প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১১ জুন ২০২০, বৃহস্পতিবার
ডা. শুভদীপ চন্দ
ইনিও চলে গেলেন। হায় রে কোভিড উনিশ!
বাবা ও মেয়ের যে রসায়ন, তা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। এ দেখতে আপনাকে বিয়ের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ‘বিয়ে’ একটি বাজে অপচয় খাত ছাড়া কিছুই না। যেখানে সবকিছু মেকি, শুধু এ অংশটুকু ছাড়া।
একজন বাবা যেন ‘বাবা’ই হয় কোন মেয়ের জন্মের মধ্য দিয়ে। তার পিতৃদায় শেষ হয় না মেয়েকে বিয়ে দেয়ার আগ পর্যন্ত। মেয়ের বিয়ের পর ধর্মত তার পৃথিবীর কাজ শেষ। সে এখন বিদায় নিতে পারে। মেয়ে যেন এক ট্রফি। সে ট্রফি সারা জীবন বয়ে বেড়ায় কারো হাতে তুলে দেয়ার জন্য। এ বিয়ে নামক যুদ্ধে হারিয়ে ফেলার নাম ‘বিজয়’।
শাখ বাজছে, পেছন থেকে সবাই পুষ্পবৃষ্টি করছে, মাসী পিসিরা ডালা হাতে উলুধ্বনি দিচ্ছে, ঢাকঢোল আর বাঁশির শব্দে প্রাণ ওষ্ঠাগত; মেয়ে এগোচ্ছে ফুলে সাজানো গাড়ির দিকে। মায়েদের তবু সুবিধা আছে, কান্না করা যায়। বাবা নীরব নিস্তব্ধ। শেষবারের মতো পা ছুঁয়ে যখন মেয়ে জামাই গাড়িতে বসে তখন সব মেকআপ সব গাম্ভীর্য তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়ে। বছরের শুরুতে যেমন পানি বাষ্পীভূত হয়, ঘনীভূত হয়ে মেঘ হয়, সে মেঘ কেউ খেয়াল করে না, খেয়াল করে যখন কালবৈশাখী ঝড়ে সব কাঁপিয়ে বৃষ্টি নামে- এ সময় সেরকম!
একটি মেয়ে বাসায় আর কতটুকু জায়গা নিয়েই থাকে? তার এ চলে যাওয়া শেষ যাওয়া না। কোনো মেয়ে হঠাৎ একদিনেই বড়ও হয় না। কিন্তু বাবারা জানে- আর কোনো অহেতুক আবদার হবে না। জমবে না ঠোঁটের কোনে পাহাড় সমান অভিমান। ছোট ছোট ভুলে চোখ ফুলিয়ে কান্না করা হবে না। কেউ আর শত শত বায়না ধরবে না। কাল হয়তো সন্ধ্যাবাতি অন্যকেউ দিবে, চা টা অন্যকেউ করবে, চাদর অন্যকেউ এনে দিবে, ঔষধ খাবার কথা কেউ না কেউ মনে করিয়ে দিবে- কিন্তু তবুও সব বদলে যাবে। সবকিছু থাকবে আগের মতো, শুধু বাবার মেয়ে আর ‘ছোট্ট মেয়ে’ হয়ে থাকবে না। বড় হয়ে যাবে অনেক। পর হয়ে যাবে অনেক।
এটি শিমুল পলাশের সময়। টকটকে লাল ফুল ফুটে। এ লালের চেয়ে বেশি লাল বিবাহিত মেয়ের কপালের সিদুঁরের রঙ। অন্তত সদ্য সর্বস্বান্ত বাবার চোখে তা বটেই।
গাড়ি চলতে শুরু করেছিল। আমি দূরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমাকে ইশারায় ডেকে বিবাহিত কন্যাটি আর কারো কথা বলল না। শুধু বলল ‘দাদা আমি যাচ্ছি, বাপ্পির খেয়াল রাখিস..’।
হায়রে মেয়ে জীবন! এখানে কোন কষ্টই আরেক কষ্টের সাথে তুলনীয় না।