শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
মেডিকেল ভিসায় বাংলাদেশে আসা প্রথম রোগীর সুস্থ হয়ে ফিরে যাওয়ার এক বছর পূর্ণ হয়েছে। ভুটান থেকে আসা ২৩ বছর বয়সী কলেজ শিক্ষার্থী কারমা দেমা নন হজকিন্স লিম্ফোমা ক্যান্সারেও ভুগছিলেন। ঢাকায় সফল চিকিৎসা শেষে গতবছরের আজকের এই দিনে দেশে ফিরে যান কারমা দেমা।
গতবছরের ১০ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে কারমা দেমার অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসার লক্ষ্যে গঠিত মেডিকেল বোর্ড জানায়, ‘ভুটানের ২৩ বছর বয়সী কলেজ শিক্ষার্থী কারমা দেমা নাকের সমস্যায় ভুগছিলেন। পার্শ্ববর্তী ভারতসহ আরো কয়েকটি দেশে তিনি চিকিৎসাও করিয়েছেন। এক পর্যায়ে তিনি নন হজকিন্স লিম্ফোমা ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাংলাদেশের দুটি মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে কয়েকটি টিমের সদস্যরা করমা দেমার নাকের সফল সার্জারি করেন।’
সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকেরা আরো বলেছিলন, ‘এই রোগীর (কারমা দেমা) চিকিৎসা করা ছিল অত্যন্ত কঠিন ও জটিল কাজ। এর আগে ভারতে ও ভুটানে তার অপারেশন হয়েছিল, থাইল্যান্ডেও সে চিকিৎসা নিয়েছিল। কিন্তু তার এর আগের অপারেশনগুলো সাকসেসফুল না হওয়ায় পরবর্তী অপারেশন করাটা ছিল ভীষণ জটিল, ঝুকিপূর্ণ ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এ কারনে অনেক দেশই তার জন্য নতুন করে আরেকটি অপারেশন করার সাহস করতে পারে নি। আমরা এটিকে দেশের ভাবমূর্তির প্রশ্ন ধরে নিয়ে চিকিৎসা বোর্ড করে এই অপারেশন কাজে হাত দেই। দীর্ঘ সময় নিয়ে শরীরের অন্য জায়গা থেকে রক্ত সহ মাংস, হার কেটে নাকে লাগিয়ে দেওয়া এবং নাকের রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখাটা ছিল রীতিমতো চ্যালেঞ্জের কাজ। সেই কঠিন কাজটি আমাদের চিকিৎসকরা সফলতার সাথে করে দেখিয়েছেন। নি:সন্দেহে এটি আমাদের দেশের চিকিৎসা সেবার জন্য বিরাট এক অর্জন। এখন এরকম সফলতার পর ভুটানেও ১৫ শয্যার বার্ন ইন্সটিটিউট করার ব্যাপারে আমাদের সাথে আলোচনা করা হচ্ছে। নেপাল সহ অন্যান্য সার্কভুক্ত দেশগুলোতেও এরকম জটিল চিকিৎসা সেবা আমাদের চিকিৎসকদের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়াসহ বিদেশি রোগিদের দেশের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া নিয়ে আলাপ আলোচনা করা হচ্ছে।’
একই সম্মেলনে ভুটানের রাষ্ট্রদূত মি. রিং চেং কুইং সিল বলেছিলেন, ‘এই জটিল অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন করে বাংলাদেশ সেটিই করে দেখিয়েছে যা বিশ্বের অন্য দেশ পারে নি। বিশ্বের অন্য দেশগুলো যখন বলেছিল এই অপারেশন সম্ভব নয়, তখন বাংলাদেশ বলেছিল সেটি সম্ভব, এবং বাংলাদেশ সেই অসম্ভব কাজকে সম্ভব করেছে। এজন্য আমরা বাংলাদেশের জনগণ, সরকার ও চিকিৎসকদের কাছে কৃতজ্ঞ।’
সংবাদ সম্মেলনর উপস্থিত থাকা কার্মা নামে ওই তরুণী বাংলাদেশের চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছিলেন,’সার্জারির আগে আমি খুব টেনশনে ছিলাম। তবে সার্জারির রেজাল্ট নিয়ে ভালো ফিল করছি। এখানকার ট্রিটমেন্ট অনেক ভালো ছিলো।এখন অনেক ভালো ফিল করছি।’
উল্লেখ্য, বিদেশ থেকে বাংলাদেশি ভিসায় চিকিৎসা নিতে আসা প্রথম কোন রোগী, নাকে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে ভুটানের ২৩ বছর বয়সী মেয়ে কারমা ডেমা বাংলাদেশে চিকিৎসা নিতে আসেন ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি। জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে তার গত বছরর ৯ জানুয়ারি তার সফল অপারেশন করা হয়। পরবর্তীতে তিনি বর্তমানে সম্পুর্ণ সুস্থ অবস্থায় দেশে ফিরে যান।
প্ল্যাটফর্ম/এমইউএএস