৩ জানুয়ারি , ২০২০
ম্যাগনেসিয়াম কী?
ম্যাগনেসিয়াম হল শারীরিক সুস্থ্যতার জন্য অন্যতম প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান। স্বাভাবিক পেশী সঞ্চালন ও স্নায়ুবিক কার্যাবলী অক্ষুণ্ন রাখবার জন্য ম্যাগনেসিয়ামের সন্তোষজনক পরিমাণে থাকা জরুরী। কিছু গবেষনায় দেখা গিয়েছে, এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও, আমিষ উৎপাদন, ডিএনএ সংশ্লেষ এবং হাড়ের সুস্থতায় ম্যাগনেসিয়াম অপরিহার্য। স্বাভাবিক খাদ্যতালিকায় ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া গেলেও, ঘাটতি পূরণে ম্যাগনেসিয়াম খাদ্যতালিকা সংযোজন হিসেবে গ্রহণ করতে হয়।
ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা কমে যায় কেন?
ম্যাগনেসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার কম খাবার ফলে। এছাড়া কোন কারণে রক্তে ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ কমে যাওয়া বা দীর্ঘস্থায়ী কোন অসুখের কারণে হাইপোম্যাগনেসেমিয়া হতে পারে। সাধারণত অন্ত্রে ম্যাগনেসিয়ামের শোষণ হ্রাস এবং মূত্রের সংগে অধিক হারে নির্গমন ম্যাগনেসিয়াম ঘাটতির কারণ।
ম্যাগনেসিয়াম ঘাটতির লক্ষণগুলো কী কী?
# পেশীতে টান লাগা এবং শিরটান/খিঁচুনি
# মানসিক ব্যাধি
# হাড় ক্ষয়
# উচ্চ রক্তচাপ
# এ্যাজমা
# অনিয়মিত হৃদস্পন্দন
সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণের মাত্রা কত?
ন্যাশনাল ইন্সটিটিউটস অফ হেলথ অফিস অফ ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট এর তথ্য অনুসারে,একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ মানুষ সাধারণত ৪০০-৪২০ মি.গ্রা. ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ করতে পারেন।অপরপক্ষে, নারীদের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ৩১০-৩২০ মি.গ্রা.। সাধারণের তুলনায় গর্ভবতী মায়েদের আরো অধিক পরিমাণে গ্রহণ করতে বলা হয়ে থাকে।যুক্তরাষ্ট্রের প্রমাণ খাদ্যতালিকায় মোট প্রয়োজনের তুলনায় ৫০% থাকতে দেখা যায়।মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের ই খাদ্যে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি থাকে।
ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার কোনগুলো?
# সবুজ শাক (পালং শাক,কেইল)
# ফল (কলা,র্যাপ্সবেরী,এভোকাডো)
# বাদাম (কাজু,কাঠ ও চীনাবাদাম)
# বীজজাতীয় (কুমড়ো বীজ,সূর্যমুখী বীজ)
# লিগিউম জাতীয় শস্য (শিম,ছোলা,ব্ল্যাকবীন)
# গোটাশস্য (লাল আটা)
ম্যাগনেসিয়ামের অভাব পূরণে খাদ্যতালিকায় এসব খাবার আধিক্য রাখতে হবে।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গত কয়েক দশকে প্রাকৃতিক খাদ্য থেকে ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে,শিল্পায়িত কৃষিব্যাবস্থা এবং খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এর কারণে। পরিশোধিত শস্য,চর্বি,ফসফেট এবং চিনিযুক্ত খাবার গ্রহণের ফলে এসব জনগোষ্ঠীর মাঝে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি দেখা যায়।ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতিতে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ম্যাগনেসিয়াম ট্যাবলেট গ্রহণ করা উচিৎ।
(সাপ্লিমেন্ট) হিসেবে ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণের প্বার্শপ্রতিক্রিয়া গুলো কী?
সাধারণত খাদ্যতালিকায় সংযোজন ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে পেটের পীড়া,বমন বা বমিভাব এবং পাতলা পায়খানা হতে দেখা যায়। (প্রায় সব ধরনের ম্যাগনেসিয়াম জোলাপ হিসেবে কাজ করে)।
প্রতিদিন ম্যাগনেসিয়াম সেবন করা যাবে কি?
সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ৩৫০ মি. গ্রা. এর বেশি ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণের পূর্বে ডাক্তার এবং পুষ্টিবিদের পরামর্শ গ্রহণবাঞ্ছনীয়। ম্যাগনেসিয়ামের বিষক্রিয়া বিরল হলেও কিছু সাপ্লিমেন্ট অধিক পরিমাণ গ্রহণে বমি ও পেট ব্যাথাসহ পাতলা পায়খানা হতে পারে।
ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণের প্রকৃষ্ট সময় কোনটি?
ঘুমের সমস্যায় ব্যবহারের ক্ষেত্রে রাতে ঘুমোতে যাবার ১/২ ঘন্টা আগে সেবন করা উচিৎ। কিছু ক্ষেত্রে এটিকে দুইভাগে বিভক্ত করে সকালে ও রাতে সেবন করতে বলা হয়।
ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম একত্রে গ্রহণ করা যাবে কি?
না। ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম একত্রে গ্রহণ করবার প্রয়োজন নেই। এমনকি যদি বিপুল পরিমাণে(২৫০ মি.গ্রা.) কোন একটি বা উভয়ই গ্রহণ করার প্রয়োজন হয়,সেক্ষেত্রে দুটি ভিন্ন সময়ে সেবন করা উচিৎ। কারণ এদের একটি অপরটির শোষণে বাধা প্রদান করে।
ম্যাগনেসিয়াম কি মাথাব্যাথা ও অবসাদ কমায়?
মাইগ্রেনের পুণরাবৃত্তি কমাতে ম্যাগনেসিয়াম দারুন সাহায্য করে। তাই,যথেষ্ট পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ শুধু ভাল স্বাস্হ্যেরই সহায়ক নয়, এটি আপনাকে মানসিক চাপমুক্ত রেখে মাইগ্রেন এবং পেশীর পীড়ন বা শূল বেদনা থেকেও রক্ষা করে।অবসাদগ্রস্ততা এবং দূর্বলতায় অবহেলা না করে চিকিৎসক পরামর্শ নিন।
নিদ্রাহীনতায় ম্যাগনেসিয়ামের ভূমিকা আছে কি?
নিদ্রাহীনতা ম্যাগনেসিয়াম ঘাটতির অন্যতম প্রধান উপসর্গ। ম্যাগনেসিয়াম GABA কে বাড়ায়, যা চিত্তশিথিলকরণের মাধ্যমে নিদ্রা আনয়ন করে।
ম্যাগনেসিয়াম কি চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে?
আয়রন ও জিংক যখন চুলের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়,অপরদিকে ম্যাগনেসিয়াম চুলের ফলিকল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। যার ফলে সুস্থ সুন্দর চুলের বৃদ্ধি তরান্বিত হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ম্যাগনেসিয়াম মানসিক চাপ কমায় যা চুল পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ।
ম্যাগনেসিয়াম কি আপনাকে কর্মশক্তি যোগায়?
ম্যাগনেসিয়াম কর্মচাঞ্চল্য বাড়ায়। এটি এডেনোসিন ট্রাইফসফেট (ATP) কে সক্রিয় করে যা কিনা শরীরে শক্তি যোগায়। গবেষকগণ ম্যাগনেসিয়ামের ওজন কমানোর এবং ম্যাগনেসিয়ামের আধিক্যের মাঝে সামঞ্জস্য খুঁজে পেয়েছেন। অপরদিকে, ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি ইনসুলিনকে প্রতিরোধ করে,যা বহুমূত্র এবং স্থুলতার কারণ।
ম্যাগনেসিয়াম কি ভিটামিন ডি এর সহায়ক-শক্তি রূপে কাজ করে?
গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে,ম্যাগনেসিয়াম ভিটামিন-ডি এর অভাবজনিত ঝুঁকিকে অনেকাংশে হ্রাস করে। কম মাত্রায় ম্যাগনেসিয়াম সেবনকারীদের তুলনায় উচ্চ মাত্রায় ম্যাগনেসিয়াম সেবনকারীদের ভিটামিন-ডি এর অভাব কম হয়। খাদ্যতালিকায় ভিটামিন-ডি সংযোজন ব্যক্তির ক্যালসিয়াম এবং ফসফেট এর পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে,এমনকি যদিও তারা ভিটামিন-ডি এর অভাবে ভুগে থাকেন।এক্ষত্রে সমস্যা হল, ম্যাগনেসিয়াম পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকলে রক্তনালী তে ভিটামিন-ডি এর জমাটকরণ সংঘটিত হয়। যে সকল রোগীর রক্তে সন্তোষজনক পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকে তাদের ক্ষেত্রে ভিটামিন-ডি সাপ্লিমেন্ট কম পরিমাণে প্রয়োজন হয়।পর্যাপ্ত পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম সেবন ভিটামিন-ডি এর অভাবজনিত ঝুঁকি কমায়, সাপ্লিমেন্টের উপর নির্ভরশীলতা কমায়।
লেখা : ডা. মোহাম্মদ শওকত রায্যাক
অনুবাদ : আরাফাত তান্নুম
সোর্স :
https://jaoa.org/article.aspx?articleid=2673882