প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৭ অক্টোবর ২০২০, বুধবার
ডা. শুভদীপ চন্দ
বাঙালি শিক্ষিত মেয়েগুলো কেমন অদ্ভুত ধরনের। তারা শীতল প্রকৃতির; সহজে কোনো কিছুর দিকে ঘাড় ফেরায় না, বিশ্বাসও করে না। কিন্তু একবার যদি কিছু মাথায় ঢুকে যায়, কিছুকে সত্য বলে ধরে নেয়- সে সত্য থেকে আর স্খলিত হয় না। ফেসবুক টাইম লাইনে এরকম আকষ্মিক বিপ্লব আর দেখি নি। আজ সকাল থেকে সবাই তার প্রোফাইল পিকচার কালো অন্ধকারে ঢেকে দিয়েছে। না এদেশে এরকম পৈশাচিক ঘটনা বিরল, না তারা খুব সমাজ সচেতন। কিন্তু ওই- পারমাণবিক বোমার চেন রিএকশনের মতো সব একসাথে রেগে গিয়েছে!
পারমাণবিক বোমা আবিস্কারের একদম সূচনা লগ্নে যখন মানুষ কেবল ধারণা করছে এরকম কিছু বানানো সম্ভব, তখন নোবেলজয়ী জার্মান বিজ্ঞানী ওয়াল্টার নেস্ট একবার মন্তব্য করেছিলেন- ‘পৃথিবীটা এক বড় বারুদ স্তুপের উপর বসানো আছে। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেশলাই কাঠিটার সন্ধান কেউ জানে না।’ আজ সকালে লগইন করার পর থেকে এ কথাই মনে হচ্ছে। আমরা ছেলেরা ঈশ্বরকে আরেকবার ধন্যবাদ দিতে পারি। আমাদের জীবনের দেশলাইকাঠি যে মেয়েদের কাছে সংরক্ষিত আছে সে তারা জানে না- এই রক্ষে!
বাইবেল মতে নারীর তৈরি পুরুষের পাঁজর থেকে। তখন সন্তান দানে পুরুষের সৃজনশীল শক্তিকেই শুধু মর্যাদা দেয়া হতো। তারপর ১৮২৭ সালে স্তন্যপায়ীদের ডিম আবিস্কারের পর এরকম ধারণা পাল্টে যায়। যদিও প্রাচীন খ্রিস্টিয় ও ইহুদি মতে ঈশ্বরের এক মাতৃ-প্রকৃতির দিক আছে। গ্রীক ভাষায় যাকে বলা হতো ‘সোফিয়া’। তবে আমাদের মেয়েদের প্রতি আমাদের সমাজের যে দৃষ্টিভঙ্গি এর পেছনে ধর্মগুলোও কম দায়ী নয়। যেকোনো নারী অধিকার বিষয়ক লেখায় এ কথা বলতেই হবে।
গত দুইদিন ঘুরে বেড়ালাম ঢাকা শহর। মহাখালী, কারোয়ান বাজার, কমলাপুর, মতিঝিল, নীলক্ষেত, ঢাকেশ্বরী মন্দির। সুস্পষ্টভাবে দেশে এখন দুই ধারার স্রোত পাশাপাশি অবস্থান করছে। একদিকে প্রচণ্ড সতর্ক- টাইট মাস্ক পরছে, একটু পরপর স্যানিটাইজার ব্যবহার করছে। বড় হ্যান্ডমেড বোতল নিয়ে সব শুদ্ধ করছে। অন্যদিকে ভ্রুক্ষেপহীন জনতা। যারা বিশ্বাস করে সবাইকে নিয়ে ঈশ্বরের আলাদা প্ল্যান আছে। তারা কোভিড নিয়ে বিন্দুমাত্র উদ্বিগ্ন নন। শ্রেণীবৈষম্য এ সমাজে অত্যাধিক। সব ইস্যুতেই।
কোভিড সাথে ডেঙ্গু কেস এখন বাড়ছে। নতুন স্টাডি বলছে ভর্তি রোগীর প্রতি পাঁচ জনে চার জনের নিউরোলজিকাল সিম্পটম ডেভেলাপ করেছে। বেশি করছে ৬৫ বছর ঊর্ধ্বদের। ডোনাল্ড ট্রাম্প পরপর তিনদিন সিম্পটম ফ্রি থেকে হোয়াইট হাউজে ফিরে গেছেন। এখন সারাবিশ্ব ভ্যাক্সিন বন্টন নিয়ে ভাবছে। কোভিডসহ জীবন ধারণ করতে হবে মেনে নিয়েছে সবাই। ভারতে নতুন কেস অনেক কমে এসেছে। সম্ভবত তারা তাদের চূড়া অতিক্রম করে ফেলেছে। WHO সহ সবাই চেষ্টা করছে সনাক্তকরণ দ্রুত ও সহজ করতে। বাংলাদেশ কী চাচ্ছে বলা মুশকিল। শুরুর সিরিয়াসনেস এখন নেই। অন্য আর পাঁচটি রোগের মতই করোনার মোকাবেলা চলছে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি দুই বাঙলার প্রধানতম অভিনেতা। বয়স পঁচাশি। এরচেয়ে বড় দুঃসংবাদ আর হয় না।
নোবেল পুরস্কার ঘোষিত হচ্ছে। আমাদের আগ্রহ নেই। আমরা জানি শান্তিতে দয়া পরবশ হয়ে না দিলে আমরা পাবো না। চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল দেয়া হয়েছে হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের ফিজিয়োলজি আবিস্কারে, পদার্থে কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে গবেষণায়। গত বছর গিয়েছিলো বিগব্যাং গবেষণায়। সব আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জার্মান বিশ্ববিদ্যালয় পেল। আমরা কোথায়?
১৯১৯ সাল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে। বিজ্ঞানী রাদারফোর্ডের ডাক পড়েছে যুদ্ধ মিটিংয়ে। না গেলে রীতিমতো যুদ্ধাপরাধ। সরকারি অর্ডার, পাত্তাই দিলেন না রাদারফোর্ড। পরের দিন কৈফিয়ত তলব করতে গেল সামরিক অফিসাররা। রাদারফোর্ড তখন ল্যাবরেটরিতে। সেদিন তিনি যা বলেছিলেন তা নাকি এখনও ঝুলানো আছে কেমব্রিজ ল্যাবরেটরিতে। ‘টক সফটলি প্লিজ’!