৮ এপ্রিল ২০২০:
ডা. শুভদীপ চন্দ
এমন এক শহরে থাকছি, যে শহরটি অবরুদ্ধ। ‘লক ডাউন’ শব্দটি আমাদের ডিকশনারিতে নতুন। আজ (০৭ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে বারোটার কিছু পরে শহরে লক ডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।
কিছু ঔষধ কেনার দরকার ছিল। যখন বের হই ঘড়িরকাটা পৌনে সাত ছুঁই ছুঁই। কাঁসার থালার মত বড় এক চাঁদ উঠেছে। রোড লাইট জ্বলছে। রাস্তাঘাট সুনসান। রিকশা, সাইকেল, মোটরসাইকেল কিছু নেই। এ কয়দিনে মানুষের কম উপস্থিত দেখে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। শহরের পার্ক, বাজার, ব্যস্ত মোড় কিছুক্ষণ হেঁটে হেঁটে বেড়ালাম। যেন রূপকথার কোন জাদুর শহর। অশুভ রাক্ষস মন্ত্রবলে সব ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে।
হঠাৎ হঠাৎ হ্যান্ড মাইকে পুলিশের নির্দেশনা শোনা যায়। ‘আপনারা কেউ ঘর থেকে বের হবেন না, আতঙ্ক ছড়াবেন না, কোভিড ১৯…।’ এক মোড়ে কিছু পুলিশ সদস্য। তাদের ওয়াকিটকির শব্দ ছাড়া কিছু নেই। তারা নিজেরাও ডিসটেন্স ও সাইলেন্স বজায় রাখছেন। দোকানপাট সব বন্ধ। খাবারের দোকান বন্ধ। কিছু ফার্মেসি খোলা। খোলা ফার্মেসিতেও দড়ি দিয়ে সীমানা টানানো। বাইরে চক দিয়ে গোল গোল আঁকা। আর কিছু প্রাইভেট ক্লিনিক খোলা। অর্ধেক শাটার ফালানো।
অল্পকিছু লোক হাঁটছে। দ্রুত পায়ে। পায়ের শব্দ শোনা যায়। সবার মুখে মাস্ক। উঁচু উঁচু বাড়িগুলোর ভিতরে আলো। ফ্ল্যাট বাড়ির জানালায় মানুষ দেখা যায়। উদ্বিগ্ন চোখ, সামনে কি হবে। রাস্তার কুকুরগুলো সতর্কভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারাও মনেহয় চিন্তিত- কি ঘটল!
হঠাৎ এক গাড়ির আওয়াজ। পুলিশের টহল জীপ ধুলা উড়িয়ে চলে গেল। রাস্তার পাশে এক বৃদ্ধ লোক খালি গায়ে লুঙ্গি পরে বসে আছেন। মোবাইলে তাপমাত্রা পঁয়ত্রিশ ডিগ্রি দেখাচ্ছে। এক মনুমেন্টে লাল নীল সবুজ মরিচ বাতি জ্বলছে। এক মাস্ক বিক্রেতা তার দোকান বন্ধ করছেন। আরেকটি দোকান খোলা- ‘শেষ বিদায় স্টোর’। ক্রেতা বিক্রেতা কেউ নেই। এখান থেকে সম্ভবত না বলে নেয়ার মতো কিছু নেই।
এক ভিক্ষুক ভিক্ষা চাইলো। একজন বললো ‘রাস্তায় লোক নাই তুমারে ভিক্ষা দিব ক্যারা?’ আমার কাজ শেষ, আমি ঘরে ফিরছি। ভাবছি কোনটির ক্ষমতা বেশি- ক্ষুধার না আশার। ভিক্ষুকের কাছে উত্তরটি ছিল! কিন্তু আমাদের ‘সময়’ ছিল না।
আধাঘন্টার মধ্যেই ফিরে এসেছিলাম।