচিৎ?
কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর পরিচালক দের এখুনি এ ব্যাপারে যত্নশীল হওয়া উচিৎ, কারন মা বাবা তাদের সন্তান কে মানসিক বিকার গ্রস্থ করে তোলার জন্যে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পাঠাচ্ছেন না কিংবা পাঠাচ্ছেন না রাতারাতি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা পাইলট বানাতে। তারা পাঠাচ্ছেন তাদের ফুটফুটে সন্তান খেলাধুলো করবে, গানবাজনা করবে, আনন্দ ফুর্তি করবে আর ফুলের মতো বিকশিত হয়ে ফুটে সৌরভ ছড়াবে। সাথে যদি কিছু পড়াশুনা শিখে তাতেই বেশ।
ডা. মো. সাঈদ এনাম
সাইকিয়াট্রিস্ট
মেম্বার, ইউরোপিয়ান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন
মেম্বার, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন।