যারা মেডিকেল এডমিশন টেস্ট
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার হল সম্পর্কিত কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। যারা প্রথমবার পরীক্ষা দিবে তাদের জন্য এই অভিজ্ঞতা অনেকটা দুশ্চিন্তার হয়ে থাকে। ভাবতে থাকো কি হবে না হবে, কিভাবে এই এক ঘন্টা পার হবে ইত্যাদি; তাদের জন্য ইনফরমালভাবে কিছু কথা-
১. পরীক্ষার আগের দিন এডমিট কার্ড, পেনসিল, রাবার, বেশ কয়েকটা বল পয়েন্ট কলম (কয়েক দিনের ব্যবহার করা হলে ভালো হয়, smoothly লিখবে), ট্রান্সপারেন্ট ব্যাগ ইত্যাদি গুছিয়ে রাখবে।
২. নিজের রোল নং, সেন্টার কোড এসব ভালো করে মুখস্ত রাখবে। যদিও এসব পূরণ করার সময় সতর্কতার সাথে দেখে দেখে পূরণ করবে।
৩. পরীক্ষার হলে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস বহন নিষেধ। ঘড়ি পরা যাবে না। হলে ঘড়ি থাকবে।
৪. পরীক্ষা শুরু হওয়ার প্রায় ১ ঘন্টা / ৪৫ মিনিট আগেই কেন্দ্র খুলে দেয়া হয়। সবাইকে হলে ঢুকিয়ে নিয়ে তারপর পরীক্ষা শুরুর জন্য পরীক্ষার হলে অপেক্ষা করতে হবে। এজন্য, পরীক্ষা শুরু হওয়ার নির্দিষ্ট সময়ের এক ঘন্টা আগেই যেন কেন্দ্রে উপস্থিত হতে পারো সেভাবে বাড়ি থেকে বের হবে।
৫. পরীক্ষা দিন সকালবেলায় চেষ্টা করতে হবে খেয়ে আসার। না খেয়ে আসলে সমস্যা হতে পারে। আর পরীক্ষার দুই তিন দিন আগে থেকে খাওয়া দাওয়ার দিকে নজর দিতে হবে। স্ট্রিট ফুড পরিহার করতে হবে। সহজপাচ্য খাবার খেতে হবে ।
কারন, তোমাকে ঠিকঠাক, সুস্থ থেকে পরীক্ষা দিতে হবে। অসুস্থ হয়ে গেলে তোমারই ক্ষতি। পড়া পড়া করে এ বিষয়গুলোতে বেখেয়ালি হয়ে অনেকেই পরীক্ষার আগে আগে অসুস্থ হয়ে যায়, বিশেষ করে পরিপাকতন্ত্রে ঝামেলা!
৬. এসময় নিজের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে হলে যেতে হবে। অন্যকে দেখে নিজের প্রতি আস্থা হারানো যাবেই না। তুমিও পারবে ইন শা আল্লাহ।
৭. পরীক্ষার আগের কয়েকদিন শুধু ইম্পরট্যান্ট দাগানো জিনিসগুলো দেখতে হবে। পুরো বই দেখার মতো দুঃসাহস করা যাবে না। শেষে সব হ-য-ব-র-ল হয়ে যাবে ।
৮. সাথে খাবার পানি অথবা স্যালাইন এর পানি নেবে অনেকেই। নেয়া যেতে পারে, হঠাৎ তৃষ্ণার্ত হলে কাজে দেবে । রুমাল রাখবে যারা বেশি ঘেমে যাও। কিছু পকেট টিস্যু পেপার রাখবে। অনেক সময় ভেতরের চেয়ার টেবিল অপরিচ্ছন্ন থাকে, সেটা পরিষ্কারের কাজে ব্যাবহার করা যাবে।
৯. সেট কোড পূরণের প্রয়োজন নেই। কারণ এখন প্রশ্নপত্র এক পাতায় প্রিন্ট করা থাকবে। প্রশ্নের প্রথম পৃষ্ঠাতেই ওএমআর শিট সংযুক্ত থাকবে৷ চার পৃষ্ঠার প্রশ্নেই ১০০ টা এমসিকিউ থাকবে৷ প্রত্যেক জনের প্রশ্নের ক্রম ও অপশন আলাদা আলাদা থাকবে৷ সেট প্রত্যেকেরই স্বয়ংক্রিয়ভাবে আলাদা।
১০. ধীরেসুস্থে প্রশ্নের নাম্বার দেখবে তারপর সেটার উত্তর পূরণ করবে। যেন এক প্রশ্নের উত্তর আরেকটতে পূরন না হয়। এরকম পরপর হতে থাকলে কিন্তু সর্বনাশ!
এজন্যে প্রত্যেক প্রশ্নের নাম্বার দেখে তারপর সেটার উত্তর পূরণ করতে হবে।
১১. রোল নং, কোড ইত্যাদি বল পূরণ করতে ভুল হয়ে গেলে আতংকিত না হয়ে কর্তব্যরত শিক্ষককে জানাতে হবে।
১২. OMR পূরণ করার সবচেয়ে নিরাপদ উপায় হলো ডিজিটগুলোর ডান থেকে পূরণ শুরু করা।
যেমন- 1234567 যদি কারো রোল নং হয় তবে রোল নং পূরণ করার এর ঘরে সর্ব ডান দিক থেকে আগে 7, তার বামের ঘরে 6, তার বামের ঘরে 5 এভাবে 1 অবধি পূরন করতে হবে।
কোন ঘর যদি বামে ফাঁকা থাকে সেটা 0 (জিরো) দিয়ে পূরণ করতে হবে।
যদিও এখন রোল নং এর যতগুলো ডিজিট ঠিক ততগুলো ঘরই থাকে (বামে কোন ফাঁকা ঘর থাকে না) এজন্য এটা মানার দরকার পরে না। তবে এটা যেকোন OMR পূরন করার ইউনিভার্সাল নিয়ম বলা যেতে পারে।
১৩. সবার আগে সহজ থিওরিটিক্যাল প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। তারপর সহজ ম্যাথম্যাটিকস।
উত্তর করার ক্রম হচ্ছে –
সহজ থিওরেটিকাল → সহজ ম্যাথম্যাটিকাল → কঠিন থিওরি → কঠিন ম্যাথ।
তবে আরেকটা কথা, যদি শেষ সময়ে দেখো যে একটা বড় ম্যাথ কিন্তু মোটামুটি আইডিয়া আছে আর পাশাপাশি কিছু কঠিন থিওরি প্রশ্ন বাকি আছে তবে ঐ ম্যাথ করাটাই অপেক্ষাকৃত অগ্রাধিকারযোগ্য।
১৪. পরীক্ষার উপস্থিতিপত্রে সেই স্বাক্ষর করবে যেটা তোমার এডমিটে আছে।
১৫. ৫ মিনিট সময় এক্সট্রা হাতে রেখে পরীক্ষা দেবে। অনেক ইনিভিজিলিটর আছে ধীরে ধীরে কাজ করে। সেকথা মাথায় রেখে পরীক্ষা দেবে।
১৬. রিভিশনের সময় সব প্রশ্নের উত্তর করেছো কি না সেটা দেখার চেয়ে জরুরি হলো সব প্রশ্ন পড়েছো কি না। অনেকেই হল থেকে বের হয়ে বন্ধুদের সাথে আলোচনার সময়ে খেয়াল করবে এই প্রশ্নের তো উত্তরই দেয়া হয়নি!!
এজন্য আমার মতে রিভিশন দেয়ার সময় প্রশ্নপত্রে কোন কোন প্রশ্ন উত্তর করা হয়নি সেটা না দেখে , OMR এ দেখো যে কোন কোন উত্তর এখনো দেই নি। তারপর সেই নাম্বার অনুযায়ী প্রশ্নপত্রে প্রশ্ন দেখো। এতে কোন প্রশ্ন না দেখেই বাদ যাওয়ার কোন চান্স নেই ইন শা আল্লাহ।
১৭. সব কথার এক কথা – আল্লাহ যদি তোমার ভাগ্যে লিখে রাখেন তবে তুমি তা খুব সহজেই পেয়ে যাবে। আর না থাকলে হাজার চেষ্টাতেও কোন না কোন ত্রুটি রয়েই যাবে। অতএব, সৃষ্টিকর্তার উপর অটল বিশ্বাস রেখে পরীক্ষা দেবে। কোন দুশ্চিন্তা যেন মাথায় আসে।
ইন শা আল্লাহ আমি ভালো করবো- এই কথা নিজেকে দৃঢ়তার সাথে বলতে হবে ।
তোমাদের তারুণ্যদীপ্ত পদচারণায় প্রাণের ক্যাম্পাসের সবুজ আরো গাঢ় হয়ে উঠুক এই কামনায়,
শুভেচ্ছান্তে :
আব্দুল্লাহ আল – যুবাইর,
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ (পঞ্চম বর্ষ)