লাইফ ইন লকডাউন, ডে থার্টি নাইন

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৭ মে ২০২০, রবিবার
ডা. শুভদীপ চন্দ

এখন সোশ্যাল মিডিয়া আর ভাল লাগে না। ম্যাসেঞ্জার চ্যাট একঘেঁয়ে ও বিরক্তিকর। কারো অভিজ্ঞতা শোনা বা ছবি দেখার আগেই ‘লাইক’ দিয়ে দেই। কোভিড আমাদের কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলা মুশকিল।

মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেল্লা বলেছেন- তার প্রতিষ্ঠান দেখছে দুই বছরের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন দুই মাসেই হয়ে গেছে। কথা মিথ্যে নয়। আমরাও টের পাই। মা এখন টিভি ছেড়ে ইউটিউবে উত্তম সুচিত্রার সিনেমা দেখেন। বাবা ব্লগ খুলে ব্লগে লিখেন, মর্জিমাফিক পত্রিকা পড়েন। বোন এটা ওটা বানাচ্ছেই। ইন্টারনেট সবকিছু হাতের নাগালে আগেই এনে দিয়েছিল। কোভিড উনিশ বাধ্য করলো সব ছুঁয়ে দেখতে।

অনেক ডাক্তার অনলাইনেই চিকিৎসা দিচ্ছেন সাথে ভিজিট নিচ্ছেন। এক বড়ভাই অনলাইনে ইসিজি ক্লাসের ব্যবস্থা করেছেন। কখনো করি নি অবশ্য। ঝিম মেরে বসে থাকি সারাদিন। আসল কথা অভ্যস্ততা। সে গোস্বামী পরিবারের মতো। গোস্বামীর গিন্নি এসে বললেন- ‘ওগো শুনছো, আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে। তুমি যাকে বিশ্বাস করে ব্যবসার দায়িত্ব দিয়েছিলে সে আমাদের সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে’। গোস্বামী বই পড়ছিলেন। একটু ভেবে বললেন ‘ও আচ্ছা’, তারপর আবার পড়া শুরু করলেন। গিন্নি বললেন ‘ওগো, তোমার কী তাতেও টনক নড়বে না?’ গোস্বামী বললেন- ‘তুমিও সব হারানোয় স্বাভাবিক হবে, সে ত্রিশ বছর পরে। আমি তিন সেকেন্ডেই মেনে নিয়েছি। তোমার সে মানতে লাগবে ত্রিশ বছর। আলাদা কিছু না।’

হয়তো আমাদের গন্তব্য এক, আমরা কেউ কেউ সময় বেশি নিই। আমি সে গোস্বামীর বৌ-য়ের মতো। ত্রিশ বছর ধরে ভেবে চলব- কি ঘটলো, কেন ঘটলো, কিভাবে ঘটলো, কোথায় ঘটলো!

আজ কিছুক্ষণের জন্য বেরিয়েছিলাম বাজার করতে। বাজার নিয়ে আমার মূল্যায়ন হচ্ছে- বিক্রেতার উপর ভরসা করলে ওরা খারাপ জিনিস দেয় না, বেশিরভাগ ভাল গুলো তুলে দেয়। আর আমার বাজার নিয়ে বাসার লোকদের মূল্যায়ন হচ্ছে- আমি বাজারে ঢুকলে সবাই কাড়াকাড়ি করে বোকাটাকে ঠকানোর জন্য! দেখলাম বাজার দিয়ে রান্নাঘর সন্তুষ্ট করা প্রায় অসম্ভব। প্রায় অসম্ভব- সবরকম তুলনা চলে। ‘আজকের আলু ভাল না, গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহের আলু ভাল ছিল!’ গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহের আলু আজ কই পাব? আর ‘বুড়া’। লাউ নাকি আমার চেয়ে বুড়া!! আমি বুঝি না- লোকগুলো এ সবজি গুলো আগেই কেন বাজারে তুলে না। বুড়া তো কচি পার না হয়ে হয়নি। এদিক দিয়ে ভাবলে মাছ বাজার করা ভাল। কেউ বুড়া বলে না। ‘বুড়া রুইমাছ আনছে’ কেউ বলবে না। বড় অথবা ছোট। সমস্যা হচ্ছে মাছের নাম মনে রাখা বেশ কঠিন।

শহরে এখন মিশ্র অবস্থা। কিছু খোলা, কিছু বন্ধ। শপিংমল বা মার্কেট সব বন্ধ। এক বন্ধুর মোবাইল ব্যবসা। বললো- জরিমানা দিলে দিব, দোকান খোলা রাখব। জিজ্ঞেস করলাম- কত জরিমানা ধরে? বললো- ‘দুইহাজার, চার হাজার, পাঁচ হাজার। দোকানের উপর।’ সবাই তাই দোকানের ভিতরের পাশাপাশি বাইরেও তীক্ষ্ণ নজর রাখছে। ক্রেতা কিংবা ম্যাজিস্ট্রেট- দুটোই আগে ট্রেস করার চেষ্টা করছে। রাস্তায় অনেক লোক। তুলনামূলক রিকশা কম। পুলিশ অত্যন্ত সজাগ। পুলিশ যেদিকে থাকে রিকশা সেদিকে যায় না। অনেক ঘুরপথ হয়ে যায়।

দোকানের সামনে ফুটপাত রাঙানো হচ্ছে লাল রঙে। কোথাও বৃত্ত, কোথাও চতুর্ভুজ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশাবলি সবাই লেমিনেশন করে ঝুলিয়ে রেখেছে। মাস্ক পরিহিত প্রায় একশো শতাংশ। তীব্র গরমেও কেউ কেউ পিপিই পরে ঘুরছেন। অনেকে মাস্ক দিয়ে থোতা ঢেকে হাতে গ্লাভস পরে আছে। অনেক ঔষধের সাপ্লাই নেই। সারাদিন ফোন আসে এ ঔষধ পাচ্ছি না ও ঔষধ পাচ্ছি না। এতো ছোট খাটো কারনে লোকজন ফোন করে, অবিশ্বাস্য!

ভারতে শত শত মাইগ্রেন্ট শ্রমিক শত শত হাজার হাজার মাইল হেঁটে পাড়ি দিচ্ছেন- নিজ গাঁয়ে পৌঁছাবেন বলে। পথে দুর্ঘটনায়, তেষ্টায়, অসুখে মারা যাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় সরকার প্রাদেশিক সরকার তাদের জন্য ব্যবস্থা করছে, কিন্তু তারা সেগুলোকে যথেষ্ট মনে করছেন না। তারা দ্রুতই প্রিয়জনের কাছে ফিরতে চান। সম্ভবত এ প্যান্ডেমিকের সময় এটিই সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। এর সমকক্ষ বেদনার্ত আর কোনো গল্প নেই!

সিটি অফ জয়- উপন্যাসের শেষ পৃষ্ঠার কথা মনে পড়ল। কলকাতা শহর। হঠাৎ এক সকালে পুরো বস্তি জুড়ে হৈ হুল্লোড়। আনন্দ হচ্ছে, বাদ্যি বাজছে, আতশবাজি পুড়ছে। লোকজন গান গাচ্ছে, চিৎকার করছে, একে অপরকে অভিনন্দিত জানাচ্ছে, হাত তালি দিচ্ছে, নাচছে। উপন্যাসের নায়ক একজন আমেরিকান চিন্তা করছেন আজ কি দিন; কোনো রাষ্ট্রীয় দিবস, উৎসব, অর্জন- কিছুই তো নেই। তবে?

ঘর থেকে বের হয়ে জানলেন- প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কিছুক্ষণ আগে ঘোষণা দিয়েছেনঃ ভারত আজ সকাল থেকে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ…!!

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

বিএমএএনএ (BMANA) এর আয়োজনে কোভিড-১৯ বিষয়ে অনলাইন প্যানেল ডিসকাশন

Sun May 17 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৭মে ২০২০, রবিবার বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকা এর নিউ ইয়র্ক চ্যাপ্টার (BMANA) এর আয়োজনে কোভিড-১৯ বিষয়ে ইন্টারেক্টিভ প্যানেল ডিসকাশন অনুষ্ঠিত হবে আজ ১৭ মে বাংলাদেশ সময় রাত ১০.০০ ঘটিকায়। অনুষ্ঠানের অতিথিদের হিসেবে বক্তব্য রাখবেন, জন হপকিনস স্কুল অফ পাবলিক হেলথ্ এর প্রফেসর সাইফুদ্দিন আহমেদ, এমবিবিএস, পিএইচডি; […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo