ক্যান্সারকে মরনব্যাধি বলা হয়। একটা সময় ছিলো, যখন ধারণা করা হতো ক্যান্সার মানেই মৃত্যু সুনিশ্চিত। ভালো চিকিৎসা ছিলো না। ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষ মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতো। বিভৎস মৃত্যু, ধুঁকে ধুঁকে মরা। তবে আশার কথা, চিকিৎসা বিজ্ঞান কিন্তু আর সেই মান্ধাতার আমলে পড়ে নেই, এখন ক্যান্সারেরও সুচিকিৎসা আছে। আমাদের দেশেই আছে।
ক্যান্সার বলতে বোঝানো হয় কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি হওয়া এবং এর ফলে অন্য সুস্থ কোষ গুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে শরীরে অন্যান্য কিছু উপসর্গ দেখা দেয়া। সাধারণত মুখের ক্যান্সার মুখের বিভিন্ন অংশে হয়ে থাকে যেমন মুখগহ্বর, গাল,ঠোঁট, জিহ্বা, গলবিল, গলাসহ বিভিন্ন অংশে। মুখের ক্যান্সার হলে সাধারণত মুখে ঘা হয়ে থাকে যা সহজে ভালো হয় না, মুখে ব্যাথা, মাড়ি এবং জিহ্বা তে লাল বর্ণের দাগ, মুখ হা করতে এবং গিলতে কষ্ট হওয়া সহ নানারকম উপসর্গ দেখা দেয়।
মুখের ক্যান্সার মূলত ধূমপান, তামাকদ্রব্য সেবন, মদ্যপানের কারণে হয়ে থাকে। তাছাড়া দীর্ঘদিন দাঁতের ধারালো বা ভাঙ্গা অংশ দিয়ে জিহ্বা বা গালে কামড় পড়ে ক্ষত হতে থাকলে এবং তার চিকিৎসা যথাসময়ে না নিলেও সেটা ক্যান্সারের রূপ নিতে পারে।
সাধারণত বায়োপ্সি, এক্স-রে, সিটি-স্ক্যান, এমআরআই এর মাধ্যমে মুখের ক্যান্সার নির্ণয় করা হয়ে থাকে।
মুখের ক্যান্সার নিরাময়ে চিকিৎসাবিজ্ঞান এখন অনেকটাই এগিয়ে গেছে। বর্তমানে সার্জারি, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি ইত্যাদির মাধ্যমে মুখের ক্যান্সার নিরাময় সম্ভব।
ছবিতে যেই ভদ্রলোককে দেখা যাচ্ছে, উনি মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। উনার বামপাশের গাল ও ভেতরের বাক্কাল মিউকোসায় স্কোয়ামাশ সেল কার্সিনোমা (Squamous cell carcinoma) দেখা দেয়। (ছবি-১)
তিনি তার সমস্যা নিয়ে ঢাকা ডেন্টাল কলেজের এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডা. আবদুল্লাহ আল মাসুদ স্যারের নিকট শরণাপন্ন হন। তখন রোগীর ক্যান্সার চতুর্থ পর্যায়ে ছিলো। TNM এর শ্রেণিভেদ অনুসারে এটা ছিলো T3N1M0. এ পর্যায়ে রোগীর খাওয়া দাওয়া পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো, কারন রোগী হা করতে পারতেন না। ক্যান্সারকোষ গুলো চোয়াল সহ আশেপাশে এমন ভাবে ছড়িয়ে পড়েছিলো যে, রোগীর অবস্থা প্রায় অপারেশনের অযোগ্য হিসেবে ধরা হয়েছিলো। (ছবি-২)
এই রোগীর ক্ষেত্রে রোগীর ক্যান্সারে আক্রান্ত কোষগুলো অপারেশন এর মাধ্যমে ফেলে ফেয়া হয়। উনার গালের একটা বড় অংশ অপসারন করে এবং পার্শিয়াল ম্যান্ডিবুলেক্টমি ও ম্যাক্সিলোক্টমি সার্জারিরর মাধ্যমে উপরের ও নিচের চোয়ালের কিছু অংশ ফেলে দিয়ে, ইনফ্রাটেমপোরাল স্পেস পর্যন্ত ক্যান্সার কোষ অপসারণ করে ক্যান্সারমুক্ত করা হয়। পরবর্তিতে অপসারিত অংশটি উনার পায়ের রান থেকে মাংসপিণ্ড নিয়ে পুনরায় প্রতিস্থাপন করা হয়। (ছবি-৩)
এন্টেরো ল্যাটেরাল থাই ফ্ল্যাপ হচ্ছে এক ধরনের মাইক্রোভাস্কুলার ফ্ল্যাপ।মাথা ও ঘাড়ের দিকের অংশে পুনর্গঠন করার কাজে এটা একটা উপকারী ফ্ল্যাপ। এই সার্জারী শেষ করতে মোটামুটি ৮ ঘন্টা সময় লেগেছে। এছাড়া হার্ড স্ট্রাকচার বা হাঁড়ের অংশ পুনর্গঠন করার প্রয়োজন না হলে এই ধরনের ফ্ল্যাপ চমৎকার একটা অপশন।রিকন্সট্রাকশনের পর রোগীর মুখমন্ডল মোটামুটি স্বাভাবিক গঠনে পেয়েছে, এবং পুরোপুরি কার্যকর।
(ছবি-৪)
সার্জারীর ১ বছর পরের বর্তমান ছবি দেয়া হলো। রোগী এখন পুরোপুরি ক্যান্সার মুক্ত, এবং তার মুখ ও চোয়াল পুরোপুরি কার্যকর। যাকে অপারেশনের অযোগ্য ভাবা হয়েছিলো, সেই রোগী এখন সম্পূর্ণ সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। (ছবি-৫)
ক্যান্সার এখনো একটি মরনঘাতি ব্যাধি, এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু একটু সচেতন হলে, আর প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হলে এর সুচিকিৎসা করা সম্ভব। আর তখনই ক্যান্সার আক্রান্ত হলে জীবনের আশা হারিয়ে ফেলা একজন মানুষের পক্ষে আবার ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়া সম্ভব হবে।
ফিচার রাইটার:
Tahrim Mojumder (Ayesha)
Brahmanbaria Medical College
Session : 2015-16
পরিমার্জনা :
Dr. Sabrina Farida Chowdhury
তথ্য এবং ছবি :
Facialsurgerybd
বিশেষ কৃতজ্ঞতা:
Dr. Abdullah Al Masud
Assistant Professor, Dhaka Dental College