লাইফ ইন লকডাউন, ডে ওয়ান হান্ড্রেড ফিফটি ফোর

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, বুধবার
ডা. শুভদীপ চন্দ

এভাবে কোনো ডায়েরি লেখা হয়! আজ লিখলাম আবার পাঁচদিন পর আরেকটা। কথার খেই যায় হারিয়ে। ডিউটির চাপ, ফোনে কথা বলা, সামাজিকতা রক্ষা- এক আধটু মোবাইলে টাইপ করে রেখে দেই। সম্পূর্ণ করতে পারি না।

এরমাঝে কত কিছু ঘটে গেল। একজন ইউএনও আইসিইউতে ভর্তি হলেন, মসজিদে বিস্ফোরণ ঘটলো, ল্যানসেট রাশিয়ার ভ্যাক্সিনকে স্বীকৃতি দিলো, রূপালি থালার মতো কয়েক রাত চাঁদ উঠলো। বাসের রেস্ট্রিকশন উঠে গেলো। এখন আবার আগের মতো নড়েচড়ে লোক নেয়। লোকে ভর্তি টইটম্বুর বাস- আস্তেধীরে চলে। যাকে বলে ‘রাজেন্দ্রগমন’। সাঁইসাঁই করে প্রাইভেট বাহন চলে যায়। বড়লোকদের সাথে গরিবের কী পার্থক্য থাকলো যদি উভয়েই পায়ে হেঁটে চলে!

ছবি – প্রতীকী

২০১০ সালে এস্থার ডাইসন সর্বপ্রথম এ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন- এটেনশন ইকোনমি। সিস্টেমে এটেনশন একটি মহামূল্যবান পণ্য। একে ব্যবহার করে অনেক লাভবান হওয়া যায়। এ খবরগুলো সাধারণের এটেনশন টানছে চুম্বকের মতো করে। বাংলাদেশে কোনো দুর্ঘটনা বা কেলেংকারির খবর সেজন্য চেষ্টা করি এড়িয়ে চলতে। এটেনশন ড্র করে কিছু ব্যবসা করার পর এর আর রোল নেই। তাই আমাদের কাছে বাসের খবর ওসি প্রদীপের খবরের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

হাসপাতালে প্রতিদিন একই খবর আসে নতুন নতুন রূপে। এক মহিলা তার শ্বাশুড়িকে মেরেছে। তারপর বাড়ির সবাই মিলে মহিলাকে মেরেছে। মহিলার অবস্থা বেশি খারাপ। এক দূর সম্পর্কের চাচা তেলতেলে মুখ করে বসে আছে। বলছে ‘তেমন কিছুই হয় নাই, বউ ভঙ ধরছে’। আমরা সদর হাসপাতালে পাঠাতে চাই। তারা বলতে থাকে ‘তেমন কিছু হয় নাই’। বলি এটাই লিখিত দেন, ভর্তি করে দিচ্ছি। অনেক লোক এসেছে- এ কাজে কেউ সাহস পায় না। যদি ‘তেমন কিছু’ হয়ে যায়? মহিলার স্বামী বিদেশ থেকে টাকা পাঠায়। কত রকমের ড্রামা যে হাসপাতাল ইমার্জেন্সিতে হয় শুধু বলে বোঝানো যাবে না।

প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট নিতে লোক আসে। এদেশে মাথা ব্যথা, ঘাড় ব্যথা, খোশ প্যাঁচড়া নিয়ে আসা লোকও নিজেদের প্রতিবন্ধী পরিচয় দেয়। এক মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেয়া লোক পকেট থেকে একশো টাকা বের করে দিলেন সিগনেচারের জন্য! কেউ কেউ হাত পা ধরে কান্নাকাটি শুরু করে। প্রতিবন্ধী হওয়ার জন্য লোকজন ব্যগ্র হয়ে আছে- ভাবা যায়? এখানে সুস্থতার সার্টিফিকেট লাগে যোগ্যতা প্রমাণের পর। তাই এর গুরুত্ব কম।

একজন ইউএইচএফপিও’র কথা বলেছিলাম দুর্নীতি বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছিলেন। মাত্র আট মাসের মাথায় তাকে বদলি করা হলো। তার এখানে প্র‍্যাক্টিস ছিল, বাসা ছিল, ছেলেমেয়েদের স্কুল কলেজ ছিল। কোভিড ভ্যাক্সিনের আগে ‘নীতি ভ্যাক্সিন’ তাই এদেশে বেশি প্রয়োজন। নীতির বিরুদ্ধে একটি ইমিউনিটি তৈরি হয়ে থাকলে দুর্নীতিতে আর অসুস্থতা লাগে না। তখন সহজে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায়। এখন ‘সৎ’ ও ‘বোকা’ সমার্থক শব্দ। ভদ্রলোক অবশ্য তার বিদায়ী ভাষণে নিজের ঘাড় নিয়ে গর্ব করেছেন। অসফলদের সততার গর্ব ছাড়া গল্প নেই!!!

এবরশন করার জন্য রোগী আসে। সে পুরনো প্রশ্ন মনে জাগে ঠিক না বেঠিক। যেকোনো রিলেশনশিপকে অবশ্যই প্রয়োজন মেটাতে হবে। এর জন্যই মানুষ রিলেশনশিপে যায়। তত্ত্বীয় কথাবার্তায় কিছুই সিদ্ধ হয় না। এটি ভাল’র চেয়ে খারাপ করে বেশি। যতদিন পূর্ণাঙ্গ ভাল না আসছে আধাখেঁচড়া ভাল দিয়ে মন্দের সাথে লড়াই না করা ভাল।

আমেরিকার নির্বাচনের ডামাডোল শুরু হয়ে গেছে। এটি আরেক অলিম্পিক। বিচিত্র সার্কাসের মাধ্যমে সারা পৃথিবীকে আনন্দ বিলোতে থাকে। তাদের প্রতীকও সব বুনো ধরনের। হাতি ও গাধা। ভারতের কংগ্রেস পার্টি ইন্দিরা গান্ধীর সময় ভেঙ্গে গেল। উনি উনার অংশের প্রতীক ঠিক করলেন গাই গরু সাথে বাছুর। ইমার্জেন্সি প্রিয়ডে এটিই কংগ্রেসের মুখচ্ছবি হয়ে উঠলো। লোকজন বলতে থাকলো এখানে গাইগরু হচ্ছে ইন্দিরা গান্ধী আর পাশের বাছুরটা ছোটছেলে সঞ্জয় গান্ধী। রাগে দুঃখে ইন্দিরা দেবী প্রতীকটিই বদলে নিলেন। রাখলেন হাতের তালু। এখনো তাই রয়েছে।

মার্চের পর আর বাসায় যাই নি। পিপিই গ্লাভস ফেসশিল্ড পরি না- সে আমার আয়ুরেখা অত্যাধিক বড় বলে। সবার তো আর আমার মতো হস্তরেখা নয়! মা বাসায় যেতে বলে। আমি বুঝাই, উদাহরণ দেই। অমুকের বাপের অকালমৃত্যুর উদাহরণ, তমুক মেসোর রোগের সাথে সংগ্রামের উদাহরণ। সব শুনে বুঝে মা আরো দ্রুত যেতে বলেন! আমি আবার বিপদ-আশঙ্কা-ঔচিত্যবোধের প্রশ্ন তুলি। কিন্তু এভাবে কতদিন!

শুনেছি যতদিন নিজের মা বেঁচে ছিল ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ততদিন সন্ন্যাস ধর্ম গ্রহণ করেন নি। আমি তো তুচ্ছ। সকাল বেলায়ই বাসে চেপে ঢাকায় চলে আসলাম। ঢাকা বদলে নি। সে আগের মতো আছে। জ্যাম কোলাহল গন্ধ..!

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

কোভিড-১৯: আরো ৩৭ জনের মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ১৬৬৬ জন

Wed Sep 23 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এ নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১,৬৬৬ জন, মৃত্যুবরণ করেছেন আরো ৩৭ জন এবং আরোগ্য লাভ করেছেন ২,১৬৩ জন। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগী ৩,৫৩,৮৪৪ জন, মোট মৃতের সংখ্যা ৫,০৪৪ জন এবং সুস্থ হয়েছেন মোট ২,৬২,৯৫৩ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo