প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১০ মে ২০২০, রবিবার
ডা. শুভদীপ চন্দ
আজ সকাল থেকে কারেন্ট নেই, পানি নেই, রান্নার গ্যাস ফুরিয়ে গেল। এদিকে বাইরে লকডাউন। ফেসবুকে পড়লাম সাতক্ষীরার এক ডাক্তারের লেখা পোস্ট। সরকারি ডাক্তার। এক ফার্মেসী দোকানদার তার গায়ে হাত তুলেছে। সিভিল সার্জন জানে, আরএমও জানে। ‘ছোট মানুষ’ মার খেয়েছে- কেউ পাত্তা দেন নি! তাদের ছেলে বা শালা নয়তো- পাত্তা কেন দিবেন? তবুও মানুষ সরকারি চাকরি করে। দ্বিগুণ তিনগুণ পাঁচগুণ বেতন ছেড়ে মানুষ সরকারিতে আসে। কারন বেসরকারি সেক্টরের অবস্থা আরো খারাপ। সরকারিটা খোলা বলে দেখা যায়, গন্ধ কিছু কম। বেসরকারিটা পুরো গাটার। যেমন নোংরা তেমন গন্ধ। ধারি ধারি ইঁদুর- সেমি পার্ভাট, হাফ পার্ভাট, ফুল পার্ভাট।
কোভিড উনিশ এসেছিল বলে আমরা সব দোষ হয়তো এর ঘাড়ে চাপাতে পারবো। কিন্তু আমরা জানি আমাদের মূল সমস্যা করোনা নয়, আমাদের মূল সমস্যা দারিদ্র্য। আমরা পরিসংখ্যানে আক্রান্ত ও মৃতের দিক থেকে উপরে নই। কিন্তু আমরা বিপদগ্রস্ত। কারন আমরা গরিব। এ করোনার দিনেও সরকারি হাসপাতালে অনেক লোক আসে শুধু ফ্রি ঔষধ নিতে। রতন টাটা একবার বলেছিলেন- ‘উই আর পোর, বিকজ উই আর হ্যাবিচুয়েটেড টু বিং পোর’। সমস্যা এই হ্যাবিচুয়েশন। অভ্যস্ততা। বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস না থাকা, ডাক্তারের মার খাওয়া, বা ফ্রি ঔষধ নিতে ভীড় করা- সব এ হ্যাবিচুয়েশনের ফসল।
এ শহর নীরবে লকডাউন ত্রিশ দিন পার করলো। পৃথিবী প্রায় ছয়মাস। এখনো পর্যন্ত কার্যকরী কোনো ঔষধ নেই। বাংলাদেশ আবারো তার রোগী ছাড়ার ক্রাইটেরিয়া বদলেছে। এখন পরপর তিনদিন সিম্পটম ফ্রি হলেই ছেড়ে দিবে। আগে দুইটি নিগেটিভ রিপোর্ট করতে হতো। চিকিৎসার ক্ষেত্রেও সেন্টার টু সেন্টার ভ্যারিয়েশন আছে। কোথাও স্ট্রিক্টলি গাইডলাইন ফলো করা হচ্ছে। কোথাও ইমপ্রোভাইজ করা হচ্ছে। নতুন নতুন দেশ ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করার ঘোষণা দিচ্ছে। মহাকাশ যুদ্ধের মতই চীন আমেরিকার রশি টানাটানি। আমরা দর্শক। সেহরি খাই, রোজা রাখি, ইফতার করি। মনেমনে প্রার্থনা করি যেন দ্রুত কোনো সমাধান বের হয়।
এ লকডাউনে সবচেয়ে বেশি কাজে এসেছে ম্যাসেঞ্জার। আমি দেখেছি তার সাথেই কথা বলে আনন্দ যে কম জানে, কম বোঝে। অন্তত যে কমের ভান করতে জানে। মানুষ জ্ঞান বা সৌন্দর্য দেখে প্রেমে পড়ে না। প্রেমে পড়ে কমপ্যাটিবিলিটি দেখে। এ কমপ্যাটিবিলিটি বেশির সাথে কমের কমপ্যাটিবিলিটি।
চোখের জল তো আর চোখে ফেরত দেয়া যায় না। চোখের জলের দায় শোধ হয় তখন যখন তার জন্য আরো চোখের জল নিঃসরণ হয়। এ কোভিড উনিশ যদি আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিকল্পিত না করে, তবে সময় সব ‘অপচয়’ হয়েই থাকবে।
এখন লেখার কিছু খুঁজে পাই না। ঘর থেকে বের হই না, কিছু দেখিও না। যদি লেখা বন্ধ করে দেই- এর কারন বিধিনিষেধ নয়, দোয়াত কালির অভাব।