প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৮ মে ২০২০, বৃহস্পতিবার
ডা. শুভদীপ চন্দ
দি পোস্টম্যান অলওয়েজ রিংস টোয়াইস- প্রথমবার ইগনোর করতে পারেন, দ্বিতীয়বার নয়। আমাদের দেশে বহু বিত্তবান প্রভাবশালী হার্টের চিকিৎসায় সিংগাপুর আমেরিকা গিয়েছেন। এখন তারা দেশে মারা যাচ্ছেন ভাইরাল ফিভারে। যেকোনো মৃত্যুই হতাশার।
এক বাণী আছেঃ ”দুই জিনিস পৃথিবীর যেকোনো ছেলেকে পুরুষে পরিণত করে। প্রথমটি কোনো মেয়ের প্রতি ভালোবাসা, দ্বিতীয়টি আরেকটি পুরুষের প্রতি ঘৃণা।” আমাদের ভালোবাসার অভাব নেই, ঘাটতি দ্বিতীয়টির। এজন্য এদেশে ‘প্রেমিক পুরুষ’ আর ‘পুরুষ’ এক হয় না। এদেশে কেউ বলবে না ‘আপনি থামুন, আপনার গলায় গান নেই’। কেউ বলবে না ‘থামুন। ক্ষমতা আছে অর্থ আছে- আগে দেশে চিকিৎসা আনুন…।’
গতকাল পুরোপুরি উপজেলায় চলে আসলাম। কোভিড ডিউটি। যদিও উপজেলা হাসপাতাল গুলো মূলত ‘মারামারি ডেডিকেটেড’!! আমার বন্ধুভাগ্য ঈর্ষণীয়। আলাদা রুম নিলাম, চকি ম্যাট্রেস পড়লো, লাইট জ্বললো। কিন্তু এসে উঠলাম এক ছোটভাইয়ের রুমে। রান্না করতে পারা এক বড় গুণ, ক্ষুধা সহ্য করতে পারা আরো বড় গুণ। আমি দ্বিতীয় গুণে গুণী! সে গুণ দেখানোর আর প্রয়োজন পড়লো না। খুব ভাল খাচ্ছি।
এদিকে আমার সাবেক কলিগদের অবস্থা তথৈবচ। প্রতিদিনই নতুন নতুন কেউ করোনা পজিটিভ হচ্ছেন। অথবা তাদের পরিবার পরিজন। স্কয়ার হাসপাতালে চাকরি করে তারা সম্ভবত সুপেরিয়র কমপ্লেক্সিসিটিতে ভুগছিলেন। প্রোটেক্টিভ ব্যবস্থাগুলো পাত্তা দেন নি। ভ্যান্টিলেটর, কলাপস, জীবন মৃত্যুর সন্ধিকাল- তারা বহুবার দেখেছেন। তারা স্মার্ট, তবে এ যুদ্ধে যে যত পরে আক্রান্ত হবে সে কিছুটা হলেও তত বেশি স্মার্ট। দুঃখ লাগে এখন ওই ডিপার্টমেন্টে যতজন ডাক্তার আক্রান্ত আমার পুরো উপজেলা ও তার আশপাশ মিলেও ততজন নেই। গতকাল ইউনাইটেড হাসপাতালের ঘটনা শুনে খারাপ লেগেছে। এ হাসপাতালের ইমপ্রেশন আমার কাছে ভাল।
‘ডেইজ ইন লকডাউন, ডে ফোর্টি নাইন’ আমার গত পোস্টটির জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। হাসি উচ্ছ্বাস- প্রাণিজগতে ইউনিক কোয়ালিটি, আর ‘কান্না’- শুধু আর্লিয়েস্ট নয় মোস্ট বেসিকও বটে। সব ম্যামালই চিৎকার করে- ভয়ে অথবা ব্যথায়। একে নিয়ে আলাদা করে কাব্য করার কিছু নেই। আমি দুঃখের ছবি আঁকতে আঁকতে তাকে আরো দুঃখী করে দিয়েছি। কোনো রেখাকে না মুছে না কেটে না মিটিয়ে শুধু সমান্তরালে এক বড় রেখা এঁকেও তাকে ‘ছোট’ করে দেয়া যায়। আমি সে ভুলটি করেছি।
সম্ভবত লকডাউন উঠে যাচ্ছে। এ লেখাগুলো থেমে যাবে। এমনিই ব্যস্ততার জন্য সুযোগ পাচ্ছিলাম না। আর লেখাও বেয়ারা হচ্ছিলো- মাথার চুলের মতো। এখন আঁচড়ানোই বাদ দিছি। একেকটা একেক ডিরেকশনে গিয়ে প্যাঁচিয়ে থাকে। কখনো এমনিই দাঁড়িয়ে থাকে তাল গাছের মতো। পিপিইয়ি ভরসা!
কত কথা যে বলার ছিল! সব বলে সারতে পারলাম কই। যেমন ‘তার’ কথা। তার দাবিতে আবদার ছিল। অনুরোধ উপেক্ষা করা যায়, আবদার যায় না। আবদার হতে অনুরোধকে অনেক ক্রোশ পাড়ি দিতে হয়।
এক হ্যাঁ বাচক শব্দে ফর্সা গাল পুরো লাল হয়ে গেল। সূর্য যখন পাহাড়ে অস্ত যায়- আকাশে তার অনস্তিত্বেও লাল আভা থাকে, ঠিক সেরকম। তারপর একদিন সে চলেও গেল। দুঃখ পাই নি। শুধু ভাবছিলাম- আমাদের আর একসাথে ধানক্ষেত দেখা হবে না, নদীতে ভেসে বেড়ানো হবে না, ভীড়ের মাঝে দুজন হঠাৎ হাওয়া হয়ে যাওয়া হবে না। ভালোবাসা ও নির্ভরতা হাত ধরাধরি করে হাঁটে। আমি ‘নির্ভরতা’ নয়, ‘ভালোবাসা’ কে মিস করছিলাম। পাশে থাকা বা দূরে থাকা- কোনোটিই যেন অভ্যাস না হয়ে যায়…।