প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২ জুলাই ২০২০, বৃহস্পতিবার
ডা. শুভদীপ চন্দ
মানুষ যখন কারো থিঙ্কিংয়ের প্রেমে পড়ে তারপর তাকে ঘিরে থাকা গল্পের, এবং সর্বশেষ গল্পের পেছনে থাকা মানুষটার- সে প্রেম দৃঢ় হয়। কারন ব্যক্তি মানুষ এমন দুই লেয়ার দ্বারা প্রোটেক্টেড যেগুলো কলুষিত হওয়ার সুযোগ নেই।
তাই দূরের প্রেম- যেগুলো এসএমএস, ইমেইল, ম্যাসেঞ্জারে গড়ে উঠে সেগুলো মারাত্মক। সময়, বাস্তবতা, লোকভয় সব অস্বীকার করে এগুলো বেঁচে থাকে। বেশিরভাগ সময় গোপনে। কারন ব্যক্তি নিজে অস্বস্তি নিয়ে সমাজকে স্বস্তি দেয়। ব্যক্তির এ ত্যাগেই সমাজ টিকে আছে।
এটি পৃথিবীতে করোনা আসার প্রায় দশ বারো বছর আগেকার কাহিনী। এক ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ের গল্প। ঝড় থেকে বাঁচতে সে কুয়ায় ঝাঁপ দিচ্ছে। সে জানছে না সে কথার বন্দীদশায় আটকে যাচ্ছে। তার থট প্রসেস অনেক দূর থেকে দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। স্বেচ্ছাবন্দী বা স্বেচ্ছানির্বাসনে ভারের ওজন থাকে না। প্রতিদিন যে আনন্দ ও যে এক্সসাইটমেন্ট নিয়ে সে দুই টাকার এসএমএস পড়ে তার সামনে কোনোকিছুই কিছু না।
প্রায় সারাটা দিন সে তার অভ্যাসের মতো তাকে বয়ে বেড়ায়। কোনো অতি সুন্দর বা অতি চমৎকার কিছু দেখে গিল্টি ফিল করে। কেন তাকে দেখাতে পারছে না, কেন সে এমন মহা আশ্চর্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, কিভাবে ভবিষ্যতে তাকে দেখানো যাবে- এসব ভাবনা। নিজের পরিবর্তন আয়না জুড়ে তাকে পুলকিত করে। কারন সে জানে- ‘যে একটুকু বদলে নি সে ভালোবাসার রাস্তা দিয়ে হাঁটছে না’। পুরনো জীবন থেকে বাধা আসে, সে নিজের সাথে কথা বলে- ভুল না করার ভুলে সারাজীবন কষ্ট পাওয়ার চেয়ে বর্তমানে বড় ভুল নিয়ে আনন্দ পাওয়া অনেক বেশি সুখের।
তার মা তখন আরো অসুস্থ হয়ে পড়লেন। মাঝেমাঝেই বড় শহরে আনতে হয়। বাবা ওইদিকে নতুন মা ঘরে আনলেন। মা-কে দেখভালের দায়িত্ব পড়লো তার একার উপর। বাবার প্রতি তার জিদ বাড়ে। দ্বিতীয় মা তার সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা বাবার সাথে তার দূরত্ব আরো বাড়ায়। প্রতিষ্ঠিত প্রেম তখন নন ফাংশনিং। পাঠ্য বইয়ের সাথে দূরত্ব অসীম। সারাদিনের শান্তি বলতে কয়েক এসএমএস। চাঁদের আলো যেমন খোলা জানালা দিয়ে এমনি এমনি ঢোকে, নেমন্তন্ন করতে হয় না- প্রেমে পড়া এমনি প্রাকৃতিক ঘটনা। এখানে ঢাকঢোল পিটিয়ে ঘোষণা দেয়ার কিছু নেই।
ফলত কেউ জানলো না। কোনো কথা কখনো বলা হয় নি। লেখা হয় নি। ছবি তোলা হয় নি। সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই বলে সেটি মিথ্যে হয়ে যায় না। দশজনের দশজন অস্বীকার করলেও হয় না। ব্যক্তি আগে সমাজের, তারপর ব্যক্তির। সূর্যের প্রখর আলো অন্ধ চোখের অন্ধকারের সামান্যতমও উধাও করতে পারে না। সমাজ নিজের স্বস্তির প্রসঙ্গে সবসময় স্বেচ্ছা অন্ধ।
মহাকবি কালিদাস যেমন বলেছেন ‘এক টুকরো রত্ন কেবল এক কাঁটা দিয়েই প্রিয়ার বুকের সাথে ঝুলে আছে, আমি শত কাঁটা বিদ্ধ হয়েও কোথাও স্থান পেলাম না’। ভেবেছিলাম একদম শুরু থেকে শুরু করে সকল স্তর পার হয়ে মহাকবির এ অনুভূতিতে শেষ করবো। কোভিড প্রিয়ড শুধু ভয় আর শূন্যতা দেয় নি, অসীম সাহস ও অবসর দিয়েছে সেগুলো লিখে রাখার।
কিন্তু সকল কর্নার এটি একসেপ্ট করছে না। এ বেজোড় পৃষ্ঠাগুলোর তাই এটিই শেষ কিস্তি।