১২ এপ্রিল, ২০২০:
ডাঃ শুভদীপ চন্দ
ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়াচ্ছে দাবানলের মতো। এখন প্রায় সব মানুষ জানে বায়ো-ওয়েপেনের কথা, রহস্যজনক ভাবে চীনের সাংহাই ও বেইজিং শহর করোনা শুন্য হয়ে থাকার কথা, মার্কিন আধিপত্যের সূর্য চীনের প্রাচীরে ঢেকে যাওয়ার কথা। এখানে বেশিরভাগ মানুষ বিশ্বাস করছে এটি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের একটি কৌশল। অসহায় বৃদ্ধদের কষ্ট লাঘবের একটি উপায়। যেখানে বিল গেটস থেকে শুরু করে পৃথিবীর আরো কিছু মাথা জড়িত আছেন। ষড়যন্ত্র তত্ত্বের একটি ভাল দিক আছে! এটি ‘আমরা’ ও ‘তারা’ তৈরি করে। এ বিপদের দিনে ‘আমি একা নই’- এর চেয়ে বড় সাহস জাগানিয়া ফিলিংস আর কিছু নেই।
আমাদের এম্বুলেন্স দেওয়া হয়েছে। শহরের স্টাফরা এখন এম্বুলেন্স-এ উঠে বসি। ফাঁকা রাস্তায় আমাদের গাড়ি চলে সাঁইসাঁই করে। গাড়ির ভিতরে ছয়টি মানুষ। সবাই মাস্ক পরে বসে থাকেন। খুব বেশি কথা হয় না। সবাই উদ্বিগ্ন, কারো কাছে উত্তর নেই। কেউ জানে না সামনে কী দিন আসছে। আর কয়দিন পরই রমযান। এ পবিত্র মাস সম্ভবত এর চেয়ে বেশি আন- ওয়েলকামড অবস্থায় আসে নি!
এদিকে ইপিআই শিডিউল বিপর্যস্ত হতে চলছে। আমাদের টিকাদান কর্মসূচি দুই ভাবে হয়। একটি ফিক্সড সেন্টারে, অন্যটি আউটরিচ-এ। আউটরিচ মানে অস্থায়ী সেন্টার। এটি সাধারণত কমিউনিটির কারো বাড়িতে বা হাটবাজারের পাশে হয়। করোনার ভয়ে আউটরিচে ভ্যাক্সিন পারমিশন দেয়া হচ্ছে না। হেলথ এসিস্ট্যান্টরা ফিরে ফিরে আসছেন। এ শিডিউল ব্যর্থ হয়ে গেলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম করোনার চেয়েও ডেডলি ভাইরাসের সম্মুখীন হবে। আশার কথা- সবাই ঘুমাচ্ছে না।
কোভিড উনিশ একটি ভাল কাজ করেছে। আমাদের ‘বর্তমান’-এ ফিরিয়ে এনেছে। তার আগে আমরা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বাঁচতাম। জ্যামে বসে আমরা কখনো ক্যাকাফোনি শুনি নি আশপাশের মানুষ দেখি নি। আমরা জ্যামে বসেই ভাবতাম শুক্রবার ডিনার কোথায় করব, সামনের লম্বা ছুটিতে কোথায় বেড়াতে যাব, কিভাবে পদন্নোতি নিব, বিজনেস করব। আমাদের চোখ সবসময় দিগন্তে থাকতো। পায়ের নিচে গাছের ঝরা পাতার একটি শব্দ আছে- আমরা ভুলেই গেছিলাম!
এখন আমরা সব প্ল্যান বর্তমানকে ঘিরে করি। কাল বেঁচে থাকব কিনা জানি না, আজ বাঁচি। এখন আমরা জানি- এক নিউইয়র্ক স্টেটে আক্রান্তের সংখ্যা যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশে গতকাল ৬ জন রোগী মারা গেছেন। হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ঔষধটি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। দেশে টেস্টের সংখ্যা বাড়ছে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ভারতে আক্রান্ত একদিনে নয়শো ছুঁয়েছে।
রাস্তাঘাট ফাঁকা। আমাদের সারভাইভাল আমাদের এনজাইটি বাড়াচ্ছে। এভ্রিওয়ান হ্যাজ এ রোল ইন সোসাইটি টু মেক ওয়ান’স লাইফ মিনিংফুল। এ লোনলি শহরে সবাই সবার রোল খুঁজছে। ঘরে বসে মানুষ উত্তর পাচ্ছে না।
উসখুশ নিয়ে দিন শুরু, উসখুশেই দিন শেষ।