লিখেছেন ঃ Dr. Munzur E Murshid
বর্তমান সময়ে চিকিৎসা শাস্ত্রের নিত্য নতুন তথ্য জানতে জার্নাল পড়ার বিকল্প নাই।আমরা সচরাচর যে সব বই পড়ি সেখান তথ্যের উপস্থাপনা মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত তথ্যের উপস্থাপনা থেকে আলাদা।
তবে সাধারণ কিছু পদ্ধতি বা ধাপ মেনে জার্নাল পড়ে আমরা আমাদের জার্নাল ভীতি দূর করতে পারি এবং কাক্ষিত তথ্য পেতে পারি।
প্রথম পর্যায়ঃ প্রথমে IMRAD এর সাথে পরিচিত হওয়া যাক।IMRAD শব্দটা এসেছে Intro-duction,Method,Result And Discussion এই শব্দগুলোর আদ্যাক্ষোর থেকে। IMRAD হচ্ছে যে কোন Scientific Journal এর সাধারণ একটা ফরম্যাট যে ফরম্যাটে জার্নালগুলোতে গবেষনা প্রকাশ করা হয়।
এবার আমরা জার্নাল পড়া শুরু করিঃ
মনে করি আপনি একটি পেপার পড়ছেন যার শিরোনাম এমনঃ
“Prevalence of Falciparum Malaria cases in Chittagong Division.”
যে কোন গবেষনা পেপার পড়তে গেলে প্রথমে শিরোনাম মনোযোগ দিয়ে পড়েন। শিরোনামে আপনি বেশ কিছু তথ্য পাবেন।
উপরের শিরোনামে কি কি তথ্য পেলেন? -গবেষক ম্যালেরিয়া নিয়ে গবেষণা করেছেন।
কোথায় গবেষণা করেছেন? চট্টগ্রাম বিভাগে।
এখন দেখেন পেপারে IMRAD ফরম্যাট খুঁজে পেয়েছেন কিনা।পেয়েছেন!
এবার পড়বেন Abstract অংশ।Abstract অংশে পেপারের অন্য সব বিভাগের সংক্ষিপ্ত তথ্য থাকে।
Abstract এক বার পড়ে না বুঝলে কয়েকবার পড়েন।প্রথম প্রথম কিছু শব্দ বুঝবেন না;তাতে ঘাবড়ে যাবেন না।
Abstract পড়া হলে Introduction পড়েন।Introduction অংশে কিছু প্রশ্নের উত্তর পাবেন।
Introduction পড়া হলে Results আর Conclusion পড়ুন।
Abstract ,Introduction এ গবেষনা প্রশ্ন কি? কেন এই সমস্যা নিয়ে কাজ করা হল এসব বিষয়ে জেনেছেন। Result,Conclusion পড়ে ; গবেষক গবেষনায় কি পেলেন তা জানবেন।
এবার Method & Discussion অংশ পড়বেন। এই দুই অংশ কিছুটা জটিল। কিছু সময় নিয়ে মনোযোগ দিয়ে কয়েক বার পড়তে হবে।যেখানে যেখানে বুঝবেন না সে শব্দগুলো নোট করে রাখুন।পরে online সাহায্য নিয়ে নোট করা সমস্যা-গুলোর সমাধান জেনে নিন।
দ্বিতীয় পর্যায়ঃ আপনি মোটামুটি প্রথম ধাপে ভালো অভ্যস্ত হয়েছেন এবার এই ধাপে পা রাখতে পারেন।
এখন আপনারা পরিচিত হবেন PPICONS ফরম্যাটের সাথে।
Problem
Patient or Population
Intervention
Comparison
Outcome
Number of subjects
Statistics
এই শব্দ গুলোর আদ্যাক্ষোর মিলে হয়েছে PPICONS ।
এ ফরম্যাট মনে রাখলে আপনার সুবিধা কি? যেমন মনে করি আপনি জানতে চাচ্ছেন “Recent advances in kala-azar treatment in South East Asia” এ বিষয় নিয়ে। গুগল এ খুজে গবেষনা পেপার পেলেন।এবার আপনি PPICONS ফরম্যাট মাথায় রেখে Journal পড়া শুরু করেন।
১ম ধাপ-আপনি খুজছিলেন কালাজ্বরের ওপর গবেষনা পেপার; পেয়েছেন!
২য় ধাপ-population ; আপনার রোগীর সাথে গবেষনায় উল্লিখিত রোগীর মিল আছে কিনা পড়ে দেখুন।
৩য় ধাপ-Intervention; আপনার রোগীর প্রেক্ষাপটে মিলে কিনা সেটাও বিবেচ্য বিষয়।
৪র্থ ধাপ-Comparison; গবেষক গবেষনা পত্রে যে intervention এর কথা উল্লেখ করেছেন সেক্ষেত্রে তুলনা করা হয়েছে কিনা।মানে সেই গবেষনাতে control & case group ছিল কিনা।
৫ম ধাপ-Outcome; এক্ষেত্রে Patient Oriented Outcome আপনার চিন্তার বিষয়। Outcome অংশে morbidity,mortality,treatment cost এ বিশেষ লক্ষ্য রাখা হয়।
৬ষ্ঠ ধাপ-Number; কি পরিমাণ মানুষে আপনার পাঠরত গবেষণা কাজটি দেখা হয়েছে এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যত বড় Participant এ গবেষনায় কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাবে তত তার গ্রহন যোগ্যতা বাড়বে।
৭ম ধাপ-Statistics; এবার পেপারে প্রকাশিত পরিসংখ্যান ভালো করে দেখুন।প্রথমবারে বুঝতে সমস্যা হলে
ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নাই।কয়েকবার পড়ুন।পড়াশেষে ছোট্ট একটি নোট রাখুন।
পুরো পেপার’ত পড়া হয়ে গেল এখন কি করবেন?
এখন Research Paper এর ওপর একটা রিভিউ লেখবেন।
যা লিখবেন তাতেঃ
আপনার কাক্ষিত প্রশ্ন কি ছিল?
উত্তর যা পেলেন।
পেপারের তিনটা ভালো দিকঃ যেমন আপনার কাছে মনে হয়েছে এই অংশ বেশ ভালো হয়েছে।
পেপারের তিনটা খারাপ দিকঃ যেমন আপনার কাছে মনে হয়েছে এই অংশ ভালো হয় নি/আরো ভালো করা যেত/একদমই বুঝতে পারি নি।
সবশেষে পুরো পেপারের ওপর কয়েক লাইনে আপনার মতামত। ভয় নাই এই রিভিউ শুধুই আপনার জন্য।লেখক বা অন্য কেউ’ত আর দেখছে না। তবে এই লেখা রিভিউ আপনাকে জার্নাল পড়ার অভ্যাস গড়তে সাহায্য করবে এবং অনেক পরেও যখন মনে হবে ঐ পেপারটাতে কি যেন পড়েছিলাম; সেই সময়ে এই “কি যেন” এর উত্তর দেবে আপনার রিভিউ।
তথ্যসূত্রঃ
গবেষণায় হাতে খড়ি-রাগিব হাসান
http://www.aafp.org/fpm/2004/0500/p47.html
http://www15.uta.fi/FAST/FIN/RESEARCH/imrad.html
ধন্যবাদ