প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২২ জুন ২০২০, সোমবার
ডা. শুভদীপ চন্দ
ভালোবাসা হচ্ছে মোমবাতি আলোর মতো। যে মুকুট অনেক দূর থেকে দেখা যায় কিন্তু জ্বলে পুড়ে শেষ হতে থাকে শরীরের একাংশ।
উইলিয়াম বাটলার ইটস-কে ইংলিশ সাহিত্যের অন্যতম সেরা রোমান্টিক কবি ধরা হয়। তিনি মউড গন নামক এক ইংরেজ তরুণীর প্রেমে পড়েছিলেন। পরপর পাঁচবার বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হোন। মউডের অন্যত্র বিয়ে হলে তিনি সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এদিকে একের পর এক বিরহী প্রেমের কবিতা লিখতে থাকেন ইটস। পরবর্তীতে মউড একদিন বলেছিলেন- ‘বিশ্ববাসী একদিন আমাকে ধন্যবাদ দিবে। আমার প্রত্যাখ্যান ইংলিশ সাহিত্যে কিছু শ্রেষ্ঠ প্রেমের কবিতা দিয়েছে।’
ইটস রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি অনুবাদে ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন ‘দ্যা ট্র্যাজেডি অফ সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স ইজ দ্যা পারপেচুয়াল ভার্জিনিটি অফ দ্যা সউল’। অবশ্য সব ভিক্টোরিয়ানরাই ইউনিয়ন অফ বডির তুলনায় কমিউনিয়ন অফ সউলস নিয়েই বেশি লিখে গেছেন।
কোভিড উনিশ অসংখ্য ছবি বের করে আনছে। কোথাও করোনা সন্দেহে ছেড়ে আসার ছবি, কোথাও করোনা নিশ্চিত হয়ে জড়িয়ে ধরার ছবি। নারায়ণগঞ্জের সে দম্পতির ছবি সম্পূর্ণ অন্য কারনে আলোচিত হলেও গল্পটি কিন্তু ভালোবাসার। গল্পটি একক গল্পও নয়। শত শত গল্পের একটি। এই যে ডাক্তারদের একাট্টা হওয়া, একসাথে বাঁচতে চাওয়া- এ গল্পটাও ভালোবাসার। জীবনের প্রতি ভালোবাসা। এরকম গল্প অসংখ্য।
আমার বড়ভাইয়ের করোনা লাইক সিম্পটম। বললাম আইসোলেটেড থাকো। তার এক বছর বয়সী ছোট বাচ্চাটা দরজার সামনে এসে চিৎকার করতে থাকে ভেতরে ঢুকবে বলে। এখনো কথা শিখে নি, দুই এক শব্দে ভাব প্রকাশ। এদের কষ্ট আরো বেশি। তারা বলতে চায় অনেককিছু, বলতে পারে না। পৃথিবীর মতো নীরবে সব সয়ে যেতে থাকে। সবকিছু তাদের জন্য ইনজাস্টিস। হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলতে বলতে দরজার ওপাশের ব্যাকুলতা শুনি। সত্যি মনেহয় ভালোবাসাটা মোমবাতির আলোর মতো, অনেক দূর থেকে ফিল হয় কিন্তু যার থাকে তাকে পুড়ায়।
সুশান্ত সিং রাজপুতের কুকুর বিশাল বাড়িটা ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রিয় বন্ধুর খোঁজে। কখনো ছবির দিকে তাকিয়ে মন খারাপ করে বসে থাকে। কখনো মোবাইল স্ক্রিনের দিকে। না বলতে পারা প্রাণীটি হয়তো কখনোই জানবে না- পৃথিবীতে একমাত্র সেইই আছে যার সারাজীবন যাবে শুধু বন্ধুর ফেরার অপেক্ষায়!
প্রত্যেক জীবনেই একটা না একটা জীবন তো আছে যার জন্য বাঁচা চলে। মাস্ক পরে ঘোরা চলে। বাহির থেকে এসেই রোজ রোজ কাপড় ধুয়ে দেওয়া চলে। অল্প কিছুক্ষণ পরেই হাত স্যানিটাইজ করা চলে। অপ্রয়োজনে বাহির না হওয়া চলে। জীবনের এ পর্যায়ে এসে মনেহয়- যে জীবন অন্য অনেক জীবন দ্বারা পূর্ণ তার তুলনায় যে জীবন ফাঁকা একা নিজের জন্য বাঁচা সে জীবন অনেক বেশি ভারী..!
সে টেনে টেনে নিয়ে চলা অনেক বেশি কষ্টের। তা সে যে নামেই হোক!