প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১২ জুলাই ২০২০, রবিবার
ডা. শুভদীপ চন্দ
এ পৃথিবী তাদের- যারা দশজনের সাথে কথা বলতে পারে, চিৎকার করে গান গাইতে পারে, মুখ ফুটে গালি দিতে পারে। অথচ আরও এক ধরনের লোক আছে। যারা ভাবতে জানে, বলতে জানে, অথচ নিজের তৈরি গণ্ডি পার হতে জানে না। বড়জোর শেয়ার করে। ইনবক্সে নক করে। লাইক দেয়।
সে মহাসাগরের মতো। সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে গভীর। ভিতরে অনবরত ভাঙ্গা গড়া চলছে, বাইরে সুন্দর-শান্ত-স্নিগ্ধ রূপ। গভীরের ঝঞ্জা বিক্ষুদ্ধতা বাইরে বেরোয় না। উপরের শান্ত-স্থির রূপের জন্য তার নাম ‘প্রশান্ত মহাসাগর’ The Pacific Ocean। এখানে চার ভাগ পৃথিবীতে তিনভাগ জল। অথচ আমরা পৃথিবী বলতে শুধু মাটি বুঝি, পানি বুঝি না। অনুভূতি স্পষ্ট করে শেয়ার না করা এ লোকগুলো পানির ভাগ।
একজন বৃদ্ধা রোগী এসেছিলেন। ডাক্তাররা বিরক্ত, উনি কোনো প্রশ্নের উত্তর দেন না। রোগীর লোকেরাও বিরক্ত, তিনি কারো সাথে কথা বলেন না। রোগী সহযোগিতা না করলে কি করে চিকিৎসা হয়? সিনিয়র ডাক্তার এলেন, আলতো করে হাতের উপর হাত রেখে বললেন- ‘মা, বলুন তো- আপনার কি কষ্ট…?’ বৃদ্ধার দুই চোখের দুই জলধারা মুহূর্তে কান পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছালো। অস্ফুট স্বরে কী বললেন কিচ্ছু বোঝা গেল না!
মানুষের কথা না বলতে পারার একটি কারন যে ‘অভিমান’, সে কোনো মেডিকেল বইয়ে লেখা নেই। বিশ্বাস করুন, হাতে হাত রেখে একটুখানি চাপ- পৃথিবীর কঠিনতম তালাও নিমিষে খুলে ফেলে।
ইন্ট্রোভার্টরা এ অদৃশ্য দেয়াল ভেঙ্গে, অভিমান দূরে ঠেলে, লোক লজ্জা কাটিয়ে- যেদিন লিখবে; নিজেদের ভাবনা গুলো ছবিতে রূপ দিবে- আমরা সত্যিকার নোনা জলে ভাসবো। দেখে দেখে ভেবে ভেবে নয়, সত্যিকার ফিল করে লেখা। সেখানে আংশিক নয় পুরোটা সত্য। জমে থাকা কথাও একসময় বাসি আবর্জনার মতো গন্ধ ছড়াতে থাকে। কোনো কথা বলার জন্য আগে বা পরে নয়, বর্তমানটিই সঠিক সময়। হেরে যাওয়ার ভয়ে আগেই হেরে থাকা লোকগুলো একদিন বুঝবে। তারা আর কারো মুখের দিকে নয়, অস্পষ্ট লক্ষনের দিকেও নয়, নিজের মাইক্রোফোন নিজের মুখে ঠেকিয়ে বলবে।
মাছেরা যেদিন কথা বলতে শিখবে অনেক গল্পই অন্যভাবে জানা হবে। তারা বলছে না, নিজের জগত নিয়ে আছে। তারা লেখুক। অপর পৃষ্ঠার চিঠিটাও আমরা পড়ি।