প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১২ মে ২০২০, বুধবার
ডা. শুভদীপ চন্দ
‘কাকে ফোন দিবেন? ফোন দেন’ – বলছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব। আরেকজন কুঁজো হয়ে লিখছিলেন। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশরাই নির্দেশনা দিচ্ছিল। নিউ ললিতা ফার্মেসিকে যখন ফাইন করে তখন আমি সেখানে। দীর্ঘ চল্লিশ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে একটু ফাঁকা হওয়ার অবসর খুঁজছি। সামাজিক নৈকট্য এতই বেশি শ্বাস নিতে ভয় হয়। এর আগে সম্ভবত মিষ্টি পল্লিতে রেইড হয়েছে। পরে দেখলাম তারা সামাজিক দূরত্ব নিয়ে খুব সচেতন ভঙ্গিমায় আছেন!
সর্বশেষ বেড়িয়েছিলাম এক সপ্তাহ আগে। আজ রাস্তায় পা দিয়ে মনে হলো যেন ঘুম থেকে জেগে উঠেছে শহর। বুকশপ, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, কাপড়ের দোকান, ফাস্ট ফুড শপ, রেস্টুরেন্ট, মিষ্টির দোকান, ফার্নিচারের দোকান, জুতার দোকান, কসমেটিকস শপ, মোবাইল ডিসপেনসারি- সব খোলা। ভ্যানে করে আনারস, লিচু, তরমুজ, আম, বাঙ্গি, কলা, খেজুর বিক্রি হচ্ছে। অসংখ্য মানুষ রাস্তায়। এতো বেশি মানুষ যে রিকশা পাওয়া যাচ্ছে না। চিরচেনা রমযানের খাবার দোকান ঢেকে রাখা নেই। গাড়ি স্টার্টিংয়ে লোকলজ্জা মেনে আলতো করে কিক দিলে হয় না, জোরেই দেয়া লাগে। সবার মুখে মাস্ক, প্রায় একশো শতাংশ।
প্রয়োজনহীন মানুষ বেড়িয়েছে আমি বিশ্বাস করি না। প্রশাসন-পুলিশ-ডাক্তারের আন্তরিকতার অভাব নেই। তবুও আমরা যুদ্ধটিতে ভাল করছি না। ‘দেয়ার আর নো বিগ প্রব্লেমস, দেয়ার আর জাস্ট লট অফ লিটল প্রব্লেমস’- হেনরি ফোর্ডের এ শিক্ষাটি আমরা নিতে পারছি না। সবার সমস্যা আলাদা আলাদা, এক ঔষধে সারবে না। ছোট ছোট ইউনিট ধরে এগোতে হবে। আইন নিউ ললিতা ফার্মেসির কাস্টমাররা ভেঙ্গেছে, কিন্তু জরিমানা ফার্মেসি দিয়েছে। মানুষ লাইন ধরে ট্রেনের টিকিট কিনতে পারে, সহজলভ্য ঔষধ কিনবে না। আবার লাইনে দাঁড়াতে গেলেও সামাজিক দূরত্ব ঠিক রাখা সম্ভব হয় না। যে দেশের মানুষ ‘স্বাস্থ্য’ কী তাই জানে না, সেখানে ‘স্বাস্থ্যবিধি’ শেখানো শুধু অন্যায় না, শাস্তিও বটে!
শুনেছি ডিজি স্যার আক্রান্ত হয়েছেন। বনে দাবানল হলে শুধু শুকনো পাতা না ভেজা পাতাও পোড়ে। উনার সুস্থ হওয়া খুব জরুরি। আজ ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল এর জন্মদিন। ইন্টারন্যাশনাল নার্সেস ডে। এ কোভিড উনিশের সময় আমাদের দেশের নার্সরা কিভাবে জীবন যাপন করেছেন লিখে রাখা জরুরি ছিল। উনাদের আমার পাতার আড়ালে লুকানো ফুল মনেহয়। যার উপর সকালবেলার স্নিগ্ধ আলো কখনো পড়ে না। তাদের গুরুত্ব শুধু তারা বোঝেন যারা ফুলের আসল সমঝদার।
চীনের উহান প্রদেশে নতুন করে করোনা পজিটিভ আসার পর তারা পুরো শহরের করোনা টেস্ট আবার শুরু করতে যাচ্ছে। এক কোটি দশ লক্ষ লোকের করোনা টেস্ট করবে, সেও দশ দিনে। গতবছর জার্মানিতে এক সেমিনার হয় সেখানে বাংলাদেশ থেকেও কার্ডিওলোজিস্টরা গিয়েছিলেন। সেখানে এক বিখ্যাত প্রফেসর বলেছেন- ‘সামনের দশকগুলোতে যাদের অর্থ আছে তারা মরবে না’। আসলেই মনেহয় তাই ঘটতে যাচ্ছে। উহান প্রদেশের জন্য করোনা প্রথমবার ঝাটকা ছিল, এখন আর নয়। সব উন্নত দেশের জন্যই তাই হবে। আমাদের হবে ডেঙ্গুর মতো, ডায়রিয়ার মতো, ম্যালেরিয়ার মতো। আমরা রাস্তার খানাখন্দের মতো এড়িয়ে বাঁচবো।
এ নিয়মিত লেখাটি বন্ধ করে দিব কিনা ভাবছি। নতুন কিছুই তো লিখছি না। এক বন্ধু বললো- মানুষ বইয়ের দোকানে গিয়ে পড়া বইয়ের নামটিই প্রথম পড়ে, মন্দিরে গিয়েও চেনা লোকের নামফলক প্রথম খোঁজে।
প্ররোচনা যতই কুযুক্তিপূর্ণ হোক উপমার আতিশয্যে ভাল শোনায়। যেমন অলংকার একটু অপছন্দনীয় চেহারাকেও পছন্দসই করে তোলে।
তাই আপাতত লেখার ধারায়ই থাকছি।