ভালসারটান উচ্চরক্তচাপ বা হাই প্রেশারের চিকিৎসায় জনপ্রিয় এক ঔষধের নাম। উচ্চ রক্তচাপ ছাড়াও এই ঔষধ হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিউর এবং ডায়াবেটিক কিডনি রোগ সহ প্রস্রাবে প্রোটিন চলে যাওয়া কিডনি রোগে বেশ উপকারী।
কিন্তু বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের ঔষধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফুড অ্যান্ড ড্রাগস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) এর এক রিপোর্টে “ভালসারটান ঔষধ সেবনে লিভার, ফুসফুস ও স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে” বলা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক এই ঔষধ বাজার থেকে প্রত্যাহারের এবং এর কাঁচামাল যেন অন্য কোনো ঔষধে ব্যবহৃত না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি দেয়ার জন্য সব ঔষধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি এই ঔষধ ব্যবহার না করার লক্ষ্যে জনসচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি প্রদানের জন্য ঔষধ প্রশাসনের প্রতি নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু এই ভালসারটান কি আসলেই ক্যান্সার সৃষ্টি করে? কী ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) এর রিপোর্টে?
ফুড এন্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন হলো যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও জনকল্যাণ বিভাগের আওতাধীন শক্তিশালী ঔষধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা, যা ৩০ জুন ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সংস্থার অনেক কাজের মধ্যে একটি হলো ঔষধ, টীকা, খাদ্যদ্রব্য ইত্যাদি মানুষের শরীরের জন্য কতটুকু নিরাপদ তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা এবং এগুলো বাজারজাত করার অনুমতি প্রদান করা।
১৩ জুলাই ২০১৮ (আপডেটেড ১৭ জুলাই ২০১৮) এ সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত সংবাদের সারসংক্ষেপ হল – ভালসারটান নয়, এর কাঁচামালে NDMA নামক পদার্থের উপস্থিতিই মানব দেহের ক্যান্সারের জন্য দায়ী। এই NDMA এর উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের গুটি কয়েক ঔষধ কোম্পানি (Major Pharmaceuticals, Solco Healthcare, Teva Pharmaceuticals Industries Ltd.) এর ভালসারটানে পাওয়া গিয়েছে, যারা চীনের Zhejiang Huahai Pharmaceuticals এর কাঁচামাল ব্যবহার করেছে। তাদের রিপোর্টে আরও বলা হয়, এসব কোম্পানি ছাড়া অন্যগুলোর ভালসারটানে NDMA এর উপস্থিতি পাওয়া যায়নি, তাই ব্যবহার করতে কোন সমস্যা নাই।
কোনো ঔষধ যদি ক্যান্সারের মত প্রাণঘাতী রোগের ঝুঁকি তৈরী করে, তাহলে তা ভয়ঙ্কর ব্যাপার। তবে এও লক্ষ্যনীয় যে, এই ঝুঁকি বিবেচনায় ভালসারটানের মত একটা ভাল ঔষধ যেন হারিয়ে না যায়। এজন্য আমাদের দেশে ঢালাও ভাবে সব কোম্পানির ঔষধ বন্ধ না করে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো কোন কোন কোম্পানির ঔষধে NDMA এর উপস্থিতি আছে তা পরীক্ষা করে শুধু সেগুলোই নিষিদ্ধ করা এখন সময়ের দাবি।
লেখক:
ডাঃ এম ফরহাদ
ব্যাচ – ৩৭
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ
প্ল্যাটফর্ম ফিচার রাইটার:
সামিউন ফাতীহা
সেশন ২০১৬-১৭
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর