২৩ এপ্রিল ২০২০, বৃহস্পতিবার
ডা. শুভদীপ চন্দ
গতকাল হাসপাতালে রোগী দেখছিলাম। পিয়ন এসে এক প্লেটে কিছু ফল দিয়ে গেল। কখনোই দেয় না, কাল লোকাল এমপি’র হাসপাতালে ভিজিটে আসার কথা। হয়তো সে উপলক্ষে কিছু কেনা হয়েছিল।
সে সময়েই এক মধ্যবয়সী মহিলাকে দেখছিলাম। জীর্ণশীর্ণ, যেরকম হয় আর কী। গরিবীর বর্ণনায় বড়লোকি দেখানো অনুচিত! তাই বেশি লিখছি না। আমি উনাকে দুই টুকরো পেয়ারা দিলাম। খুশি হলেন। ব্যবস্থাপত্র নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন, আমি দেখছিলাম। দেখলাম দুই টুকরো পেয়ারাই তার প্রতিবন্ধী ছেলেকে দিয়ে দিলেন।
এই যে নিজের জন্য না রেখে দিয়ে দেওয়া; ছেলেকে, মেয়েকে, স্বামীকে এগিয়ে দেওয়া- এ শক্তি মেয়েরা কোথায় পায় বলা কঠিন। কিছু বুনো ফুল আছে না- যেগুলো কখনোই হাইলাইটেড হয় না, রোজ ডে পিংক ডে ভ্যালেন্টাইন্স ডে- কখনোই কভার পিকচারে আসে না। যেগুলো ফুটেই তার আশেপাশের জন্য। বুনো গাছের জন্য, পাখির জন্য, জঙলার ফাঁক দিয়ে এক চিলতে আকাশের জন্য। যাদের নিয়ে কোনো কবিতা, গল্প, উপন্যাস লেখা হয় নি। হঠাৎ কোনো পথহারা পথচারীর চোখে পড়ে বিস্ময় জাগায়। বাইরের পৃথিবীর নজরে আসে। এ গ্রাম্য সহজ সরল মায়েদের আমার তেমন মনে হয়।
তারা সবসময় বিহাইন্ড দ্যা সিন। এক বৃত্তকে বৃত্ত হিসেবে ধরে রাখাই তাদের কাজ। তাদের ভাবনায় সবসময় পরিবার আর সমাজ। যতটুকু তার পরিধি। গর্ভধারণ, বাচ্চা পালন, নাতি পালন কোনোকিছুই নিজের জন্য নয়। তাদের চোখ দিয়ে নয়, তাদের স্বচ্ছ কাঁচ মনে করে তার ভিতর দিয়ে পৃথিবী দেখলে পৃথিবীর সব রঙিন।
তিনি নিজে অসুস্থ কিন্তু প্রতিবন্ধী ছেলেটাও তার অসুখের বাইরে নয়। আমি জানি না তবে সম্ভবত পুরো প্লেট তাকে দিলেও তার গলা দিয়ে কিছু নামতো না। সব ওই ছেলেই পেতো। আর এখানেই সব রহস্য!