ইন্টারনেটের এই দুনিয়ায় আজ অনেক কিছুই ফেইক বা ভুয়া; যেমন – ভুয়া নিউজ, ভুয়া জার্নাল, ভুয়া কনফারেন্স, ভুয়া ডিগ্রী এবং নতুন সংযোজন ভুয়া ইউনিভার্সিটি ! আর এইসব ভুয়া পণ্যের সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
ইদানিং বাংলাদেশের ডাক্তারদের পাবলিক হেলথ এবং অন্যান্য রিসার্চমূলক সাবজেক্টগুলোর প্রতি আগ্রহকে পুঁজি করে বাইরের কিছু নামসর্বস্ব ইউনিভার্সিটি ভুয়া ডিগ্রী দিয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু কিভাবে বুঝবেন যে এটি একটি নামসর্বস্ব ইউনিভার্সিটি?
ওই ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইট এ গেলে এত এত ইনফরমেশন এর ভিড়ে কোনটা সঠিক আর কোনটা মিথ্যা তা চেনা খুবই দুস্কর! তাই নিচের কয়েকটি সহজ বিষয় লক্ষ্য করলেই আপনি সনাক্ত করতে পারবেন কোনটি ভুয়া ইউনিভার্সিটি এবং অবভিয়াসলি ভুয়া ডিগ্রী।
১. আমার জানা মতে অধিকাংশ ফেইক ইউনিভার্সিটিই USA বা UK এর হয়ে থাকে। কারণ তাহলে আপনি নামের পাশে সুন্দর করে USA বা UK লাগাতে পারবেন (ঘানার কোনো ইউনিভার্সিটি তে নিশ্চয়ই আপনি টাকা দিয়ে লিখবেন না pom Ghana!) এবং এই সব দেশের অধিকাংশ জিনিসই আমরা ভালো বলে গ্রহণ করে নেই, বিচার বিবেচনা না করেই। তাই ওরাও এই সুযোগ কাজে লাগায়. ফেইক ইউনিভার্সিটি চেনার জন্য আমাদের প্রথম লিটমাস টেস্ট হচ্ছে ওদের ওয়েবসাইট এড্রেস।
USA এর সকল রেজিস্টার্ড ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইট এড্রেস শেষ হয়ে .edu দিয়ে; যা UK এর ইউনিভার্সিটির ক্ষেত্রে .ac.uk কোনো ক্ষেত্রেই এর বিন্দুমাত্র রদবদল হবেনা। এমনকি .edu.com ও নয়! এর বাইরে সবকিছুই ফেইক এড্রেস!
২. ওই সব ইউনিভার্সিটি দাবি করে যে ওদের এই লাইসেন্স আছে ওই accredation আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এবং ওদের ওয়েবসাইট এ এইগুলোর অনেক সার্টিফিকেট ও দিয়ে থাকে ওরা। আমার কথা হলো বাংলাদেশে যদি নীলক্ষেতে সবকিছু ডুপ্লিকেট বানানো যায়, তাহলে ওরা কেন বাইরে বসে এইগুলো বানাতে পারবেনা!!! ওদের ডকুমেন্ট আর সার্টিফিকেট এর দুষ্ট চক্রে পা দিবেন না দয়া করে।
৩. “শুধুমাত্র কোম্পানির প্রচারণার জন্য ৩০০ টাকার এনার্জি বাল্ব মাত্র ১০০ টাকায়” – এই মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি ফলো করে এই সব ফেইক ইউনিভার্সিটি। তারা বিভিন্ন সেমিনার বা ওয়ার্কশপ এর আয়োজন করে এবং সেখানে বলে আজকে রেজিস্ট্রেশন করলেই 10,000 ডলারের কোর্স ফীতে আপনাকে ৭৫% স্কলারশিপ দিয়ে ২৫০০ ডলার করে দেয়া হবে। অথবা আপনার প্রোফাইল এত এত ভালো যে এডমিশন কমিটি মুগ্ধ হয়ে আপনাকে পুরোটাই ফ্রি করে দিচ্ছে!!! মনে রাখবেন এই ক্ষেত্রে আপনি হচ্ছে মুরগি এবং আপনাকে দেখিয়ে আরো অনেক মুরগি ধরবে ওরা।দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশের অনেক রেপুটেড ইনস্টিটিউশনগুলো এইসব সাদা চামড়ার লোক ইংলিশে যাই বলে তাকে বেদবাক্য মেনে নিয়ে এইসব সেমিনার, ওয়ার্কশপএর আয়োজন করে দেয়, না বুঝেই….
৪. ওরা আপনাকে বলবে কোর্স তা অনলাইন এবং ক্যাম্পাস এ গিয়ে করতে হবে। প্রথম এক বা দুই সেমিস্টার অনলাইন হবে এবং এরপর আপনি USA বা UK তে গিয়ে বাকি কোর্স করবেন। কিছু সত্য হচ্ছে এইসব ফেইক ইউনিভার্সিটির কোনো ক্ষমতা নেই আপনাকে ভিসার ব্যবস্থা করে দেয়ার। তাই তারা পরবর্তীতে বলবে এক কাজ করো তুমি এই সেমিস্টারগুলো ও দেশে করো; আমরা অনলাইন এ এসাইনমেন্ট বা প্রেসেন্টেশন নিয়ে নেবো।
সকলের প্রতি অনুরোধ রইলো যে দয়া করে এইসকল প্রতারণায় পা দিবেন না। এই সব ডিগ্রী আপনার কোনো কাজেই আসবেনা।
….
ডা. সাজেদুর রহমান শাওন।