প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ০৪ জানুয়ারি ২০২১, সোমবার
ডা. শুভদীপ চন্দ
একজন প্রতিপক্ষ থাকা ভালো, নইলে মানুষের মন এমন যে ‘প্রতিপক্ষ’ বানিয়ে নেয়। মন থেকে কখনো ভিলেন তৈরি হয় না, সবসময় সুপার ভিলেন তৈরি হয়।
মেয়েরা বিয়ের পর সতীন না পেলে স্বামীর অতীতকেই সতীন হিসেবে ধরে নেয়। একজন মানুষের গ্রামের বাড়ি, বাবা- মা, ভাই- বোন, বন্ধু- বান্ধব, ভালো লাগা সবকিছু মিলে তার অতীত। শুরু হয় চর দখলের মতো মন দখলের চেষ্টা। এখানে সাহায্য করে ‘আমাদের’ শব্দটি। আমাদের ভবিষ্যৎ, আমাদের সন্তান, আমাদের স্ট্যাটাস। ‘আমাদের’ শব্দটি ভয়ঙ্কর, কারণ একসাথে থাকা সবাইকে এর ভাগ না দেয়ার জন্যই এর সৃষ্টি। বউ অল্প কয়েকদিন শ্বশুরবাড়ি থাকে। এ অল্প কয়দিনে এতো বেশি জানে যা জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি থেকেও একজন জানতে পারে না! বেশি বেশি জানায় ওই বাড়ি যুক্তিসঙ্গত নর্দমা হয়ে যায়। প্যাঁক গায়ে লাগলে আবার গোসল করতে হবে- এ ভয়ে লুকিয়ে রাখতে রাখতে স্বামী বেচারা ভুলেই যায় কোথায় লুকিয়ে রেখেছিল। ফলে বাড়ি- ঘর যায় হারিয়ে। নতুন বছর, ঈদ, পূজা, হঠাৎ বিয়ে, বিপত্তি-তে সম্পর্ক ঝুলে থাকে। এদেশে সব কীর্তিকথা মামাদের। চাচারা সব গেঁয়ো, অভাবগ্রস্থ, ঋণী। ছেলেগুলো যে সবসময় বুঝে না তা নয়। কখনো প্রতিবাদ করে না। অশান্তির ভয়ে পরাজয় মেনে নেয়। ত্যালত্যালে মুখ করে বউয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতায় বিগলিত হয়। বুদ্ধি ও পরিশ্রমের প্রশংসা করতে করতে নারী থেকে দেবী বানিয়ে দেয়! সময় চলে যাচ্ছে আপন নিয়মে। কোভিড একটি সামান্য রোগ হয়ে এখন টিকে আছে। গতকাল ট্রেনিং নিলাম কালাজ্বর, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গুর উপর। কালাজ্বরের এ বছর নতুন সনাক্ত রোগী সারাদেশে চারজন, ম্যালেরিয়া এ এলাকায় নেই, ডেঙ্গুতে এ বছর মোট মারা গেছেন দুইজন। দুইজনই ডাক্তার। এগুলোর উপর ট্রেনিং কেন দিলো বুঝলাম না। এটুকু বুঝেছি- আমি মিসফিট এ সিস্টেমের সাথে। এসব নিয়ে কেউ কিছু বলে না, ট্রেনিংয়ের সম্মানী চললেই খুশি সবাই। উল্টো আমার কথায় বিরক্ত হয়।
ফাইজারের ভ্যাক্সিন নেয়াতে মোট আট জনের মারাত্মক এলার্জিক রিএকশন ঘটেছে। আমেরিকা ও ইংল্যান্ড দুই দেশই এ সংক্রান্ত সতর্কতা নোটিশ জারি করেছে। রাশিয়ায় কেস বাড়ছে হু হু করে। ভারতে নতুন কেস কমছে। তুরষ্ক, চায়নার ভ্যাক্সিন দিবে তার জণগনকে। মিউট্যান্ট স্ট্রেইনের জন্য দেশগুলো ইংল্যান্ডের ফ্লাইট বাতিল করেছে। আমরা উপজেলায় কোভিড পজিটিভ পাই না। সাধারণত সিম্পটম থাকলেই এ পরীক্ষা দেয়া হচ্ছে অথবা যদি কেউ আগ্রহী হয়ে করে থাকে। সুতরাং নেই মানে নেই। আমরা এখন পিপিই মাস্ক ছাড়া রোগী দেখি। দীর্ঘদিন নিয়মের মধ্যে থাকায় আমরা অনভ্যস্ত। তবে বাংলাদেশ তুলনামূলক ভাল সক্ষমতা দেখিয়েছে মানতে হবে।
বিকেলের সোনালি রোদকে গাছ ফালাফালা করে দিচ্ছে। বিকেল আর কোথায়! দুপুরের পরই সন্ধ্যা। এখন শীত অনেক কম। শীতের হাওয়া সবজি ক্ষেতগুলোয় গেলে পাওয়া যায়। বাধাকপি, মাচায় ঝোলা লাউ, টমেটো, কয়েক রকমের শাক। দূরে সর্ষে ক্ষেত। সরিষার হলুদ আর বীজতলার সবুজ ধার নিয়ে তৈরি হচ্ছে ক্যালেন্ডার। নতুন আশা নতুন বছরের শুরুতে। প্রতি ‘বছর’ একইভাবে শুরু হয় আর শেষ হয় একইভাবে! করোনার শুরুতে যেদিন এ শহর লকডাউন করা হয় সেদিন থেকে শুরু করেছিলাম লকডাউন ডায়েরি লেখা। একশো পঁচানব্বই দিন পর্যন্ত লিখে বন্ধ করে দিয়েছিলাম। ভবিষ্যৎ আমাদের ভয়-দুশ্চিন্তা-ব্যর্থতাগুলো কিভাবে দেখবে জানি না। আমরা বেঁচে ছিলাম, ভুলচুক নিজের মতো ভেবেছিলাম, সম্পর্কগুলো রিডিফাইন করেছিলাম- এই কী যথেষ্ট নয়!