প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৮ জুন ২০২০, রবিবার
ডা. সিরাজুল হক
অন্ধকার সুড়ঙ্গ শেষে আশার আলো।
এখন অদৃশ্য অণুজীব করোনার বিশাল কুদৃশ্য মহা থাবার কালো কাল। ঘরবন্দি ভোরগুলি আগের মতন রৌদ্রকোজ্জল অনুভূতি বয়ে আনে না।আতংকিত মনে কম্পিত হাতে মোবাইল স্ক্রিন স্ক্রল বা টিভি রিমোট চাপলেই ধাক্কা খেতে হয় মহামূল্যবান কারো না কারো আক্রান্ত বা চলে যাবার দুঃসংবাদে। চলে গেলে শূন্যমন হাহাকার করে ওঠে। অপূরণীয় ক্ষতির জন্য নিয়তিকে দায়ী মনে করে সান্ত্বনা খুঁজি।
পজিটিভ হওয়ার একটি খবর, তারপর অক্সিজেন লাগলে হাসপাতাল…হাইফ্লো অক্সিজেন, আরো লাগলে ভেন্টিলেটর; অনেকেই ফিরে কিন্তু যে ফিরে না, তার জন্য ফুলস্টপ। কালের গভীরে হারিয়ে যাওয়া। মহাদরকারি স্থান অবেলায় চিরশূন্য হয়ে যাওয়া; পরিবার-দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতি।
যিনি ফিরেন তারও বইতে হয় অনেক ধকল।
তাই এখন কাউকে ফোন করে বিড়ম্বনা করা বারণ। কিন্তু দীর্ঘ ৫০ দিন যুদ্ধ করে কেউ যদি ফিরে আসার খবর তার ওয়ালে দেয়, তখন আনন্দ–আত্মবিশ্বাস ভাগাভাগি, বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণার রসদ যোগায় বৈকি।
তেমনি একজন শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ বার্ণ এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি এর এনেস্থেসিয়া বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আতিকুল ইসলাম।
কিভাবে জয়ী হলেন তিনি? এরকম অনেক প্রশ্ন। জানি অনেক উত্তর অজানা।
ফোন ধরেন তার ছোট মেয়ে হবু ডাক্তার সাইমা। জানাল কিভাবে বড় মেয়ে উসামা এবং স্ত্রী ডা. রুমানা সুলতানা অসীম সাহস, মনোবল নিয়ে সবকিছুর ঝুঁকি নিয়ে অনেক দিন পাশে থেকে ওনাকে সেবা করেছেন।
এটি ওনার তৃতীয় হাসপাতাল, এর আগে সিএমএইচ এবং কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ছিলেন।
অবদমনবিদ তাদের বাবার সাথে আমার অনেক স্মৃতি। দারুণ দক্ষ, সাহসী, আত্মবিশ্বাসী, অদম্য নীতিবান দেশপ্রেমিক এক প্রাণ। সুস্থ রাজনীতির সাথে ধর্মও চর্চা করেন। তাকেই ফোনটি দেওয়ার পর বলি, “ভাই , ৫০ দিন পর আমিতো এখন শ্বাস-প্রশ্বাসের পুনর্বাসনে আছি। এখন অক্সিজেন ছাড়া আধা-ঘন্টা হাঁটতে পারি। কালকে বাসায় যাবো। সেখানেও সিলিন্ডার আছে। আরো মাসখানেক লাগবে ‘আত্মপ্রত্যয়ী’ কন্ঠে বললেন অধ্যাপক ডা. আতিকুল ইসলাম।
তাঁকে এ যাত্রায় বেঁচে যাবার এক আভাভরা রূপে দেখলাম মেজেঞ্জার স্ক্রিনে। যদিও কথা বলার মাঝে ক্লান্তি ধরা পড়ে। ইঙ্গিত করলে বলে,
‘গতবার হজ্ব করার পর রেখে দিয়েছি। সেটাই শান্তি। এখন বেশ দুর্বল। অনেক রকম ঔষধ খেয়েছিতো!
– ‘কিভাবে ইনফেক্টেড হলে ,?
-‘ঐ…গুরুতর রোগীর এনেস্থেশিয়া দেবার সময়। ঝুঁকি নিয়েছিলাম – রোগী বাঁচানোর। অথচ দেখেন– কি হল?
– ‘তোমাকে কি ভেন্টিলেটরে দিয়েছিল?’
– ‘না, আমাকে এইচ.এফ.এন.সি. (হাই ফ্লো নেজাল কেনোলা) প্রতি মিনিটে ৬০ লিটার অক্সিজেন এবং নন ইনভেসিভ ভেন্টিলেটর (এন আই ভি ) তে দেওয়া হয়। সর্বমোট ১৮ দিন আইসিইউতে ছিলাম। তারপর মেড়িকেল এইচডিইউতে ৭ দিন। মনে হয় সেজন্যই বাঁচছি। আশেপাশে খুব কমই ফিরেছে।’
– ‘কুয়েত মৈত্রী থেকে সিএমএইচ এ আসলে কেন? আর এখানেই বা কেন?
– ‘আমারতো ফুসফুস ৮৮% ধরেছিল, ডায়াবেটিজ + সিওপিডি ছিল। প্রথমটিতে পর্যাপ্ত ক্রিটিকাল মনিটরিং অপ্রতুলতা তদুপরি দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় আমার লোকজন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি পেয়ে কুয়েত মৈত্রী থেকে সিএমএইচে আনতে সক্ষম হয়। আর সিএমএইচে হাইফ্লো অক্সিজেন কেনোলা (এন আই ভি ) আছে। মিনিটে সত্তর লিটার দেয়া যায়। সবকিছু নিয়ম মেনে হয়। আল্লাহর অশেষ রহমতে এইচ.এফ.এন.সি. এবং এন.আই.ভি.’র সুফলে ভেন্টিলেটর এভোয়েড করা গেছে –আলহামদুলিল্লাহ।’
‘তিন সপ্তাহ পর উন্নতি হলে কোভিড নেগেটিভ পেয়ে এখানে (শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ বার্ণ এন্ড প্লাস্টিক সার্জার হাসপাতাল) চলে আসি। এটাতো আমার চাকুরিস্থল। পরিবারের সবাই এসে সেবাশ্বশ্রুষা করতে পেরেছে।’
– ‘এখন চলে যাচ্ছ কেন?
– ‘কাল থেকে এটাও কোভিড হাসপাতাল।’
বাসায় ফিরে জানালো – আজ ৫৩ দিন পর সবাই তাঁর রুমে ঢুকেছে।