রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ ঘোষনার প্রথম থেকেই বিরোধীতা করে যাচ্ছিল কিছু পার্বত্য সংগঠন।
রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত স্থগিত করার দাবিতে গত বছরের ২৯ অক্টোবর বুধবার পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের উদ্যোগে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছিল। তাদের ভাষায়, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না করে এসব বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন পার্বত্য জনগণের ভূমিদখল ও স্থায়ী বাসিন্দাদের সংখ্যালঘুতে পরিণত করার নীলনকশা।
দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের কয়েকটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলসহ ছাত্র যুব সংগঠন এবং নাগরিক সংগঠন পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না করে এবং শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন ছাড়া মেডিকেল কলেজ স্থগিত রাখার দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে।
এরই মধ্যে, চলতি বছরের বিগত ১০ই জানুয়ারী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। যা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বদৌলতে সারা বাংলাদেশের মানুষ দেখেছে এবং সাধুবাদ জানিয়েছে। এ সময় রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের কনফারেন্স রুমে উপস্থিত ছিলেন- পার্বত্য সচিব নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, রাঙামাটি মেডিকেলকলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. টিপু সুলতান প্রমুখ। কিন্তু সেই দিনটিতে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের প্রতিবাদে আদিবাসী সংগঠন গুলোর ছিল হরতাল। ঐ দিন রাঙ্গামাটিতে মেডিকেল কলেজ উদ্বোধনের বিরোধিতাকারী পাহাড়িদের সঙ্গে সরকার সমর্থকদের সংঘর্ষে অন্তত ১৭ জন আহত হয়েছিলেন। জারি করা হয়েছিল কারফিউ। এই হরতালের মাঝেই শুরু হয় রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ।
কলেজ সূত্র জানায়, কলেজে প্রথম ব্যাচের জন্য ৫১ শিক্ষার্থীকে বাছাই করা হয়।
পার্বত্য কোটায় ২৫ শতাংশ হিসেবে পার্বত্যাঞ্চল থেকে মোট ১৩ শিক্ষার্থী মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পায়। এর মধ্যে তিন পার্বত্য জেলা থেকে একজন করে তিন বাঙ্গালি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পায়। বাকী দশ জন মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার বিরোধিতাকারী উপজাতীয় সেটেলার শিক্ষার্থীর মধ্যে সাত শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও তিন শিক্ষার্থী ভর্তি তালিকায় নাম থাকার পরও ভর্তি হয়নি।
কিন্তু আমরা লক্ষ করছি রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক কর্মচারি নিয়োগসহ পাঠদান কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। যার ফলে পার্বত্যবাসীর দীর্ঘদিনের আকাঙ্খিত রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ নিয়ে অত্র এলাকার জনসাধারনের মধ্যে হতাশার জন্ম দিয়েছে।
এরই মধ্যে গুঞ্জন উঠেছে, মেডিকেল কলেজ অনত্র স্থানান্তর করা হতে পারে। ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ বিষয়ে বৈঠক হয়েছিল সেটা সংবাদ মিডিয়ায় বেশ আলোচিত হয়।
২১ শে ফেব্রুয়ারি রাংগামাটিতে আলোচনা সভায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার বলেছেন, মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠায় বাধা দেয়ার অন্যতম কারণ বলা হচ্ছে পাহাড়িরা ভূমি থেকে উচ্ছেদ হবে, আবার বাঙালি পুনর্বাসন করা হবে। মেডিকেল কলেজের পরিবর্তে তারা প্যারামেডিকেল ও নার্সিং ইনস্টিটিউট স্থাপনের উদ্ভট প্রস্তাব দিচ্ছেন। প্রস্তাবটি এতই হাস্যকর ও বালখিল্য যে এগুলো স্থাপন করতে যেন জমি লাগবে না, বাঙালি ছাত্র-ছাত্রী আসবে না। এগুলো বাস্তবায়ন করতে গেলে মেডিকেল কলেজের চাইতেও অনেক বেশি ভয়াবহ হবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, মেডিকেল কলেজ হবে কী হবে না সেই চ্যাপ্টার শেষ, সদাশয় প্রধানমন্ত্রী মেডিকেল কলেজ রাঙ্গামাটিতে উদ্বোধন করেছেন, রাঙ্গামাটিতেই থাকবে, কোথাও স্থানান্তর করতে দেওয়া হবে না।
দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের ক্লাস শুরু করার দাবি জানিয়েছে জেলার চার বাঙালি সংগঠন।
পার্বত্য গণ পরিষদ, চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলন, পার্বত্য বাঙালি ছাত্র ঐক্য পরিষদ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান। রাঙামাটিতে স্থাপিত মেডিকেল কলেজ ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম প্রক্রিয়া রাঙামাটি থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিলে লাগাতার হরতালসহ অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে পাহাড়ের বাঙ্গালি সংগঠনগুলো।
এখন রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজের ভবিষ্যত অজানা। অনিশ্চিয়তায় ৫১ শিক্ষার্থী!