প্ল্যাটর্ফম নিউজ,
বৃহস্পতিবার, ৩০ই এপ্রিল ২০২০
মাস্ক খোলা আর পরার সময় সর্বোচ্চ সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। সম্ভব হলে হাসপাতালে থাকার পুরোটা সময় মাস্ক পরে থাকতে হবে। অযু করা, ইফতার করা বা খাবার খাওয়ার সময় সাবধানে মাস্কের ফিতার অংশ ধরে খুলতে হবে এবং মাস্কটি কাগজের ব্যাগে বা প্লাস্টিকের পাত্রে রেখে দিতে হবে, এর পর ভালো ভাবে হাত ধুয়ে এবং মুখ ধুয়ে তার পর অযু করতে হবে।
বাথরুম ব্যবহারেও সতর্ক থাকতে হবে, গবেষনায় দেখাগেছে যে সব বাথরুমে বায়ুচলাচল কম সেখানে কোভিডের আরএনএ ঘনত্ব অনেক বেশি। আমাদের মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আর জেলা হাসপাতাল এর বাথরুম গুলোর যে কি অবস্থা তা আমরা সবাই জানি, তবুও যতটুকু সম্ভব সাবধানে ব্যবহার করতে হবে। পারলে খোলা বা বন্ধ ভেন্টিলেশন এর ব্যবস্থা করতে হবে বা ফিউমিগেশন করতে হবে।
গরমের দিনে আর বিশেষ করে এই রোজার মধ্যে সারা দিন এন ৯৫ মাস্ক আর পিপিই পরে থাকে খুবই কষ্টের হয়, তাই এন ৯৫ মাস্ক সারা দিন না পরে শুধু ওপিডি আর ইনডোরে রোগী দেখার সময়ে পরলেই হবে। আর অন্য সময় শুধু সারজিকাল মাস্ক পড়ে থাকলেই হবে এটা ৯০-৯৩% ভাইরাস প্রটেকশন দেয় নতুন অবস্থায়। ডিউটির সময় নিজের কাছে দুটো এন ৯৫ মাস্ক রাখতে হবে, কারণ বারবার পরা ও খোলার কারনে অসাবধানতা বশত ফিতাটি ছিঁড়ে যেতে পারে বা মাস্ক ব্লাড বা ফ্লুইড দিয়ে জীবানুযুক্ত হতে যেতে পারে। আর দামি মাস্কের ফিতা ছিড়ে গেলে ভয় পাবার কিছু নেই, সেটি সিলিকন গান আর সিলিকন আঠা দিয়ে ভালো ভাবে লাগানো যায়।
রোজার সময় সাবধানতা বেশি নিতে হবে কারন রোজার সময় এমনিতেই আমরা অনেক ডিহাইড্রেটেড থাকি।
ভাইরাসের আরএনএ এর ঘনত্ব ওয়ার্ড গুলোর মেঝেতেও অনেক বেশি দেখা গেছে, তাই নিজের পরিহিত জুতার ব্যপারে খুব সতর্ক থাকবেন। আর নিজেদের বসার রুমটায় যতটুকু সম্ভব দরজা-জানালা খুলে আলো- বাতাস পূর্ণ রাখতে হবে, দেখা গেছে যে রুমে আলো-বাতাস চলাচল বেশি, সে রুমে ভাইরাসের আরএনএ এর ঘনত্ব কম। যারা সেন্ট্রাল এসি যুক্ত করপোরেট হাসপাতালে কাজ করছে, তাদের সে সুযোগ নেই, তবে তাদের এসির বায়ু নির্গমনের পথ ভেতরের বাতাসকে টেনে বাইরে নিয়ে যায়।
পিপিই এর দিকে খেয়াল রাখবেন যারা ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল বা আইসিইউ তে কাজ করছেন। পিপিই ছিড়ে গিয়েছে কিনা বা কোনো কারনে জীবানুযুক্ত হয়েছে কিনা।
যারা করপোরেট হাসপাতালে কাজ করেন তাদের অবশ্য সেন্ট্রাল এসির থাকার কারনে সারা দিন পিপিই পরে থাকলেও খুব একটা কষ্ট হবে না, কিন্তুু অন্য হাসপাতাল গুলোতে এই গরম ও রোজার দিনে খুবই কষ্টকর, তাই রোগী দেখা ব্যতিত মাস্ক আর গ্লাভস ছাড়া পিপিই পরে থাকার বিশেষ প্রয়োজন নেই। আর নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী পিপিই খোলতে এবং পরতে হবে।
আমাদেরকে ভাইরাসের উৎস জানাটা খুবই জরুরি, কারণ এটা খুব দরকার যে আমাদের দেশের ভাইরাসের টাইপের সাথে উহান, ইটালী না অন্য কোন জায়গার ভাইরাসের কোনো মিল আছে কিনা। আমাদের টাইপ টা কি দুর্বল না সবল এটাও জানা দরকার, তাহলে আমরা অনেক মানসিক শক্তি পেতাম এটাকে মোকাবেলা করার। এটা করতে ডাক্তারদের আর মাইক্রোবায়োলজিস্টদের একসাথে কাজ করতে হবে যা করছে সবকটি দেশ। এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ভাইরাসটির জিনোমিক সিকোয়েন্সিং করেছে আইসল্যান্ড। করোনাভাইরাসের উৎস জানতে ফাইলোজিনেটিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে, যেটা ভাইরাসের ক্ষেত্রে এই প্রথম, এন্থ্রোপলজিতে মানুষের উৎপত্তি জানতে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। এরই মধ্যে ফ্রান্সে দেখা গিয়েছে, তাদের ভাইরাসটির সাথে কোন ভাইরাসের মিল নেই যে এটা উহান না ইটালীর সাবটাইপ। ফ্রান্স জানায়, এই ভাইরাসটি ফেব্রুয়ারী মাসে ফ্রান্সেই ছিল নিরবভাবে এটা একজন থেকে আরেকজনের দেহে ট্রান্সমিশন হচ্ছিল।
এতদিন আমারা চিকিৎসা করেছি যে কোনো রোগের রোগীদের, আর আজ করছি কোভিড আক্রান্ত রোগীদের, “সব রোগীরাই এখন এসিম্পটোমেটিক (আক্রান্ত সন্দেহে) কোভিড রোগী। কারন আমরা জানি না আপনার-আমার পাশের মানুষটি কোভিড পজিটিভ কিনা”। তাই এই ব্যপারেও সতর্ক থাকতে হবে। রোযায় আমরা একসাথে বসে সবাই ইফতার করি, কিন্তুু এখন একটু সামাজিক দুরুত্ব মেনে চলতে হবে।
লেখাটার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, ডাক্তারদের নিরাপত্তা, ডাক্তার বেচেঁ থাকলে বেচেঁ থাকবে রোগী।
নিজস্ব প্রতিবেদক
সিলভিয়া মীম