১০ এপ্রিল ২০২০:
ডা. শুভদীপ চন্দ
এটা সময় আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব সবাইকে ফোন দেয়ার। এটা সময় প্রিয় কিছু মানুষের সাথে আরেকটু বেশি সময় কাটাবার। এটা সময় সব ব্রাউজ হিস্ট্রি ডিলিট করে দেবার। এটা সময় মোবাইল ফোনে নিজের গান কবিতা ভিডিও করে রাখার। কারো কারো জন্য চিঠি লিখে কাঠের বাসকে রেখে দেবার। এটা সময় গাঁজায় টান দেবার, দিনরাত সিগ্রেট খাওয়ার, গভীর আবেগে কাউকে পিষে ফেলার। এটা সময় ফুল ভল্যুমে বাঁচার। এটা সময় বর্তমান নিয়ে বাঁচার।
আমরা মারা যাচ্ছি। এ কথাগুলো বলার ‘সময়’ হয়তো থাকবে না। আমাদের প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১২০০ লোকের বাস, আমাদের ইমিউনিটি দুর্বল- অন্য দেশে যখন বৃদ্ধরা মারা যাচ্ছেন আমাদের মারা যাচ্ছেন সব বয়সে। আমাদের এতো ভেন্টিলেটর নেই। পরীক্ষামূলক ঔষধ নেই। নেই সচেতনতা। আমাদের টয়লেট কমন টয়লেট, বাসাবাড়িতে এতো রুম নেই- সবাই মিলেমিশে থাকা। সংখ্যাটি এখন তাই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে। দ্বিগুণ হবে, তিনগুণ হবে, ডান পাশে একটি করে অঙ্ক যোগ হবে। আমাদের দিয়েই হবে। নামগুলো আমাদের থাকবে। ইতালি ফ্রান্স আমেরিকার খবর এখন আর নিই না। পাশের পাড়ায় একজন মারা গেছেন, অপেক্ষা করছি তার রিপোর্টের।
মৃত্যু কী কখনো সুন্দর হয়? হয়তো হয়- যখন প্রস্তুতি থাকে। জিনিসটা নিয়ে আরো বেশি ভাবা উচিত, আরো বেশি বলা উচিত। এটা সময় প্রস্তুতির। এটা সময় অপেক্ষার। অপেক্ষা উষ্ণ তাপমাত্রার। অপেক্ষা গলা ব্যথার, কাশির, শ্বাসকষ্টের। ভেবেছেন কখনো- আমরা কিছুদিন পর কারো ছেলে হয়ে থাকব না, ভাই হয়ে থাকব না, প্রেমিক হয়ে থাকব না, বাবা হয়ে থাকব না! একটি নাম্বার। জাস্ট একটি নাম্বার হয়ে থাকবো।
কখনো কী হাসপাতালে ক্যান্সারের রোগী দেখেছেন? যখন ডাক্তার প্রথমবার বলেন- ‘রোগটা ক্যান্সার’! বা কখনো শুনেছেন- যখন ডাক্তার বলে ‘আপনার সামনে দুইটি পথ আছে। আমরা চিকিৎসাটি কন্টিনিউ করতে পারি- যদিও বলতে পারছি না খুব বেশি উন্নতি হবে। অথবা আপনি বাসায় চলে যান। যে ক’দিন হাতে পান ফ্যামিলির সাথে থাকুন।’ তখন ডাক্তারের ঠিক অপর পাশের ব্যক্তিটির কেমন অনুভূতি হয়!
মাঝে মাঝে মনেহয় সে সময়টা পার করছি। উই নো আউয়ার ফিউচার! আমরা জানি যে আমরা মারা যাব। কেউ আগে কেউ পরে। কোভিড উনিশ আসার আগে এ মৃত্যু নিয়ে এভাবে ভাবতে হয় নি। চারপাশে যে বক্স আছে সে বক্স ভাঙ্গতে হয় নি। এখন মনে হয় কী হবে আর বক্স রেখে, যদি ভিতরের মানুষটিই না থাকে! খুব সম্ভাবনা আছে এ দেশ তামা তামা হয়ে যাওয়ার।
আর কী হবে সব ধরে রেখে?
চলুন কিটক্যাটের মতো করে পার্সোনাল কারাগারটা ভেঙ্গে দিই…।