ম্রো জনগোষ্ঠীর প্রথম নারী চিকিৎসক সংচাং ম্রো

মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ম্রো সম্প্রদায়ের প্রথম নারী চিকিৎসক সংচাং ম্রো হলেন কাইংপ্রে ম্রো এবং তুমলেং ম্রো দম্পতির পাঁচ সন্তানের মধ্যে চতুর্থ সন্তান। ডা. সংচাং ম্রো শুধু তার বাবা-মা নয় বান্দরবানের ১১টি পাহাড়ি গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘ম্রো’ জনগোষ্ঠীর জন্য আজ গর্বের নাম। বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা ডা. সংচাং পুরো সম্প্রদায়ের জন্য নতুন করে আশার আলো নিয়ে এসেছে।

প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকা থেকে উঠে আসার রাস্তাটা সহজ ছিল না। জুমচাষ করে সংসার চালানো বাবার পক্ষে সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চালানো খুব কষ্টসাধ্য ছিল এবং কখনো কখনো তা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ডা.  সংচাং এর বড় তিন ভাইবোনকে উচ্চ মাধ্যমিকের পর পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। কিন্তু, সংচাং এর চিন্তা ভাবনা ছিল ভিন্ন রকম। এতোদূর এসে তিনি থেমে যেতে চান নি। নিজের টিউশনির জমানো টাকা এবং বড় বোনের সহায়তায় সে কোচিং-এ ভর্তি হয়। এবং ২০১৭ সালে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজে চান্স পান। বর্তমানে তিনি রাঙামাটি মেডিকেল কলেজে ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত আছেন।

আলীকদম-নাইক্ষ্যংছড়ি ম্রো কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক হেডম্যান থংপ্রে ম্রো বলেন, ডা. সংচাং ম্রোদের মধ্যে প্রথম নারী ডাক্তার। তার এই কৃতিত্ব ম্রোদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।

ম্রো সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি ও ম্রো সম্প্রদায়ের নেতা রাংলাই ম্রো বলেন, ম্রো সম্প্রদায় শিক্ষা-দীক্ষায় এখনও অনেক পিছিয়ে আছে। দুর্গম এলাকা যেখানে এখনও আধুনিক সুবিধা পৌঁছেনি সেখান থেকে শত প্রতিকূলতার মধ্যে বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে একজন জুমিয়া ম্রো পরিবার থেকে নারী ডাক্তার হওয়া এত সহজ ছিল না। তিনি ম্রো নারীদের শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন। তিনি এটাও আশা প্রকাশ করে বলেন, এখন এই ডাক্তারকে চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা ও সহানুভূতি প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

ডা. সংচাং ম্রোয়ের লেখাপড়ার হাতেখড়ি তার বাবার কাছে। মাটিতে দাগ কেটে কেটে তিনি বর্ণমালা শিখেছেন। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার গুরুত্ব টের পান যখন তার মা অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং লেখাপড়া না জানার জন্য ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তাই, ডা. সংচাং ম্রোয়ের স্বপ্ন এখন নিজ সম্প্রদায়ের দরিদ্র মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর, তাদের সেবা করার। পাহাড়ের কোন মানুষ যেন চিকিৎসার অভাবে মারা না যান সে লক্ষ্য পূরণের জন্যই কাজ করতে চান ম্রো সম্প্রদায়ের এই প্রথম নারী চিকিৎসক।

প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদক: তাসনিম জান্নাত ইকরা

জামিল সিদ্দিকী

A dreamer who want to bring positive changes in health sector in Bangladesh.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

ঢামেক চিকিৎসকদের সফল অস্ত্রোপচারে আলাদা হলো জোড়া শিশু শিফা-রিফা

Tue Sep 24 , 2024
মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ২০২৩ সালের ৭ জুন বরগুনার পোশাক শ্রমিক বাদশাহ মিয়া ও মাহমুদা আক্তার দম্পত্তির ঘরে জন্ম নেয় বুকে ও পেটে জোড়া লাগানো দুই শিশু শিফা ও রিফা। জন্মের আগে আল্ট্রাসোনোগ্রামের মাধ্যমে জমজ শিশুর ব্যাপারটি জানতে পারলেও জোড়া লাগানোর বিষয়টি তারা জানতেন না। ১৪ ই জুন ঢাকা মেডিকেল […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo