প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৪ মে ২০২০, সোমবার
ডা. শুভদীপ চন্দ
ষোড়শ শতাব্দীতে রোমসম্রাট প্রথম ফার্দিনান্দ বলেছিলেন- ‘পৃথিবী রসাতলে যায় তো যাক, ন্যায্যতা যেন প্রতিষ্ঠিত হয়’। তিনি ভাবেন নি পৃথিবী যদি সত্যিই রসাতলে যায় ন্যায্যতা কে ভোগ করবে। এ শতাব্দীতে আমাদের চিন্তার আরো অবনমন ঘটেছে। ‘পৃথিবী রসাতলে যায় যাক, সুনাম যেন প্রতিষ্ঠিত থাকে’। বিএসএমএমইউ-র একটি নতুন নোটিশ দেখলাম। এরকম নোটিশ এদেশে প্রথম নয়। কেউ যেন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে স্ট্যাটাস না দেন, মিডিয়ায় কথা না বলেন। বিনা চিকিৎসায় বা অপচিকিৎসায় লোক মরে তো মরুক- সুনাম যেন ক্ষুন্ন না হয়।
পরে এ লোকগুলোই মরার জন্য ‘বিদেশ’ খুঁজবে। এদেশের কর্তৃপক্ষ কারো ছেলেমেয়েই দেশে পড়ে না, কেউ চিকিৎসা নেয়ার জন্য দেশীয় স্বাস্থ্যসেবার উপর নির্ভর করে না। কারন তারা জানেন এগুলোর আসল রঙ কী। কোভিড উনিশ এ ভগ্ন প্রতিষ্ঠান গুলো কত দুর্বল তা প্রকাশ করে দিচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে মিথ্যের উপর দাঁড়িয়ে আছে একেকটি বিল্ডিং। নানান জনের স্ট্যাটাস গুলো ক্রমেই সেসব উন্মোচন করছিল। তাকে দমন করার এর চেয়ে ভাল উপায় আর নেই।
যে এমপি লোকাল উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে ছড়ি ঘুরান, উনি সেখানে চিকিৎসা নেন না। যাদের সাইনে এরকম অর্ডার বের হয় তারাও এদেশীয় কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা নেন না। নিলেও একদম সর্বোচ্চ খরুচে বেসরকারি হাসপাতাল- যেখানে তাদের অর্ডার ফলো হয় না। যেগুলোর মেশিন কেনায় তাদের হাত নেই। এরকম ভুড়িভুড়ি উদাহরণ দেয়া যাবে, কিন্তু আমাদের হাত বাধা। ডায়েরি লেখার সৎ সাহস বা সৎ পরিবেশ এদেশে কিছুই নেই।
আজ ঢাকায় বের হয়েছিলাম খুব অল্প সময়ের জন্য। আমার এতদিনের চেনা শহর সম্পূর্ণ অচেনা। অবিশ্বাস আর ভয়ের অবগুন্ঠনে ঢেকে আছে পুরো শহর। ঢাকা মেডিকেলে চাকরি করে এক ছোটভাইয়ের সাথে কথা বললাম ভয় নিয়ে। যত দূরত্ব থেকে কথা বললে সে ‘এভোয়েডেন্স’ গায়ে মাখবে না- তত দূর থেকে। সারভাইবাল তত্ত্ব, নিউরোট্রান্সমিটারে অসাম্য, আর অরিজিনাল সিন- ভূপৃষ্ঠের আস্তরণ তুলে সে যুগে পৌঁছে দিচ্ছে যখন ‘সভ্যতা’ শব্দ পৃথিবীতে আসে নি। শেষ বুলেটটাও এখন আর কেউ নিজের জন্য রাখবে না। ওখানে আমার স্বজনহীন নিরুপদ্রব জীবন আর এখানে বৃদ্ধ বাবা মা সহকারে নিষ্ঠুর বাস্তবতা- এক আকাশের নিচে দুই ভিন্ন পৃথিবী।
যখন কর্তৃপক্ষ আপনাকে নিয়ে ভাবছে না, আপনি দ্বিতীয় কোনো কর্তৃপক্ষকে নালিশ জানাতে পারছেন না, যখন আপনার হারানো শুধু আপনারই হারানো, যখন ‘মনস্টার’ ভয় দিয়ে কিছু সুন্দর সুশীল কথায় আপনার বাঁচার অধিকারকে অনবদমন করা হচ্ছে- তখন এসব ‘মোরালিটি’ জাস্ট দূরে সরিয়ে রাখুন। ঘরে বন্দী, হাত মোজা ও মুখোশে ঢাকা এ শহরে মানবিকতা খুঁজতে যাওয়ার মাঝে কোনো সততা নেই। পাপ আছে। যারা হারালো তারা কি পেলো? হিসাব করুন- ডাক্তার, নার্স, পুলিশ কতজন আক্রান্ত হয়েছে আর নীতি নির্ধারক কতজন আক্রান্ত হয়েছে? কতজন ইউএনও, কতজন সচিব, কতজন নেতা? কতজন গার্মেন্টস কর্মী কতজন গার্মেন্টস মালিক? ভাল ভাল মাস্ক সব কোথায় গেলো?
‘হিস্ট্রি ইজ রিটেন বাই দ্যা ভিক্টরস’। কেউ দেখতে আসবে না ভিক্ট্রি-টা কিভাবে এলো!
আমার বিবেচনায় জেলা শহর ঢাকা শহরের তুলনায় এগিয়ে আছে। পরশুর জন্য গাড়ি ভাড়া করেছি। এটি বেটার এখান থেকে পালানোর! এটি সময়- ভালো রাস্তা থেকে মন্দ রাস্তায় ইউ-টার্ন নেয়ার!