প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৬ মে ২০২০, মঙ্গলবার
মহামারী আকার ধারন করা করোনা ভাইরাস সঙ্কটে দেশের অর্থনীতিও যখন জবুথবু, তখন রপ্তানির তালিকায় নতুন এক পণ্য যোগ করল বাংলাদেশ।
করোনার এই মহামারীকালে চিকিৎসকসহ রোগ ঠেকানোর লড়াইয়ে যারা রয়েছেন সামনের সারিতে, তাদের সুরক্ষা পোশাক পিপিইর চাহিদা বেড়েছে বিশ্বজুড়ে। বেশ কয়েকটি তৈরি পোশাক কারখানা পিপিই তৈরিতে নামলেও বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো টেক্সটাইল ৬৫ লাখ পিপিই (ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম) যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে। প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করেন ৪০ হাজার কর্মী।
এই সাফল্যের মধ্য দিয়ে বিপুল পরিমাণে বিশ্বমানের পিপিই উৎপাদনে সক্ষম দেশের তালিকায় যুক্ত হলো বাংলাদেশ।
২৫ মে (সোমবার) বেক্সিমকোর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড হেইনসের কাছে ৬৫ লাখ পিপিই গাউনের একটি চালান পাঠানো হয়েছে। এই চালান পৌঁছাবে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (ফেমা) কাছে। সেদিনই পিপিই রপ্তানি উপলক্ষে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার ও বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান।
এমিরেটস এয়ারলাইন্স একটি বিমানে প্রথম চালানটি পাঠানো হয়। আর প্রথম চালানে প্রায় দেড় লাখ পিপিই রপ্তানি করা হয়েছে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক শিল্পে নেমে এসেছে অন্ধকার। বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে এর আগে পিপিই ছিল না। তবে চাহিদা দেখে এই সঙ্ককালে অনেক কারখানই পিপিই উৎপাদন শুরু করেছে। বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক এর আগে বলেছিলেন,
“বিশ্বের অনেকগুলো সংস্থা বাংলাদেশকে পিপিই তৈরির সক্ষম দেশে পরিণত করতে এগিয়ে এসেছে। এটি প্রচলিত পোশাকের চেয়েও একটু ভিন্ন ধরনের এর সুইং মেশিনগুলোও আলাদা তাই প্রচলিত প্রডাকশন লাইনে পিপিই তৈরি সম্ভব হচ্ছে না। তবে আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যেই বাংলাদেশের অনেক কারখানা পিপিই তৈরির সক্ষমতা অর্জন করবে।”
বেক্সিমকো টেক্সটাইলসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ নাভেদ হোসেন বলেন,
মাত্র দুই মাসের মধ্যে আমরা আমাদের বিশ্বমানের উৎপাদন সক্ষমতা, প্রযুক্তিগত ও ডিজাইন দক্ষতা, কারিগরি ও নকশা তৈরির দক্ষতা প্রয়োগ করে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনে সক্ষম হয়েছি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাপী অতিপ্রয়োজনীয় এই পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধিতে ইতিবাচক অবদান রাখতে পারবে বেক্সিমকো। পিপিই উৎপাদনে নতুন কেন্দ্র হয়ে ওঠার মতো সকল সুযোগ এখন বাংলাদেশের সামনে রয়েছে। আর এটা বিশ্ববাসীতে যেমন সুরক্ষা দেবে তেমনি গার্মেন্টস খাতের ৪১ লাখ কর্মীর কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিতে ভূমিকা রাখবে।
আগামী তিন বছরের মধ্যে সুরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানিতে বিশ্ববাজারে অন্যতম প্রধান সরবরাহকারী হয়ে ওঠার লক্ষে ইতোমধ্যেই বেক্সিমকো তৈরি করেছে ‘পিপিই শিল্প পার্ক’।
রপ্তানির অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বেক্সিমকোর প্রশংসা করে বলেন,
“সংকটময় সময়ে বাংলাদেশ মাত্র দুই মাসের মধ্যে স্বাস্থ্য খাতের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিশ্বের এক গুরুত্বপূর্ণ বাজারে রপ্তানি করছে তাও আবার ১০/২০ হাজার নয়, ৬৫ লাখ পিস এটা এক অভাবনীয় অর্জন।”
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার বলেন,
“বিশ্ববাজারের জন্য বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যায় বিশ্ব মানের পিপিই উৎপাদনের পদক্ষেপকে স্বাগত জানায় যুক্তরাষ্ট্র। বেক্সিমকো ও হেইনস’র চুক্তিতে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠে এ দুটি মহান দেশ কোভিড-১৯ মোকাবেলায় কীভাবে লড়াই করছে।”
নিজস্ব প্রতিবেদক
সিলভিয়া মীম