প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৬ নভেম্বর, ২০২০, সোমবার
বাংলাদেশে শুরু হয়েছে একিউট অন ক্রনিক লিভার ফেইলিওর এর অন্যতম কার্যকরী চিকিৎসা প্লাজমা এক্সচেঞ্জ পদ্ধতি। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠতম এই বাঙালি মহানায়ককে শ্রদ্ধা জানিয়ে এই চিকিৎসা পদ্ধতির এদেশে নামকরণ করা হয়েছে ‘মুজিব প্রটোকল’।
একিউট অন ক্রনিক লিভার ফেইলিওর, সংক্ষেপে ‘এসিএলএফ’ হল যকৃতের একটি জটিল রোগ, যেখানে অনেকদিন ধরে ক্রনিক লিভার ডিজিজে আক্রান্ত রোগীর লিভার আকস্মিকভাবে অকার্যকর হয়ে যায়। এ রোগে লিভার ফেইলিওরের পাশাপাশি এক বা একাধিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অকার্যকর হতে থাকে, এবং খুব কম সময়ের ব্যবধানে রোগী মৃত্যুবরণ করেন। দেখা গিয়েছে ৩০-৭০% এসিএলএফ রোগী শেষমেষ আর সুস্থ হয়ে ওঠেন না। এই রোগের সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসাটি হল লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন। কিন্তু লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন পদ্ধতি একদিকে যেমন ব্যয়বহুল, অন্যদিকে প্রযুক্তিগত দিক দিয়েও বেশ জটিল। লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হল ডোনার যোগাড় করা।
আবার এসিএলএফ এ খুব কম সময়ের মাঝে রোগীর অবস্থার অবনতি হতে থাকে বলে দ্রুত রোগীর লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হয়, যার ফলে যুক্ত হয় বাড়তি খরচ এবং ঝুঁকি।
সাম্প্রতিক সময়ে এসিএলএফ এর রোগীদের চিকিৎসায় অন্যতম কার্যকর বিকল্প চিকিৎসাপদ্ধতিটি হচ্ছে প্লাজমা এক্সচেঞ্জ পদ্ধতি, সংক্ষেপে ‘প্লেক্স’। একিউট অন ক্রনিক লিভার ফেইলিউরে রক্তে ভন উইলিব্রান্ড ফ্যাক্টরের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলশ্রুতিতে রক্তের অনুচক্রিকা বা প্ল্যাটিলেটগুলো জমাট বেধে সূক্ষাতিসূক্ষ রক্তনালীগুলোতে রক্ত সঞ্চালনে বাধা দেয়। এ থেকে শরীরের অন্যান্য অঙ্গগুলোও একে একে অকার্যকর হয়ে যেতে থাকে।
রক্ত থেকে এই ভন উইলিব্রান্ড ফ্যাক্টরগুলোকে সরিয়ে ফেলার জন্য রক্তে এক ধরনের মেটালোপ্রোটিনেজ আছে, যার নাম এডামটিএস-১৩। প্লাজমা এক্সচেঞ্জ পদ্ধতির মাধ্যমে এসিএলএফ রোগীর শরীরে এডামটিএস-১৩ সরবরাহ করা হয়। যার ফলে রোগীর রক্তে ভন উইলিব্রান্ড ফ্যাক্টরের সংখ্যা কমতে থাকে এবং রোগীর অবস্থার উন্নতি হয়। এই যুগোপযোগী এবং তুলনামূলক কম ব্যয়বহুল এই পদ্ধতিটি মুজিববর্ষে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছেন বাংলাদেশের লিভার বিশেষজ্ঞগণ, এবং এই পদ্ধতিটির এদেশে নামকরণ করেছেন ‘মুজিব প্রটোকল’।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মুজিববর্ষে বাংলাদেশে এই চিকিৎসাপদ্ধতিটির সূচনা করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের লিভার বিশেষজ্ঞগণ। এ লক্ষ্যে এ বছরের শুরুতে এসিএলএফ চিকিৎসায় প্লেক্স ব্যবহারে এই অঞ্চলের সবচাইতে বেশি অভিজ্ঞ ভারতের ভেলোরের ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাথে বাংলাদেশের বৈজ্ঞানিক কোলাবরেশন শুরু হয়। এ বছরের জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব ভেলোরের ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিভার বিভাগে ‘মুজিব লেকচার’ প্রদান করেন। ‘মুজিব লেকচারে’ ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিভার, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি, হেমাটোলজি, নেফ্রোলজি, রেডিওলজি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও রেসিডেন্টদের সামনে অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব বাংলাদেশে লিভার সিরোসিস চিকিৎসায় অটোলোগাস হেমোপয়েটিক স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্টেশনে অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করেন। এ সময় বাংলাদেশের হেপাটোলজিস্টগণ ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্লেক্স কার্যক্রম হাতে-কলমে দেখেন এবং তাদের সাথে এ নিয়ে বিস্তারিত মতবিনিময় করেন।
করোনা মহামারীর মাঝে বাংলাদেশে প্লেক্স কার্যক্রম শুরু করা বাংলাদেশের লিভার বিশেষজ্ঞদের জন্য ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং। তবুও বহু চড়াই-উতরাই পার করে বাংলাদেশের লিভার বিশেষজ্ঞগণ মুজিববর্ষেই শুরু করতে পেরেছেন এই আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতি ‘মুজিব প্রটোকল’। বাংলাদেশে ‘মুজিব প্রটোকলের’ প্রাথমিক ফলাফল ছিল বেশ আশাজাগানিয়া। ‘মুজিব প্রটোকলে’ বাংলাদেশের প্রাথমিক অভিজ্ঞতা সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে ‘Acta Scientific Gastrointestinal Disorders’ নামের একটি আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক জার্নালে। https://actascientific.com/ASGIS/ASGIS-03-0185.php?fbclid=IwAR3S5pRsXntOGhstSXgeDfGICq_k8hDs0ELyfnqqgGJCp1wisPfkOZkny5M
জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকীতে তাঁর স্মরণে ও শ্রদ্ধায় এদেশের লিভার বিশেষজ্ঞদের বিনীত নিবেদন এই ‘মুজিব প্রটোকল’ বাংলাদেশের মানুষের জন্য অত্যন্ত আশাজাগানিয়া একটি সংবাদ, যার জন্য বাংলাদেশের মানুষ আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে এদেশের লিভার বিশেষজ্ঞগণের প্রতি।