শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫
রংপুরে কর্তব্যরত নারী চিকিৎসকের উপর হামলার প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালিত হয়েছে। রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অতর্কিত হামলার শিকার জরুরি সেবায় কর্মরত ডাক্তার সাবরিনা মুসরাত জাহান মৌ। গতকাল (১১ এপ্রিল) আনুমানিক সন্ধ্যা ৬টায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডিউটিকালীন এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ডাক্তার বাদী হয়ে তারাগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
জানা গেছে, তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মো. আতাউর রহমান (৬০) নামে একজন রোগী বুকে ব্যথা নিয়ে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে যান। এ সময় জরুরি সেবায় কর্মরত ডাক্তার ছিলেন মোছা. সাবরিনা মুসরাত জাহান মৌ। তিনি ৪২তম বিসিএস, স্বাস্থ্য ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা।
আক্রমণের শিকার ডাক্তার সাবরিনা মুসরাত বলেন, বুকে ব্যথা নিয়ে জরুরি বিভাগে আসা উক্ত রোগীকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সর্বোচ্চ সেবা প্রদান করি। প্রাথমিকভাবে রোগীর শারীরিক অবস্থা (হৃদরোগ আক্রান্ত) চিহ্নিত হলে রোগীর উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এ সময় জরুরি বিভাগে থাকা অন্য এক রোগীর চিকিৎসাকালীন তুর্য (২২) ও তাওরাত (২৪) নামের দুই সমন্বয়ক আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং সরকারি দায়িত্বে বাধা প্রদানসহ শরীরে আঘাত করে। তাদের দুজনের বাড়িই তারাগঞ্জের কলেজপাড়ায় বলে জানা গেছে।
তিনি বলেন, কিছুক্ষণ পর আবারও অভিযুক্ত দুইজনসহ অজ্ঞাত আরও পাঁচজন দলবদ্ধভাবে এসে উচ্চবাচ্য করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এ সময় হাসপাতালের নৈশ প্রহরী সুমন চন্দ্র রায়, আয়া শ্যামলী রানী মহন্ত, সিনিয়র স্টাফ নার্স লোপাসহ রোগীর সঙ্গে থাকা অজ্ঞাত ব্যক্তিগণ অভিযুক্তদের আক্রমণ থেকে আমাকে রক্ষা করেন। এতে তাদেরকেও ধাক্কাধাক্কি করে আঘাত করা হয়। তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী আতাউর রহমানকে নিয়ে চলে যাওয়ার সময় আমাকে দেখে নেবে বলে হুঁশিয়ারিসহ প্রাণ নাশের হুমকি দেয়।
ডাক্তারের ওপর আক্রমণের ঘটনায় রংপুরের সিভিল সার্জন মোছা. শাহিন সুলতানা প্ল্যাটফর্মকে বলেন, খবর পেয়ে তিনি রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টায় ঘটনাস্থল (হাসপাতাল) পরিদর্শন করেছেন। আক্রমণের শিকার ডাক্তারকে সঠিক বিচার ও নিরাপত্তা প্রদানের আশ্বস্ত করা হয়েছে। এ সময় তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্কতা মো. রুবেল রানাও ছিলেন। আগামীকাল বিভাগীয় কর্মকর্তাগণ হাসপাতাল পরিদর্শনে যাবেন। পরিদর্শনে শেষে তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
এ ঘটনায় তারাগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারের ওপর হামলার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে।
উল্লেখ্য, আক্রমণের শিকার ডা. সাবরিনা জাহান মৌ ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তিনি বর্তমান শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থসহ নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছেন।
এ ঘটনায় রংপুর জেলাব্যাপী চিকিৎসকদের একদিনের কর্ম বিরতি পালিত হচ্ছে।
প্ল্যাটফর্ম/এমইউএএস