সাম্প্রতিকালে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সাধারণ মানুষদের ভেতর বেশ সচেতনতা দেখা যায়। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্য বা মানসিক রোগ নিয়ে ঠিক কত বছর আগে থেকে এই সচেতনতা তা সঠিক ভাবে বলা ভাড়।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে, উইলিয়াম সুইটসার প্রথম “Mental Hygiene” শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন, যা ইতিবাচক মানসিক স্বাস্থ্যের প্রচারের জন্য সমসাময়িক পদ্ধতির পূর্বসূর হিসাবে দেখা যেতে পারে।
আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের চতুর্থ রাষ্ট্রপতি এবং সংগঠনটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আইজাক রে মানসিক স্বাস্থ্যকে আরও সংজ্ঞায়িত করেছেন। তার মতে, “the art of preserving the mind against all incidents and influences calculated to deteriorate its qualities, impair its energies, or derange its movements “
ডোরোথিয়া ডিক্স (১৮০২-১৮৮৭) “Mental Hygiene Movement ” বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
ডিক্স একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন। তিনি মানসিক ব্যাধিগ্রস্থ লোকদের সাহায্য করতেন এবং মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত মানুষদের সামাজিক অবস্থানের সত্য চিত্র সবার সামনে তুলে ধরা চেষ্টা করেন।
তার এই প্রচেষ্টা “Mental Hygiene Movement” হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছিল।
এই আন্দোলনের আগে, মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যাক্তি যথেষ্ট অবহেলিত হত, এমনকি প্রায়শই পর্যাপ্ত পোশাক ছাড়াই শোচনীয় পরিস্থিতিতে অসুস্থ ব্যাক্তিকে ছেড়ে চলে যেত পরিবার পরিজন।
ডিক্সের প্রচেষ্টার ফলে মানসিক রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার প্রতি পরিবার-পরিজন মনোযোগী হয় , যার ফলে মানসিক হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যাবৃদ্ধি পেতে থাকে। কিন্তু মানসিক হাসপাতালগুলোতে বেশি সুযোগ সুবিধা না থাকাতে রোগীরা অবহেলিত হতে থাকে।
এমিল ক্রেপেলিন ১৮৯৬ সালে মানসিক ব্যাধিগুলির “taxonomy” তৈরি করেছিলেন। এতে সময় লেগেছিলো প্রায় ৮০ বছর।
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ক্লিফোর্ড বিয়ার্স ১৯০৮ সালে “মেন্টাল হেল্থ আমেরিকা – ন্যাশনাল কমিটি ফর মেন্টাল হাইজিন” প্রতিষ্ঠা করেন যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মানসিক রোগীদের জন্য উন্মুক্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর “mental hygiene” শব্দটি পরিবর্তন করে “mental health ” শব্দটির প্রয়োগ শুরু হয়। কারণ “Mental health ” কেবল মাত্র মানসিক রোগের চিকিৎসা নিয়ে কথা বলে না, মানসিক রোগসমূহ কিভাবে প্রতিরোধ এবং প্রতিকার করা সম্ভব তা নিয়েও আলোচনা করে।
মেরি জাহোদা ছয়টি প্রধান মৌলিক বিভাগ বর্ণনা করেছেন যা মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তিদের শ্রেণীবদ্ধ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
এর মধ্যে রয়েছে: নিজের সম্পর্কে ধনাত্মক মনোভাব , ব্যক্তিগত বৃদ্ধি, সংহতকরণ, স্বায়ত্তশাসন, বাস্তবতার সত্যতা উপলব্ধি এবং আশেপাশের পরিবেশের প্রতি মনোভাব, যার মধ্যে অভিযোজনযোগ্যতা এবং স্বাস্থ্যকর আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
তারমানে মোটামুটি বলা চলে ২য় বিশ্ব যুদ্ধের পর থেকেই বর্তমান ” Mental Health” এর ধারণার সূচনা এবং প্রতিদিন এই ধারণা উন্নত হচ্ছে৷
ফিচার বিভাগীয় সম্পাদক/ সুমাইয়া নার্গিস