প্ল্যাটফর্ম নিউজ,
৩০ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার, ২০২০
হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে দেওয়া মাস্কের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেন রাজধানীর ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. শহিদ মো. সাদিকুল ইসলাম। প্রশ্ন তোলাটাই কি ভুল হয়েছে তাঁর?
বুধবার (২৯ এপ্রিল) শহিদ মো. সাদিকুল ইসলামকে ওএসডি করে আদেশ জারি করা হয়। তবে তাতে কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি।
এ নিয়ে দেশের গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয় যা দিনভর নানা আলোচনার জন্ম দেয়।
জাতীয় দৈনিক ‘প্রথম আলো’তে উল্লেখ করা হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বা সন্দেহভাজন রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বিশেষ সুরক্ষাসামগ্রী দিচ্ছে সরকার। এর মধ্যে মাস্কও আছে। রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ‘এন–৯৫’ মাস্কের নামে যেসব মাস্ক দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এন-৯৫ মাস্ক লেখা মোড়কে দেওয়া হয়েছিল মুন্সিগঞ্জে তৈরি করা মাস্ক।
‘বিডিনিউজ’ জানায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পিপিই নীতিমালা অনুযায়ী রোগীর নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য এন-৯৫ মাস্ক পরা জরুরি। কিন্তু মার্চের শেষ ভাগে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে যেসব মাস্ক পাঠানো হয়, তার প্যাকেটে ‘এন-৯৫’ লেখা থাকলেও ভেতরে ছিল সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক।
ফলে সেগুলো আসল মাস্ক কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন চিকিৎসকরা; বিষয়টি সে সময় সংবাদ মাধ্যমেও আসে।
হাসপাতালের দুই চিকিৎসক-কর্মকর্তার বরাতে সমকাল জানায়, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এন-৯৫ মাস্ক উৎপাদন করে না। এটি সিএমএসডি কর্তৃপক্ষের অজানা নয়। সিএমএসডি কার্যাদেশ না দিলেও কেন তারা হাসপাতালে সরবরাহকৃত পণ্যসামগ্রীর তালিকায় এন-৯৫ মাস্কের কথা উল্লেখ করল? এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে।
‘সমকাল’ এ আরও উল্লেখ করা হয়, এন-৯৫ মাস্ক কেলেঙ্কারির ঘটনা যথাযথভাবে সামাল দিতে না পেরে মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাদেকুল ইসলামকেও সম্প্রতি ওএসডি করা হয়েছে। এ বিষয়ে ডা. সাদেকুল ইসলাম কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি সমকালকে বলেন, কী কারণে তাঁকে ওএসডি করা হয়েছে, তা কর্তৃপক্ষই বলতে পারবে। তার চাকরির মেয়াদ আছে মাত্র সাত মাস। এ অবস্থায় ওএসডির ঘটনায় ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন তিনি।
‘আমাদের সময়’ এ বলা হয়, এই ব্যাপারে গত ১ এপ্রিল ডা. শহিদ মো. সাদিকুল ইসলাম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে একটি চিঠি দেন। তাতে বলা হয়, হাসপাতালের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ মার্চ কেন্দ্রীয় ঔষধাগার অন্যান্য মালামালের সঙ্গে ৩০০টি এন–৯৫ মাস্ক সরবরাহ করেছে। মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান এই মাস্কের প্রস্তুতকারী। এই মাস্কগুলো প্রকৃতপক্ষে ‘এন–৯৫’ কি না, সে বিষয়ে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী টেলিফোনে হাসপাতালের পরিচালকের কাছে জানতে চেয়েছেন। চিঠিতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় মতামত দেওয়ার অনুরোধ করা হয়।
কয়েকদিন আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক নোটিশে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষকে হাসপাতাল পরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের জন্য আদেশ জারি হয়।
একই সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একথা ছড়িয়ে পড়ে যে মুগদার পরিচালক ডা. সাদেকুল ইসলাম করোনা পজিটিভ, উপপরিচালকও করোনা পজিটিভ, আইসোলেশনে আছেন। তাই অধ্যক্ষকে এই বাড়তি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
ফলে ওএসডির নোটিশের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে হাসপাতালে দায়িত্বে থাকা সব পর্যায়ের চিকিৎসকের মাঝে এক ধরনের ভীতির সঞ্চার হয়।
উল্লেখ্য, এর আগে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের পরিচালক ও খুলনা মেডিকেলের পরিচালককে বদলি করা হয়। তাঁরা উভয়েই পিপিইর মান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন।
একদিকে মানসম্মত পিপিই সংকট, প্রতিদিন প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১৪ লাখ পিপিই সরবরাহের মিথ্যাচার, মান নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বদলি বা ওএসডি ইত্যাদি। অন্যদিকে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
স্বাস্থ্যবিভাগের ডাক্তার, নার্স, ল্যাব টেকনোলজিস্ট ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্ষরিক অর্থেই জান দিয়ে লড়ছেন করোনা ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে।